সকল মেনু

পিনাক-৬ দুর্ঘটনার ৩০ ঘণ্টা পরও শনাক্ত হয়নি

 সোমা ইসলাম, মাওয়া থেকে : কাওড়াকান্দি থেকে মাওয়ায় যাওয়ার পথে আড়াই শতাধিক যাত্রী নিয়ে লঞ্চডুবির ঘটনায় এ পর্যন্ত চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রচণ্ড ঢেউ আর তীব্র স্রোতের মধ্যে ডুবে যাওয়ার ৩০ ঘণ্টা পরও লঞ্চ পিনাক-৬-এর অবস্থান শনাক্ত হয়নি। নিখোঁজ যাত্রীদের স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে পদ্মাতীর। লঞ্চ ও এর হতভাগ্য যাত্রীদের উদ্ধারের আশায় পদ্মাপাড়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন স্বজনেরা। যতই সময় যাচ্ছে স্বজনদের ভিড় তত বাড়ছে। উদ্ধারপ্রাপ্তদের মধ্যে আহত অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সোমবার বেলা ১১টায় লঞ্চটি ডুবে যায়। লঞ্চডুবির খবর পেয়েই লঞ্চে থাকা যাত্রীদের স্বজনেরা আসতে থাকেন পদ্মাপাড়ে। আপনজনের খোঁজে পাড়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েন। কেউ আবার নদীতে সাঁতার দিয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়ারও চেষ্টা করেন। পদ্মাপাড়ে অনেকেই স্বজনকে পাগল হয়ে খুঁজে ফিরছেন। কিন্তু কে কাকে সান্ত্বনা দেবে! আহতদের আর্তনাদ আর স্বজনদের আহাজারিতে পদ্মাপাড়ের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্ধারকাজে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর নির্দেশ দিলেও তীব্র স্রোত ও ঢেউয়ের কারণে অভিযান ব্যাহত হয় বলে উদ্ধারকর্মীরা জানান। যেখানে লঞ্চটি ডুবেছে, সেখানে পানির গভীরতা অনেক বেশি বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
এদিকে, উদ্ধারকাজে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন পদ্মাপাড়ের স্বজনেরা।

সোমবার রাত ৩টার দিকে পদ্মাপারে উপস্থিত স্বজনরা উদ্ধার তৎপরতা জোরদার এবং নিহতদের লাশ ফেরতের দাবিতে মাওয়া ফেরিঘাটে ঢোকার মুখের সড়ক অবরোধ করেন। এতে ঢাকা থেকে যাওয়া যাত্রীবাহী কোচগুলো আটকা পড়ে। অবরোধকারীরা উদ্ধার তৎপরতা জোরদার, নিহতদের লাশ তাদের কাছে ফেরত দেওয়া এবং নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগ দাবি করেন।

এ ছাড়া, সকাল ৮টার দিকে মাওয়া ঘাটে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের ইটপাটকেল ছুড়ে মারেন স্বজনরা। উত্তেজিত স্বজনরা বাংলাভিশনের এক সাংবাদিককে কিল, ঘুষি মারেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এ সময় তারা কয়েকটি গাড়িতে ভাঙচুরের চেষ্টা চালান। তার মধ্যে ৭১ টেলিভিশনের একটি মাইক্রোবাসও ছিল।

ডুবে যাওয়া এই লঞ্চে ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার সাতরশি গ্রামের একই পরিবারের সাতজন ছিলেন, যাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

এরা হলো মো. রুবেল, তার স্ত্রী শিমু, বড় মেয়ে ফাইজা (৭), ছোট মেয়ে ফাতেহা (৩), সোবাহান মাতুব্বর (৩৫), তার স্ত্রী জিয়াসমিন আক্তার (২৫) ও সন্তান ইভান (৫)।

ডুবে যাওয়া লঞ্চ পিনাক-৬-এ পদ্মা পাড়ি দিয়ে নারায়ণগঞ্জে নিজেদের বাসায় ফিরতে চেয়েছিলেন দুই মেয়ে, এক ছেলে ও স্ত্রীসহ জব্বার। লঞ্চডুবির পর ছেলে আনোয়ার হোসেন অপু ও তিনি বেঁচে গেলেও দুই মেয়ে হালিমা ও তানজিমা আক্তার এবং স্ত্রী জাহানারা বেগমের কোনো সন্ধান নেই। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘হালিমা এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল। ১৩ তারিখে ওর রেজাল্ট বের হবে।’

লঞ্চডুবির ঘটনায় নিজে বেঁচে গেলেও ১৩ বছরের মেয়ে মীমকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বিউটি বেগম। ঈদ শেষে ফরিদপুর থেকে ঢাকার ডেমরার নিজেদের বাসায় ফিরছিলেন তারা।
লঞ্চডুবিতে ভাগনে-ভাগনিকে হারিয়েছেন মফিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা ধরে নিয়েছি আমাদের বাচ্চারা আর বেঁচে নেই। কিন্তু আমরা তাদের লাশটা অন্তত ফেরত চাই।’ তিনি দ্রুত উদ্ধার তৎপরতা আবার শুরু করার দাবি জানান।

পাঁচ ঘনিষ্ঠজনকে হারিয়েছেন রজব আলী। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ইচ্ছে করে উদ্ধার তৎপরতায় বিলম্ব করা হচ্ছে, যাতে লাশগুলো খুঁজে পাওয়া না যায়। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশে তো এত বড় বড় জাহাজ আছে, তবে ট্রলার আর নৌকা দিয়ে কেন উদ্ধার অভিযান চালানো হচ্ছে। তিনি উদ্ধার তৎপরতা জোরদার এবং স্বজনদের কাছে লাশ ফেরত দেওয়ার দাবি জানান।

ডুবে যাওয়ার পর অর্ধশতাধিক যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়। গভীর রাত পর্যন্ত নিখোঁজ ১১৮ জনের স্বজনরা স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।

দুর্ঘটনার পরপরই ট্রলার ও স্পিডবোট নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্ধারকাজ শুরু করেন। পরে কোস্ট গার্ড, ফায়ার সার্ভিস ও নৌবাহিনীর উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযানে যোগ দেন।

এমএল পিনাক-৬ নামের লঞ্চটির ধারণক্ষমতা ছিল সর্বোচ্চ ৮৫। তবে তাতে আড়াই শতাধিক যাত্রী ওঠে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top