সকল মেনু

কপারের উপর কর আরোপ; ঝুঁকিতে ইলেকট্রনিক্স খাতের বিনিয়োগ

indexনিজস্ব প্রতিবেদক,হটনিউজ২৪বিডি.কম: জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কপার টিউব, কপার বার ও কপার প্লেটের আমদানির উপর রেগুলেটরি ডিউটি আরোপ করায় মারাত্মক ক্ষতির সম্মূখীন হতে যাচ্ছে দেশের উদীয়মান কেবল, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স শিল্পখাত। সংশ্লিষ্টরা একে শিল্পবিরোধী পদক্ষেপ আখ্যা দিয়ে বলছেন, এর ফলে মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের উদীয়মান শিল্পখাত।
অভিযোগ রয়েছে, এনবিআরকে ভুল বুঝিয়ে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে দেশীয় শিল্পবিরোধী একটি চক্র অতিরিক্ত শুল্ক আরোপে প্ররোচিত করেছে। বিষয়টি যথাযথভাবে খতিয়ে না দেখে এবং খাত ষংশ্রিষ্টদের সঙ্গে কথা না বলে এনবিআর রেগুলেটরি ডিউটি আরোপ করে। রাজস্ব বোর্ড গত ৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে কাঁচামাল কপার টিউব, বার ও প্লেটের উপর যথাক্রমে ১৫, ১৫ ও ১০ শতাংশ নিয়ন্ত্রনযোগ্য কর আরোপ করেছে। আগে এসব কাঁচামাল আমদানিতে সবমিলিয়ে যথাক্রমে ৩১.০৭ শতাংশ, ৩৭.০৭ এবং ৩৭.০৭ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করতে হতো। এখন এর সঙ্গে নিয়ন্ত্রণমূলখ কর বসলো। এর ফলে আমদানি বিকল্প মানসম্পন্ন ওয়্যার, কেবল, রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশনার, টেলিভিশন, মোটর, ফ্যান, সুইচ, সকেটসহ ইলেকট্রিক্যাল পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
শিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা না করেই এনবিআর এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ায় তারা বিস্মিত। তাদের মতে, রাজস্ব বোর্ডের এমন পদক্ষেপ মারাত্বক ঝুঁকিতে ফেলবে এই খাতে দেশীয় উদ্যোক্তাদের বিশাল বিনিয়োগকে। এছাড়াও, দেশের সম্ভাবনাময় এই শিল্পে বিদেশী বিনিয়োগও নিরুৎসাহিত হবে। তারা মনে করছেন, প্রযুক্তি নির্ভর শিল্পায়নে দেশের বর্তমান অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে একটা অশুভ চক্র গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একটি প্রতিষ্ঠান আগামি এপ্রিল নাগাদ দেশে কপার টিউব, বার এবং প্লেট উৎপাদনের জন্য মেশিনারিজ সেট আপ শুরু করতে যাচ্ছে। উৎপাদনে যেতে তাদের এবছর লেগে যাবে। তারপরও সেখানে মান সম্পন্ন কাঁচামাল তৈরি সম্ভব কি না তা নিয়ে ব্যাপক সংশয় রয়েছে। অথব সেই প্রতিষ্ঠানটিকে সুরক্ষা দিতে পুরো ইলেকট্রনিক্স খাতকে আগাম জিম্মি করা হয়েছে। বর্তমানে ভারি শিল্পে ব্যবহারের জন্য এ ধরনের কপার কাঁচামাল তৈরির কোনো কারখানা দেশে নেই।
এদিকে কপারযুক্ত ফিনিশড পণ্য আমদানিতে বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হয়নি। কিন্তু কাঁচামাল হিসেবে কপার যখন আনলে যদি বাড়তি শুল্ক দিতে হয় তা অসম প্রতিযোগিতা এবং শিল্পায়নবিরোধী বলেই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে বিআরবি কেবলস এর চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, এনবিআর রেগুলেটরি ডিউটি আরোপ করলে অবশ্যই পণ্যমূল্য বেড়ে যাবে।
মিনিস্টার হাইটেক পার্ক লিমিটেড এর চেয়ারম্যান এমএ রাজ্জাক খান বলেন, হঠাৎ করে কপারের উপর নিয়ন্ত্রমূলক কর আরোপ করা অযৌক্তিক। এর ফলে মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তারা। কারো সঙ্গে আলোচনা না করে এনবিআর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে করে পণ্য মূল্য বেড়ে যাবে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত দেশের উদীয়মান শিল্পখাতকে নিরুৎসাহিত করবে। তিনি বলেন, দেশে এ ধরনের মান সম্পন্ন কপার পণ্য তৈরি হয় না। সুতরাং কীভাবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত হলো তা বোধগম্য নয়।
এ প্রসঙ্গে ওয়ালটনের অপারেটিভ ডিরেক্টর উদয় হাকিম বলেন, আশা করি সরকার তথা এনবিআর বিষয়টি গভীরভাবে বিবেচনায় নেবে। কারণ এটা দেশীয় শিল্পবিরোধী একটি পদক্ষেপ। এর ফলে দেশে উৎপাদিত পণ্যের মূল্য বেড়ে যাবে। আমদানি করা পণ্যের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতা শুরু হবে। দেশীয় উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। নতুন শিল্প স্থাপন নিরুৎসাহিত হবে। অন্যদিকে বাজারে টিকে থাকার জন্য বিকল্প কাঁচামাল ব্যবহার করলে বাংলাদেশে তৈরি শিল্পপণ্যের নেতিবাচক ইমেজ তৈরি হবে। এজন্য এসআরও টি প্রত্যাহার সবার কাম্য।
জানা গেছে- ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স শিল্পে বিপুল পরিমান কপার ব্যবহার করতে হয়। দেশে কোনো কপারের খনি নেই। নেই উল্লেখযোগ্য কোনো কপার প্রসেসিং কারখানাও। ফলে পুরোটাই আমদানিনির্ভর। দেশের বিভিন্ন শিল্পে এই কপার ব্যবহৃত হয় মৌলিক কাঁচামাল হিসেবেই। এখন কপারের উপর রেগুলেটরি ডিউটি আরোপ করায় পণ্যমূল্য বেড়ে যাবে। বিশেষ করে রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশনার, টেলিভিশন, কেবলস, স্যুইস-ছকেটসহ ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স পণ্যে এর প্রভাব পড়বে। একসময় এ শিল্প পুরোটাই ছিল আমদানি নির্ভর। বর্তমানে অনেক উদ্যোক্তা দেশেই এসব পণ্য তৈরি করছেন। এখাতকে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ন বলা চলে। এ শিল্পের অনেক পণ্য রপ্তানিও হচ্ছে। এ অবস্থায় কাঁচামালের উপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করায় শিল্পটি পিছিয়ে পড়বে।
উল্লেখ্য, কিছু কিছু ক্ষেত্রে কপারে পরিবর্তে এমএস স্টিল এবং এ্যালুমিনিয়াম টিউব ব্যবহার করা যায়। কিন্তু তাতে পণ্যের মান ও স্থায়িত্ব কমে যাবে। এমএস বা এ্যালুমিনিয়ামে অপেক্ষাকৃত কম তাপ পরিবাহি। ফলে এমএস বা এ্যালুমিনিয়াম ব্যবহারে বিদ্যুত খরচ অন্তত ৩০ শতাংশ বেড়ে যাবে। অন্যদিকে পণ্যের স্থায়িত্ব অনেকাংশে কমে আসবে। দ্রুত পণ্য নষ্ট হয়ে যাবে। রপ্তানি বাজার হারাবে। উন্নত দেশগুলোতে ফ্রিজ, এয়ারকন্ডিশনারসহ ইলেকট্রিক্যাল পণ্যে এমএস বা এ্যালুমিনিয়ামের ব্যবহার নেই বললেই চলে। কপার একটি লেটেস্ট স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে বিবেচিত হয়।
বিগত কয়েক বছরে ওয়ালটন, যমুনা, মাই ওয়ান, বিআরবি ক্যাবল, প্যারাডাইস ক্যাবলসহ অনেক প্রতিষ্ঠান প্রচুর পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে দেশের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স খাতে। কপারের মতো উন্নত কাঁচামাল দিয়ে আন্তর্জাতিক মানের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য প্রস্তুত করে বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে। এই খাতটিকে বর্তমানের দেশের ব্যাপক সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে বিবেচনা করছে দেশীয় ও বিদেশী বিনিয়োগকারীরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামি অর্থবছরে চীনের সমান প্রবৃদ্ধি হবে বাংলাদেশের। কিন্তু ব্যাপক সম্ভাবনাময় এ শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়লে তা কর্মসংস্থান এবং শিল্প বিনিয়োগে মারাত্বক ক্ষতির কারণ হবে। এদিকে প্রচুর অলস টাকা পরে আছে ব্যাংকে। শিল্পে বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে। কর্মসংস্থান হচ্ছে না আশানুরূপ। এ অবস্থায় দেশীয় শিল্পবিরোধী এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানান তারা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top