সকল মেনু

ইয়াংগুনে বাহাদুর শাহ’র সমাধিতে পর্যটকদের ভিড়

unnamed শাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম, ইয়াংগুন, মিয়ানমার থেকে ফিরে: মিয়ানমারের ইয়াংগুনে অবস্থিত ভারতের শেষ মোঘল স¤্রাট মির্জা আবু জাফর সিরাজউদ্দিন মোহাম্মদ বাহাদুর শাহ জাফরের সমাধি ক্ষেত্রটি পর্যটকদের জন্য দর্শণীয় স্থানে পরিনত হয়েছে। ইয়াংগুন শহরের ৬ জিওয়াকা সড়কের শিউডিগন প্যাগোডার কাছে ছায়া সুনিবিড় স্থানে এই সমাধি ক্ষেত্র অবস্থিত। এখানে বাহাদুর শাহ ছাড়াও তার দুই ছেলে এবং তৃতীয় স্ত্রী জিনাত মহলেরও সমাধি রয়েছে।
সম্রাট দ্বিতীয় আকবর ও রাজপুত লাল বাই’র ছেলে বাহাদুর শাহ ১৭৭৫ সালের ২৪ অক্টোবর জন্মগ্রহন করেন দিল্লীতে। ১৮৩৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি দিল্লীর সিংহাসনে আরোহন করেন ১৭ তম এবং শেষ মুঘল     সম্রাট হিসেবে। সুপন্ডিত, সুফী সাধক, ফারসি কবি ও গজল রচয়িতা বাহাদুর শাহ’র রাজনৈতিক কোন উচ্চাভিলাস না থাকলেও ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে ১৮৫৭ সালে যে বিল্পব গড়ে উঠে তাতে তিনি সমর্থন দেন। এর ফলে তাকে ইংরেজ শাসক উইলিয়াম হডসনের নেতৃত্বে ১৮৫৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ক্ষমতাচ্যুত করে আতœসমর্পণে বাধ্য করা হয়। এরপর ১৮৫৮ সালে তাকে তৎকালীন রেঙ্গুণে এক স্ত্রী, দুই ছেলে ও কিছু কর্মচারীসহ নির্বাসন দেয়া হয়। একই সময়ে রেঙ্গুণের তৎকালীন শাসককে ভারতে নির্বাসন দেয় ইংরেজ রাজ। নির্বাসনে থাকাবস্থায় পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত বাহাদুর শাহ ১৮৬২ সালের ৭ নভেম্বর রোজ শুক্রবার ভোর ৫ টায় মারা যান। ওইদিনই বিকেল ৪ টার দিকে তাকে বর্তমান সমাধিস্থলে সমাহিত করা হয়। দীর্ঘদিন অবহেলায় থাকার পর ১৯৯১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তার সমাধিস্থলকে অবকাঠামোগত রূপ দেয়া শুরু করা হয়। কাজ শেষে ১৯৯৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর এটির উদ্বোধন করা হয়।
দুই তলা বিশিষ্ট ওই সমাধিসৌধের নিচতলায় ঝাড় বাতির নিচে বাহাদুর শাহ’র সমাধি। আর দ্বিতীয় তলায় তার এক স্ত্রী ও দুই ছেলের সমাধি। দূর দূরান্ত থেকে পর্যটকরা এই সমাধিস্থলে এসে সুবে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবের কবর দর্শণ করেন এবং দেয়ালে টানানো তার বিভিন্ন ছবি ও পোট্রেট অবলোকন করে মুঘলামলের স্মৃতি হাতরান। কেউ কেউ বুকে হাত দিয়ে সুর করে বলেন, ‘ইয়া জালাল, ইয়া জাফর, সালাম আলাইকা।’
বাহাদুর শাহ নিজের এপিটাফ লিখেছিলেন,‘ নিজের জমিতে দু’গজ জায়গাও মিললোনা।  ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধি আশির দশকে মিয়ানমার সফরে যেয়ে তার সমাধি ফলকে লিখে এসেছিলেন ‘ভারতের মাটি আপনি পাননি কিন্তু ভারতের স্বাধীনতার স্বপ্ন শুরু হয়েছিল আপনার সমাধি থেকেই’। তাঁর সমাধির সামনে লেখা রয়েছে তারই রচিত কয়েকটি চরণ ঃ
‘‘দীর্ঘ জীবন চেয়ে পেয়েছি চারদিন সময়, দু’দিন কেটে গেল আকাঙ্খায় আর দু’দিন অপেক্ষায়/ জীবন আজ অতিক্রান্ত, সন্ধ্যা নেমেছে জীবনে, আমাকে ঘুমাতে হবে, সমাধির দিকে প্রসারিত আমার পা।’’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top