সকল মেনু

৭ মার্চের ভাষণ আজও প্রাসঙ্গিক

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ সমাজ প্রেক্ষাপটে আজও প্রাসঙ্গিক। শুধু স্বাধীনতার ঘোষণা নয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির বিষয় এখানে উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে পৃথিবীর মুক্তিকামী মানুষের জন্য এখনও এটি প্রাসঙ্গিক।

বৃহস্পতিবার সিরডাপ মিলনায়তনে ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে সম্প্রীতি বাংলাদেশ এই আলোচনার আয়োজন করে।

আলোচনায় বক্তারা বলেন, ‘ভাষণটিতে ১১ শ’র বেশি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। ১৮ মিনিটের এই ভাষণের প্রতিটি লাইন বিশ্লেষণ করলে এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিলে একটি সমৃদ্ধ দেশ গঠন সম্ভব। তলাবিহীন ঝুড়ি আখ্যা দেয়া বাংলাদেশকে মাত্র সাড়ে তিন বছরে বঙ্গবন্ধু জিডিপির দিক থেকে সমৃদ্ধ করেছেন।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু কবি-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীসহ দেশের সাড়ে সাত কোটি মানূষের স্বপ্ন, আশা, বঞ্চনা ও ভবিষ্যতের কথা বলে গেছেন। রেসকোর্স ময়দানে যে আলোড়ন ছিল তার চেয়ে বেড়ে আলোড়ন পড়েছিল ময়দানের বাইরে, পুরো দেশজুড়ে।

‘বর্তমান সরকার এই ভাষণকে পাঠ্যে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, পৃথিবী জুড়ে মুক্তিকামী মানুষের জন্য এই ভাষণ এখনও প্রাসঙ্গিক। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ-দর্শনকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশ এগুতে পারেনি। অতীতে যখনই এই দর্শনকে বাদ দেয়া হয়েছে, তখনই পিছিয়েছে বাংলাদেশ। দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে সাম্প্রদায়িকতার বিষ নির্মূল করতে হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য ড. বিশ্বজিৎ চন্দ্র বলেন, ‘এই ভাষণ থেকেই স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে। স্বাধীনতার পর ছিল- এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। স্বাধীনতার পরই আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য তিনি কাজ করেছেন।

‘বর্তমানে একটি সিন্ডিকেট দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে নিয়ে গেছে। জাতির পিতা বলেছিলেন- আমি পেয়েছি চোরের খনি। আজও এই চোরেরা আমাদের পেছনে টেনে ধরছে। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা সমাজের দুর্নীতি রোধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন।’

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণ কোটি মানুষের ভাষণে পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ছাড়া পৃথিবীর কোনো ভাষণ জাতি-রাষ্ট্রের জন্ম দেয়নি। এটি ছিল একমাত্র অলিখিত ভাষণ।

‘এই ভাষণ বাধ্যতামূলকভাবে নবম শ্রেণিতে যুক্ত করতে হবে। এসএসসি পর্যায়ে এ থেকে প্রশ্ন রাখতে হবে। ভালোবেসে শিক্ষার্থীদের এই ভাষণ পড়তে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, ‘ভাষণে তিনি বঞ্চনা, ইতিহাস, প্রত্যাশার কথা নিয়ে আসেন। একইসঙ্গে জনমনের কাঙ্ক্ষিত চাহিদা পূরণে চতুরতা অবলম্বন করে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, “একাত্তরের সেই ভাষণ বিভিন্ন দিক থেকেই বিশ্লেষণ করা যায়। তিনি বলেছিলেন- ‘ভাইয়েরা আমার’। এর মধ্য দিয়ে তিনি সব জাতি, ধর্ম ও বর্ণের লোকদের এক করেছিলেন। সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে প্রস্তুত করতে তিনি এই ডাক দিয়েছিলেন। ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’- এর মধ্য দিয়ে তিনি স্বাধীনতা ও মুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন। এই মুক্তি অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তি।”

সম্প্রতি বাংলাদেশের যুগ্ম আহ্বায়ক উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, ‘শেখ মুজিবের সেদিনের ভাষণ জনমনে দাগ কেটেছিল। পৃথিবীর অন্যান্য শ্রেষ্ঠ ভাষণের মধ্যে এটি অন্যতম স্থান করে নিয়েছে।’

বঙ্গবন্ধু-গবেষক ও নিউজবাংলা২৪.কম-এর নির্বাহী পরিচালক মেজর (অব.) আফিজুর রহমান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ ভাষণ দিলেও মার্চের প্রথম দিন থেকেই তিনি সব বিষয় পর্যবেক্ষণ করেছেন। ঐতিহাসিক এই দিনে তিনি যখন ভাষণ দেন, তখন দেশ স্বাধীন করতে কখন কী করতে হবে, তা সরাসরি না বললেও বিস্তারিত নির্দেশনা দিয়েছেন।

‘বঙ্গবন্ধু সরকারের বিপক্ষে অবস্থান নেয়ার সময় সাধারণ জনগণের সমস্যার কথাও বিবেচনা করেছেন। হরতালে তিনি সরকারি সব অফিস-আদালতের কার্যক্রম বন্ধ করলেও ট্রেন চালু রেখেছেন, যাতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি না হয়। এভাবে ছোট ছোট হলেও প্রতিটি বিষয়ে সবকিছু বিবেচনা করেই তিনি মুক্তিযুদ্ধের রূপকল্প সাজিয়েছেন। আর তার প্রতিটি নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেই এসেছে আমাদের স্বাধীনতা।’

সম্প্রীতি বাংলাদেশের সদিস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাবেক সভাপতি শফিকুল করিম সাবু।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top