সকল মেনু

টাইগারদের বাংলাওয়াশে ম্যাচসেরা লিটন

স্বপ্নের মতো একটা বছর কাটিয়ে নতুন বছরে বাংলাদেশ দলের সর্বোচ্চ আস্থা তৈরি করে নিয়েছিলেন লিটন কুমার দাস। চলতি বছরের প্রথম দিকে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেও নিজের ছন্দটা মোটামুটি ধরে রাখতে পেরেছিলেন তিনি। তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বছরের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ থেকে দেখা যায় লিটনের ছন্দহীনতা। ওয়ানডে সিরিজের প্রতিটি ম্যাচেই ব্যর্থতার তিক্ত স্বাদ নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে জয়সূচক শুরুটা ভালোভাবে করে জ¦লে উঠার আগেই নিভে গিয়েছেন তিনি।

অবশেষে মঙ্গলবার ১৪ মার্চ ইংলিশদের ধবলধোলাইয়ের ম্যাচে স্বাচ্ছন্দে ব্যাট চালিয়ে ইংলিশ বোলারদের লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে ফেললেন তিনি। বিশ ওভারের ম্যাচে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির আশা জাগিয়ে ব্যর্থ হলেও বাংলাদেশকে লড়াকু সংগ্রহ গড়ে দেয়ার নায়ক এই উইকেট কিপার ব্যাটসম্যানই।

দুর্দান্ত ব্যাটিং এবং চমৎকার কিপিংয়ের কারণে ম্যাচসেরা নির্বাচিত হন লিটন কুমার দাস।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিপক্ষীয় সিরিজের প্রতি ম্যাচেই ব্যাট হাতে দলকে ভালো কিছু দেয়ার চেষ্টা করেন। তবে প্রথম ম্যাচ থেকেই ব্যর্থ হতে হয় এই টপ অর্ডার ব্যাটারকে। ইংলিশ বধের মিশনে তামিম ইকবারের সঙ্গে ওপেন করতে নেমে তিনি ১৫ বলে একটি ছয়সহ ৭ রান করে সাজঘরে ফিরে যান। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচে তিনি রানের খাতাই খুলতে পারেননি। টি- টোয়েন্টি সিরিজ থেকে তিনি নিজের ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত দেন। যদিও ভালো কোনো সংগ্রহ তার ব্যাট থেকে আসেনি সেই ম্যাচে। তবে তার আগ্রাসী শুরুটাই ছিল বাংলাদেশের জয়ের মন্ত্র। দ্বিতীয় ম্যাচেও লিটনের একই রূপ দেখে ভক্তরা। সিরিজের তৃতীয় ও মিশন হোয়াইটওয়াশের ম্যাচে তার ছন্দহীনতার কারণে ভালো কিছু আশা করেনি কেউই। তবে ইংলিশ বোলারদের কোণঠাসা করে স্বরূপে ফিরে আসেন লিটন। টস হেরে বাংলাদেশের হয়ে রনি তালুকদারের সঙ্গে জুটি বেঁধে পিচে আসেন তিনি। শুরু থেকেই প্রথম দুই ম্যাচের মতো আগ্রাসী ব্যাটিং দিয়েই ম্যাচ শুরু করেন এই ব্যাটার। একপাশে ব্যাট চালিয়ে রানে গতি দিচ্ছিলেন লিটন, অন্যপাশে রনি তালুকদারও তালে তাল মিলিয়ে ইংলিশদের হোয়াইটওয়াশের পথে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন। রনি বিদায় নিলেও রানের গতি কমতে দেননি লিটন। অন্য প্রান্তে নাজমুল হোসেন শান্তকে রেখে বোলারদের চারে ভাসিয়ে এগিয়ে যান লড়াকু সংগ্রহের দিকে। নির্ভয় ব্যাটিংয়ের মধ্য দিয়ে তিনি ক্যারিয়ারের নবম ফিফটি তুলে নেন ৪১ বলে। ফিফটি পূরণ করার পর দেখা যায় তার আরেক রূপ। ততক্ষণে নিজের অবস্থান শক্ত করে নিয়ে আরো নিশ্চিন্তে ব্যাট চালাতে শুরু করেন টাইগার টিমের এই উইকেট কিপার। শেষ পর্যন্ত দর্শকদের সেঞ্চুরি উপহার দেয়ার আশা জাগিয়ে ৫৭ বলে ৭৩ রান করে বাউন্ডারি হাঁকানোর চেস্টায় ফিল সল্টের হাতে ধরা পড়েন তিনি। এই ৭৩ রানের ইনিংসই তার ক্যারিয়ারে গড়া সর্বোচ্চ রান। এই ইনিংস গড়তে লিটন ১০টি চার ও একটি ছক্কা হাঁকান। আউট হওয়ার পর তার স্ট্রাইক রেট ছিল ১২৮’এরও বেশি। লিটন বিদায় নিলেও মাঠ ছাড়ার আগে বাংলাদেশকে ইংলিশদের বাংলাওয়াশ করার পথে অনেকটাই এগিয়ে দিয়ে যান। ব্যাট হাতে দলের সর্বোচ্চ রান করা লিটনের বিচক্ষণতার ফলাফল পাওয়া যায় বাংলাদেশ ফিল্ডিং করতে নামার পরও। প্রথম ওভারেই তার দুরদর্শিতায় প্রথম বেক থ্রু পায় টাইগাররা। তানভির হাসানের বলে প্রথমবারের মতো ব্যাট লাগাতে গিয়ে কট বিহাইন্ডের শঙ্কায় পড়েন ফিল সল্ট। তখন ব্যাটে-বলে হয়েছে এমনটা ছিল প্রায় নিশ্চিত। তবে সেই ক্যাচ ধরে দাঁড়িয়ে না থেকে সুযোগ বুঝে লিটন স্টাম্পিং করে দেন। টিভি আম্বায়ারের রিভিউ শেষে সল্টের ব্যাটে বল না লাগলেও লিটন কুমার দাসের স্ট্যাম্পিংয়ের কারণে সাজঘরের পথ ধরতে হয় ইংলিশ ব্যাটারকে।

এরআগে লিটন নিজের রূপ দেখাতে সক্ষম হয়েছিলেন ২০২২ সালের ২ নভেম্বর ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলতে নেমে। সেই ম্যাচে তিনি ৬০ রান করে সাজঘরে ফিরেন। এরপর আরো তিনটি বিশ ওভারের ম্যাচে তিনি লাল-সবুজের প্রতিনিধিত্ব করতে নামলেও জ্বলে উঠার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। অবশেষে টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপের পর নিজের চতুর্থ ম্যাচে সফলতা পেলেন তিনি। টি-টোয়েন্টি সংস্করণের ক্রিকেটে এই পর্যন্ত লিটনের নয়টি ফিফটির সবগুলোই দলকে জেতাতে সাহায্য করেছে। তার ব্যাট থেকে যেদিনই ভালো রান এসেছে সেদিনই বদলে গেছে টাইগারদের মোমেন্টাম। একজন ব্যাটার হিসেবে সবচেয়ে ভালো দিক তিনি প্রতিটি অর্ধশতকেই একশোর বেশি স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করেছেন। বিপিএলের নবম আসর চলাকালে তার ব্যাটিংয়ের ধরন সম্পর্কে জানান, ‘আমি অ্যাটাকিং খেলতে পছন্দ করি। কখনোই এমন হয় না যে আমি ৪০ বলে ৪০ করি, আমি যদি ৪০ বল খেলি, তাহলে ৬০ হয়ে যায়। আমি যেভাবে এতদিন সফল হয়েছি, সে ধারবাহিকতাই বজায় রাখতে চাই।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top