সকল মেনু

চাঁদপুরের ১১২টি পরিবার ভূমিদস্যুদের অত্যাচারে ঘরছাড়া

শাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম, চাঁদপুর: স্থানীয় ভূমিদস্যুদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে চাঁদপুর সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের মনোহরখাদী আশ্রয়ন প্রকল্পের বরাদ্দকৃত ঘরে তালা মেরে আতঙ্কে বাইরে থাকছে ছিন্নমূল বেশ কিছু পরিবার। ওই আশ্রয়ন প্রকল্পে ১শ’ ৬০টি পরিবারের মধ্যে বর্তমানে ৪৮টি পরিবার জীবনবাজি রেখে টিকে আছে। ভূমি দস্যুদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। যদিও মাঝে মধ্যে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন খান শামীম আশ্রয়ন প্রকল্পের পরিবারদের খোঁজ খবর নিচ্ছেন এবং বিষয়টি প্রশাসনকে অবহিত করেছেন বলে আশ্রয়ন প্রকল্পে থাকা কয়েকজন জানান।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল আশ্রয়ন প্রকল্পের পাশে মেঘনার চরের সব জায়গা দখল করে সেখানে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করছে। যার কারণে সেখানে আশ্রয়ন প্রকল্পের ছিন্নমূল লোকদের কোনো কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। এছাড়া ওই প্রভাবশালী মহলের লোকদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে অনেকেই এ আশ্রয়ন প্রকল্প থেকে স্বেচ্ছায় নিজ ঘরে তালা লাগিয়ে অন্যত্র চলে গেছে। তারপরও তাদের উপরও চলছে দখলদারদের জুলুম-নির্যাতন। রাতের বেলা তাদের ঘরের রান্না করার পাতিলসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরিবেশ পরিস্থিতি এমনভাবে সৃষ্টি করা হচ্ছে যাতে আশ্রয়ন প্রকল্প ছেড়ে অধিবাসীরা চলে যায়।
এদিকে বিশাল চর এলাকা জুড়ে আগুন জ্বালিয়ে জঙ্গল পরিষ্কার করছে কয়েকজন লোক। চরের জঙ্গল পোড়ানো হচ্ছে কেন জানতে চাইলে তারা জানান, স্থানীয় বউ বাজারের আলমগীর, মোক্তার হোসেন নামে দু’জন যশোর থেকে ক’ব্যক্তিকে এনেছে চরের জঙ্গল পরিষ্কার করার জন্য। প্রতি ১০০ শতক জায়গা পরিষ্কার করলে ১৫ হাজার টাকা করে পাবে তারা। এখানে প্রায় ৮০ একর জায়গা পরিষ্কার করার চুক্তি হয়েছে তাদের সাথে। এই জায়গা পরিষ্কার করে এখানে আলু চাষ করা হবে।
এলাকাবাসী ও আশ্রয়ন প্রকল্পের লোকজন জানায়, এক সময় এসব চরের আশেপাশে তারা চাষবাস করে জীবন নির্বাহ করতো। কিন্তু এখন হঠাৎ করে চরাঞ্চলের সকল জায়গা প্রভাবশালীরা গায়ের জোরে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গেছে। সরকারিভাবে লীজ প্রদান কিংবা কোনো অনুমোদন নেই বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ওই প্রভাবশালী মহল এখন আশ্রয়ন প্রকল্পের লোকদের আশেপাশের জমিতে কোনো চাষাবাদ করতে দিচ্ছে না। এমনকি তাদের গরু-ছাগলও চরাতে দিচ্ছে না। এই অবস্থায় আশ্রয়ন প্রকল্পের ছিন্নমূল মানুষগুলো কোনো কিছু না করতে পেরে অভাব অনটনে আশ্রয়ন প্রকল্প ছেড়ে এদিক সেদিক চলে গেছে। মনোহরখাদী আশ্রয়ন প্রকল্পের আশেপাশে ভূমিদস্যুরা সব জায়গা দখল করে নিয়েছে বলেই তারা এসব সুযোগ থেকে বঞ্চিত বলে তারা অভিযোগ করেন।
আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাসকারী খলিল বেপারী বলেন, সরকার আমাদেরকে বাসস্থান দিয়েছে। কিন্তু এর বাইরে কোনো জায়গা নেই যে কোনো রকম চাষাবাদ কইরা ছেলেমেয়ে নিয়া চইলা ফিরা খামু। চরে কোনো গরু-ছাগল পালতে পারি না, চাষাবাদ করণের কোনো জায়গা নাই। যারা এই চরের বিশাল জায়গা দখল করে চাষাবাদ করছে তারা বলছে এখানে নাকি আমাদের কোনো জায়গা নাই।
আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাসকারী কলাবতী বর্মন ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, সরকারের দেয়া আশ্রয়ন প্রকল্পে ঘর পেয়ে অনেক খুশি হয়ে এখানে আইছি। আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা সাজেদা বেগম আরো জানান, ১শ’ ৬০ পরিবারের মধ্যে আমরা আছি এখন মাত্র ৪৮ পরিবার । বাকি পরিবারগুলো গত ৩ বছরের মধ্যেই চইলা গেছে। সব ঘরে তালা লাগাইয়া রাখছে। এইখানে কোনো চাষাবাদ করতে পারে না, গরু ছাগল পালতে পারে না। কোনো রুজি রোজগার নাই দেইখ্যা বাকি পরিবারগুলি এখানে আসে না। যারা আছে হেরাও আর বছর খানেক থাকতে পারে কিনা সন্দেহ। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এইহানকার কয়েকজন নাকি চরের সব জায়গা সরকার থেকে লীজ আনছে। আবার কয় এই জায়গা হেগ বাপদাদার। এই কতা কইয়া চরের সব গাছ গাছরা আগুন দিয়া পোড়াইয়া দিছে।
চরের জায়গা পরিষ্কার করে চর দখল করে নেয়ার হোতাদের একজন আলমগীর বলেন, “জন্ম থেকে এ চরটি রোস্তম বেপারীর চর হিসেবে জেনে আসছি। সেই হিসেবে রোস্তম বেপারীর ছেলে লাভলু বেপারীর সাথে আলাপ করেই আমরা কয়েকজন চরটিকে পরিষ্কার করে আলু চাষাবাদের উদ্যোগ নেই। বিষয়টি স্থানীয় এমপি ডাঃ দীপু মনি জেনে যখন নিষেধ করেছেন, এরপর থেকেই আমরা আর সেখানে কিছুই করছি না। বর্তমানে আমাদের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।” অথচ তার কথার বিন্দুমাত্রও সত্যতা দেখা যায় নি। জোরেশোরে দখল কার্যক্রম চলছে।

বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন খান শামীম জানান, আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাসকারী অসহায় মানুষের সাথে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহলের জুলুম-নির্যাতনের বিষয়টি আমি শুনেছি। তারা চরাঞ্চলের বিশাল জায়গা দখল করে নিয়েছে এবং আশ্রয়ন প্রকল্পের মানুষজনদের সেখানে কোনো প্রকার চাষাবাদ করতে দিচ্ছে না। গবাদিপশুও পালন করতে দিচ্ছে না। তাদের ওপর অনেক অত্যাচার-জুলুম চালাচ্ছে। এর ফলে আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাসকারী অর্ধেকের বেশি পরিবার ঘরে তালা দিয়ে নদীর এপারে এসে বাসা ভাড়া করে থাকছে। স্থানীয় লোকজন এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় তাদেরকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে ভূমিদস্যুরা। এ বিষয়ে স্থানীয় সাংসদ ডাঃ দীপু মনি এমপি মহোদয়ের সাথে আলাপ হয়েছে আমার। তিনি আমাকে এ বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে দখলদারদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে আমার কথা হয়েছে। তিনিও আমাকে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top