সকল মেনু

নানা সংকটে পাবনা মেডিক্যাল কলেজ

 পাবনা প্রতিনিধি : পর্যাপ্ত শিক্ষক, ছাত্রাবাস, নিজস্ব হাসপাতাল, পরীক্ষাগার নেই। এমনকি কলেজের একটি সাইনবোর্ড পর্যন্ত নেই। এর মধ্যেই চলছে পাবনা সরকারি মেডিক্যাল কলেজ। ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজ থেকে একটি ব্যাচ ইতিমধ্যে এমবিবিএস পাস করেছে। তবে কলেজ রয়ে গেছে শুধু ‘নেই’-এর আবর্তেই। পাবনা শহরের পশ্চিম প্রান্তে হেমায়েতপুরে মানসিক হাসপাতালের পাশেই পাবনা মেডিক্যাল কলেজ। ২০০৮ সালে মানসিক হাসপাতালের পেছনের দিকের দুটি পরিত্যক্ত ভবনে এর কার্যক্রম শুরু হয়। গত বছর কলেজের নতুন ছয়তলা ভবনে প্রশাসনিক ও শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। সম্প্রতি কলেজে গিয়ে দেখা যায়, ওই ভবনে কলেজের নাম লেখা হয়নি। সাইনবোর্ডও নেই। চলছে অবকাঠামো ও ছাত্রাবাস নির্মাণ। শিক্ষার্থীদের আবাসন এখনো মানসিক হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল। কলেজে বর্তমানে ছয়টি ব্যাচে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩২৪ জন।

সদ্য ভর্তি হওয়া এক শিক্ষার্থী বললেন, ‘কলেজে কিছু নেই, হোস্টেলেও কিছু নেই।’ পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী সব্যসাচী মজুমদার বলেন, ‘ঢাকার নীলক্ষেত থেকে বই কিনে পড়ে যদি ডাক্তার হওয়া যায়, আমাদের অবস্থাও তেমনই।’

শিক্ষার্থীরা জানালেন, কলেজের অন্তহীন সমস্যা সমাধানের দাবিতে তারা দফায় দফায় আন্দোলন করেছেন। ক্লাস বর্জন করেছেন। কিন্তু বিশেষ কিছু লাভ হয়নি। পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী শোভন মল্লিক ও ইরবান আলী জানালেন, শুরু থেকেই কলেজটিতে প্রধান সমস্যা শিক্ষক সংকট। এখন ফিজিওলজি, প্যাথলজি, মাইক্রোবায়োলজি, ইএনটি, রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিষয়গুলোর কোনো শিক্ষকই নেই। এসব বিষয়ে শিক্ষার্থীরা শুধু পাঠ্যবই পড়ে পরীক্ষা দিচ্ছেন। শিক্ষকদের কাছ থেকে এসব বিষয়ে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ পাচ্ছেন না। একজন বললেন, ‘আমরা কেবল দেখেছি, এটি আলট্রাসনোগ্রাম যন্ত্র, ওটি অমুক যন্ত্র। কিন্তু কেমন করে সেগুলোতে কাজ করতে হয় তা শেখানোর মতো কেউ নেই।’

শিক্ষার্থীরা আরো জানান, অন্যান্য বিষয়েও পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। পাবনা জেনারেল হাসপাতাল এবং আশপাশের সরকারি হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকেরা অনেকটা দয়াপরবশ হয়ে এই কলেজের বেকায়দায় পড়া শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ের ক্লাস নেন। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে কলেজ কর্তৃপক্ষও বিভিন্ন কলেজ বা হাসপাতালের চিকিৎসকদের খ-কালের জন্য আমন্ত্রণ করে এনে জরুরি ক্লাসগুলো করায়। প্রয়োজনীয় টেকনিশিয়ান বা কর্মচারীও নেই। নেই প্যাথলজি ও মাইক্রোবায়োলজির পরীক্ষাগার, চালু হয়নি পাঠাগার।

নিজস্ব হাসপাতাল না থাকায় শিক্ষার্থীদেরকে কলেজ থেকে প্রায় নয় কিলোমিটার দূরে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে হাতে-কলমে শিখতে হচ্ছে। কলেজের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষার্থীদের জেনারেল হাসপাতালে যাতায়াত করতে হয় নিজস্ব ব্যবস্থায়। এত সংকটের মধ্যে গত বছর প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এমবিবিএস উত্তীর্ণ হয়ে বেরিয়ে গেছেন।

ছাত্রদের দুটি হোস্টেল। বিত্তবান পরিবারের মানসিক রোগীরা যাতে পরিবারের সদস্যসহ থাকতে পারেন সে লক্ষ্যে তৈরি করা ও পরে পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা বেশ কিছু ছোট কটেজ যৎসামান্য মেরামত করে ছাত্রদের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ছাত্রীদের আবাসনের ব্যবস্থা চারটি পরিত্যক্ত ভবনে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী জানান, জায়গার সংকটের কারণে প্রথম বর্ষের ছাত্রীদের মেঝেতে থাকতে হয়। দেয়াল থেকে চুন-সুড়কি খসে পড়ে। টয়লেট ও বাথরুম বেহাল। আরও বড় সমস্যা নিরাপত্তার অভাব। হুটহাট করে লোক ঢুকে পড়ে। মাদকাসক্তরা প্রায়ই হোস্টেলে ঢুকে এটা ওটা নিয়ে যায়।

এসব বিষয়ে পাবনা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. রিয়াজুল হক রেজা বলেন, ‘নতুন কলেজে কিছু সমস্যা থাকেই। শিক্ষকের অভাব রয়েছে। তবে গত ১৫ জুন ফিজিওলজি, প্যাথলজি ও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। আশা করছি, শিগগির নিয়োগ-প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।’ তিনি জানান, কলেজের অর্গানোগ্রাম চূড়ান্ত হয়নি। বেতনবিন্যাস শেষ ধাপে রয়েছে। শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে তারা ১৬২ জন লোক চেয়েছেন, এখন শিক্ষক ও কর্মকর্তা আছেন ২৫ জন এবং কর্মচারী ৫০ জন। ক্রমান্বয়ে সার্বিক মান উন্নত হবে।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top