দলীয় ৪ রানের মাথায় পরপর ২ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর ইনিংস হারের শঙ্কা ভালোভাবেই জেঁকে বসে বাংলাদেশ শিবিরে। তবে দিন শেষে সেই আশঙ্কা কিছুটা কমেছে। ৩য় উইকেটে মাহমুদুল হাসান জয় আর নাজমুল হোসেন শান্তর পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের জুটিতে প্রাথমিক বিপর্যয় কাটায় বাংলাদেশ। পরে শান্ত ফিরে গেলেও আর কোনো উইকেট না হারিয়ে ২য় দিন শেষ করে টিম টাইগার্স।
প্রথম ইনিংসে নিজেদের ব্যাটিং ব্যর্থতার পর প্রোটিয়াদের বড় লিডে চাপা পড়ে বাংলাদেশ। ইনিংস হার এড়াতে অন্তত ২০২ রান করতে হবে। এ লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় দিন শেষে ৩ উইকেট হারিয়ে ১০১ রান করেছে স্বাগতিকরা। সফরকারীদের চেয়ে এখনো পিছিয়ে আছে ১০১ রানে। আলোকস্বল্পতার কারণে কিছু ওভার বাকি রেখেই দিনের খেলা শেষ হয়।
৮০ বলে ৩৮ রানে অপরাজিত আছেন ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়। অন্য প্রান্তে ২৬ বলে ৩১ রান করে টিকে আছেন এই টেস্টে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ৬ হাজার রানের ক্লাবে নাম লেখানো মুশফিকুর রহিম। এ দুজনের ব্যাটেই অনেকটা নির্ভর করছে এই টেস্টে বাংলাদেশের ভাগ্য।
সাকিব আল হাসান ইস্যুতে পক্ষে-বিপক্ষে বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা মিরপুর স্টেডিয়াম। ম্যাচ ডে’তে স্টেডিয়ামের বাইরে সমর্থকদের আনাগোনা, হকারদের হাঁকডাকের পরিচিতটা দৃশ্যটা যে কারণে এবার তেমন একটা নেই। গ্যালারিতেও দর্শক উপস্থিতি আশঙ্কাজনকভাবে কম। যারা মাঠে এসেছেন, তারাও স্বাগতিক দলের ব্যর্থতায় তেমন উদযাপনের সুযোগ পাচ্ছেন না।
সোমবার মিরপুরে শুরু হয় দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্ট। টস জিতে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে মাত্র ১০৬ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। জবাবে কাইল ভেরেইনের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে প্রথম ইনিংসে ৩০৮ রান তোলে প্রোটিয়ারা। তাদের লিড দাঁড়ায় ২০২। প্রোটিয়া উইকেটকিপার ব্যাটারের ১৪৪ বলে ১১৪ রানের ইনিংসটাই ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দিয়েছে অনেকটা।
মিরপুরের কন্ডিশন বিবেচনায় ২০২ রানের লিডটা পাহাড়সমই। এই টেস্ট বাঁচাতে দ্বিতীয় ইনিংসে ঘুরে দাঁড়ানোর বিকল্প ছিল না বাংলাদেশের জন্য। যদিও শুরুটা হয় চিরাচরিত রূপেই, ৪ রানের মাথায় নেই দুই উইকেট।
ইনিংসের তৃতীয় ওভারে বল হাতে নিয়ে প্রথম বলেই সাদমান ইসলামকে ফেরান কাগিসো রাবাদা। কিছুটা বাড়তি বাউন্সের বলে ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন টাইগার ওপেনার। ব্যাট-প্যাড হয়ে বল চলে যায় শর্ট লেগে দাঁড়ানো টনি ডি জর্জির হাতে। ৭ বল খরচায় ১ রান করেন সাদমান।
একই ওভারে মুমিনুল হকের উইকেটটাও নিয়ে বাংলাদেশের বিপদ আরও বাড়ান রাবাদা। জায়গায় দাঁড়িয়ে ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন মুমিনুল। কিন্তু ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় তৃতীয় স্লিপে দাঁড়ানো উইয়ান মুল্ডারের হাতে। ৩ বল খেলে রানের খাতা খুলতেই পারলেন না তিনি। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে মুমিনুল এমনিতেই বেশ নড়বড়ে অবস্থায় থাকেন। পরিসংখ্যান বলছে তাদের বিপক্ষে সর্বশেষ ৯ ইনিংসে মাত্র ৩২ রান করতে পেরেছেন মুমিনুল!
মাত্র ৪ রানের মাথায় দুই ব্যাটারকে হারানোর পর মাহমুদুল হাসান জয়ের সঙ্গে জুটি বেঁধে দলের হাল ধরেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। দুজনের জুটি থেকে আসে ৯৮ বলে ৫৫ রান। এখন পর্যন্ত চলমান টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি এটি। যদিও ইনিংস বড় করতে পারেননি শান্ত।
কেশভ মহারাজের করা অফ স্টাম্পের বাইরের বলটা ঠিকঠাক খেলতে পারেননি শান্ত। ব্যাট ফাঁকি দিয়ে বল গিয়ে আঘাত হানে প্যাডে। আম্পায়ারের জন্য কাজটা কঠিন ছিল না। এলবিডব্লিউ হয়ে বিদায় নেন টাইগার কাপ্তান। তার ব্যাট থেকে আসে ২৩ রান।
শান্তর বিদায়ের পর অবশ্য আর কোনো বিপদ হতে দেয়নি জয়-মুশফিক জুটি। এ জুটির রান এখন পর্যন্ত ৫০ বলে ৪২। ফলোঅন এড়াতে বড় জুটি গড়ার বিকল্প নেই বাংলাদেশের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ১০৬
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস : ৩০৮
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস : ২৭.১ ওভারে ১০১/৩
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।