লেবানন কোন কোন শর্ত মেনে নিলে দেশটিতে সামরিক অভিযান বন্ধ করা হবে, সেসব যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে ইসরায়েল। ওয়াশিংটনকে জেরুজালেম জানিয়েছে, লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে অবশ্যই ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তবর্তী দক্ষিণ লেবাননে নিজেদের তৎপরতা এবং সামরিক স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করতে হবে।
শর্তে আরও বলা হয়েছে, বর্তমানে দক্ষিণ লেবাননের বিভিন্ন গ্রামে হিজবুল্লাহর সেনা ইউনিট রয়েছে, সেই ইউনিটগুলো বাতিল করতে হবে এবং যেসব সামরিক স্থাপনা রয়েছ- সেসব ধ্বংস করতে হবে।
এবং এই দুই কাজই করতে কবে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) উপস্থিতিতে। সেই সঙ্গে ইসরায়েল-লেবানন সীমান্ত অঞ্চলে হিজবুল্লাহ আবারও সংগঠিত হচ্ছে কি না- সেটা নজরদারির মধ্যে রাখতে লেবাননের আকাশসীমায় নিজেদের যুদ্ধবিমান ও ড্রোন চলাচলের স্বাধীনতাও চেয়েছে ইসরায়েল।
সোমবার এক প্রতিবেদনে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এক্সিওস জানিয়েছে, ইতোমধ্যে এসব শর্ত বা দাবি নথি আকারে হোয়াইট হাইসে পাঠিয়ে দিয়েছে জেরুজালেম। বাইডেন প্রশাসনের এক কর্মকর্তা এক্সিওসকে জানিয়েছেন, ইসরায়েল এসব শর্ত জানানোর পর থেকে লেবাননে শীঘ্রই যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে আর আশাবাদী নয় ওয়াশিংটন। কারণ যেসব শর্ত ইসরায়েল দিয়েছে, সেসব লেবানন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মেনে নেবে- এমন সম্ভাবনা খুব কম।
বিষয়টি নিয়ে আরও বিস্তারিত জানতে হোয়াইট হাউস, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ওয়াশিংটনে লেবানন ও ইসরায়েলি দূতাবাসে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স, কিন্তু এসব কার্যালয়ের কোনো মুখপাত্র এ ইস্যুতে মুখ খুলতে রাজি হননি।
প্রসঙ্গত, ইরানের সমর্থন ও মদদপুষ্ট হিজবুল্লাহ বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী। লেবাননভিত্তিক এই গোষ্ঠীটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৫ সালে। প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই এই গোষ্ঠীটি ইসরায়েল রাষ্ট্রকে ধ্বংসের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তের অপর পাশেই লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল। এ অঞ্চলটি হিজবুল্লাহর প্রধান ঘাঁটি এবং গোষ্ঠীটির অধিকাংশ সামরিক স্থাপনার অবস্থান এখানে। গত ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরুর পর হামাসের প্রতি সংহতি জানিয়ে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া শুরু করে হিজবুল্লাহ। পাল্টা জবাব দেওয়া শুরু করে ইসরায়েলও। গত এক বছরে উভয় পক্ষের সংঘর্ষে লেবাননে প্রাণ হারিয়েছেন ২ হাজারেরও বেশি মানুষ। এই নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা ৫ শতাধিক। তবে আইডিএফের দাবি, এই নিহতদের মধ্যে অন্তত ৯৪০ জন হিজবুল্লাহ কমান্ডার ও যোদ্ধা রয়েছে।
গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে লেবাননে অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের বিমানবাহিনী। প্রায় ১০ দিনের সেই অভিযানে নিহত হয়েছেন হিজবুল্লাহর প্রধান নেতা ও সেক্রেটারি জেনারেল হাসান নাসরুল্লাহসহ বেশ কয়েক জন শীর্ষ কমান্ডার। এতে গোষ্ঠীটির চেইন অব কমান্ডের সর্বোচ্চ স্তর প্রায় ভেঙে পড়েছে।
বিমান অভিযান পর্বের পর গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে দক্ষিণ লেবাননে অভিযান শুরু করেছে আইডিএফের স্থল বাহিনী। এর আগে এক বিজ্ঞপ্তিতে আইডিএফ বলেছিল, ইসরায়েলের সীমান্তবর্তী দক্ষিণ লেবাননের গ্রামগুলোতে সীমিত ও স্থানীয় পর্যায়ে অভিযান চালানো হবে। তবে কতদিন এ অভিযান চলবে, সে সম্পর্কিত কোনো তথ্য বা ইঙ্গিত এখনও দেয়নি আইডিএফ।
ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে এরই মধ্যে লেবাননে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষ।
শনিবারের বিবৃতিতে আইডিএফ জানিয়েছিল, দক্ষিণ লেবাননে গত প্রায় এক মাসের অভিযানে হিজবুল্লাহর ১২০টিরও বেশি সামরিক স্থাপনা, বেশ কিছু সুড়ঙ্গ এবং ২০টি অস্ত্রাগার ধ্বংস করেছে ইসরায়েলের বিমান বাহিনী।
উল্লেখ্য, ইসরায়েলের সবচেয়ে পুরনো ও নির্ভরযোগ্য মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বের একমাত্র এই ইহুদি রাষ্ট্রটিকে সামরিক, রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও গোয়েন্দা সহায়তা দিয়ে আসছে ওয়াশিংটন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।