সকল মেনু

জাতির পিতার দেয়া মাথাপিছু আয় বাংলাদেশ অর্জন করেছে ২০২১ সালে- গবেষণা ফলাফল প্রকাশনা

হটনিউজ ডেস্ক :

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সরকারের অর্জিত মাথাপিছু আয় ২০২১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ছিল। জিয়া, এরশাদ এবং খালেদা জিয়ার দুই মেয়াদের সরকারের মাথাপিছু আয় বঙ্গবন্ধুর সরকারের মাথাপিছু আয়ের চেয়ে অনেক ছিল। ২০২১ সালের পূর্বে একমাত্র জাতির পিতার মাথাপিছু আয় দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ ছিল। বঙ্গবন্ধু সরকারের ১৯৭৫ সালের ২৭৮ ডলারের মাথাপিছু আয়ের বেঞ্চমার্ক অতিক্রম করতে বাংলাদেশের লেগেছিল ৪৬ বছর। আর এই কাজটি করেছেন তাঁর ই কন্যা শেখ হাসিনা ২০২১ সালে।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকারের মাথাপিছু আয় চীনের মাথাপিছু আয়ের চেয়ে ১০০ ডলার বেশী ছিল। বঙ্গবন্ধু সরকারের মাথাপিছু আয়ের বৃদ্ধির হার (৫৩.৮০%) শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ নয়, গোটা পৃথিবীর জন্য একটি রেকর্ড । ২০২১ সালে তাঁরই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২২২৭ ডলারে উন্নীত করে বাংলাদেশকে আবার দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠ অর্থনীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। মাথাপিছু আয়ে বঙ্গবন্ধুর যুগান্তকারী অর্জন নিয়ে গবেষণা ফলাফল প্রকাশনায় এই তথ্য উঠে আসে।

মাথাপিছু আয়ে বঙ্গবন্ধুর যুগান্তকারী অর্জন নিয়ে গবেষণা ফলাফল প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপ কমিটি। গতরাত তথ্য ও গবেষণা উপ কমিটি কর্তৃক আয়োজিত “মাথা পিছু আয়ে বঙ্গবন্ধু সরকারের যুগান্তকারী সাফল্যঃ গবেষণা ফলাফল প্রকাশনা” শীর্ষক ওয়েবিনারে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ নয় পৃষ্ঠার এক গবেষণাপত্রে এই গবেষণা ফলাফল প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউ র রাহমানের সভাপতিত্বে গবেষণা ফলাফল প্রকাশনার সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রে সি ডিয়াম সদস্য এবং কৃষি মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি । আলোচনা করেন অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জামান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রফেসর হেলাল উদ্দিন নিজামী, ইউএন ডিপি’র কান্ট্রি ইকোনোমিষ্ট ড. নাজনীন আহমেদ ।

গবেষণা পত্রে বলা হয়, জাতির পিতার সুদৃঢ় নেতৃত্ব, অসীম সাহসিকতা ও কঠোর পরিশ্রমের কারণে যুদ্ধ বিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশে মাত্র সাড়ে তিন বছরে আমাদের মাথা পিছু আয় প্রায় তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছিলো। ১৯৭২ সালে মাথা পিছু আয় ছিল মাত্র ৯৪ মার্কিন ডলার। জাতির পিতা ১৯৭৫ সালে মাথা পিছু আয় ২৭৮ ডলারে উন্নীত করেছিলেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরে কোন দেশের মাথা পিছু আয় তিন গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার নজীর পৃথিবীতে বিরল। ১৯৭৩ সালে মাথা পিছু আয় বৃদ্ধির হার ছিল ২৬.৬৮% । ১৯৭২ সালের ২৯.৩৩ % ঋণাত্মক হার বিবেচনায় ১৯৭৩ সালে প্রকৃতপক্ষে এই বৃদ্ধির হার ছিল ৫৬.৬৮%। ১৯৭৪ সালে বৃদ্ধির হার ছিল ৫২.২৪% এবং ১৯৭৫ সালে বৃদ্ধির হার ছিল ৫২.৪৯%। মাথাপিছু আয়ের এই বৃদ্ধির হার (৫৩.৮০%) শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ নয়, পৃথিবীর হাতেগোনা কয়েকটি অর্থনীতিতে এমনটি ঘটেছিল । তবে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশের সাথে ঐ দেশ গুলোর তুলনা প্রযোজ্য নয় এই জন্য যে, বাংলাদেশ ছাড়া বাকি সকল দেশেই “windfall gain” এর কারণে মাথাপিছু আয়ের এই উল্লম্ফন হয়েছিল। ঐ দেশগুলোতে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিতে সরকারের নিজস্ব সাফল্য কম ।

গবেষণাপত্রে দেখানো হয়, বঙ্গবন্ধুর সরকারের সময় বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ ছিল। এছাড়া, বঙ্গবন্ধুর সরকারের মাথাপিছু আয়ের এই বৃদ্ধির হার (৫৩.৮০%) দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ ছিল। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধুর মাথাপিছু আয় চীনের মাথাপিছু আয়কে অতিক্রম করেছিল। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সরকারের মাথাপিছু আয় চীনের চেয়ে ১০০ ডলার বেশী ছিল। বঙ্গবন্ধুর সরকারের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির হারের রেকর্ড দক্ষিণ এশিয়ার কোন দেশ এখনও ভাঙ্গতে পারেনি। এমনকি চীনও বঙ্গবন্ধুর এই রেকর্ড ভাঙ্গতে পারেনি । গবেষণায় দেখানো হয়, ১৯৭৫ সালে যখন বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২৭৮ ডলার, তখন ভারতের মাথাপিছু আয় ছিল ১৫৮ ডলার, পাকিস্তানের ১৬৮ ডলার, শ্রীলঙ্কার ২৭৬ ডলার, নেপালের ১১৭ ডলার, আফগানিস্তানের ১৮৭ ডলার । ১৯৭৫ সালে চীনের মাথাপিছু আয় ছিল ১৭৮ ডলার, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশের চেয়ে ১০০ ডলার নীচে।

গবেষণা পত্রে দেখানো হয়, জাতির পিতার সরকারের ১৯৭৫ সালের ২৭৮ ডলার মাথাপিছু আয়ের বেঞ্চ মার্ক ২০২১ সালের পূর্বে বাংলাদেশের কোন সরকার অতিক্রম করতে পারেনি। এতে দেখানো হয়, জিয়ার সাড়ে পাঁচ বছরের শাসনামলের শেষ বছর ১৯৮১ সালে মাথাপিছু আয় ছিল ২৪৮ ডলার। এটি জিয়া সরকারের সর্বোচ্চ মাথাপিছু আয় ছিল। ডলারের মূল্যমান ও মূল্যস্ফীতি এবং বঙ্গবন্ধু সরকারের মাথাপিছু আয়ের বৃদ্ধির হারের (৫৩.৮০%) দশ ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ ৫% বৃদ্ধি ধরলে এটি হওয়ার কথা ছিল ৫৬০ ডলার। বঙ্গবন্ধুর মাথাপিছু আয়ের বেঞ্চ মার্ক থেকে জিয়ার সরকারের মাথাপিছু আয় ৩১২ ডলার কম ছিল।

এরশাদের শেষ আর্থিক বছর ১৯৯০ সালে মাথাপিছু আয় ছিল ৩০৬ ডলার। এটি এরশাদ সরকারের সর্বোচ্চ মাথাপিছু আয় ছিল। বঙ্গবন্ধুর ২৭৮ ডলারের বেঞ্চ মার্ক অনুযায়ী ১৯৯০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু থাকা উচিত ছিল ৬৭৫ ডলার। আর বঙ্গবন্ধু সরকারের মাথাপিছু আয়ের বৃদ্ধির হারের (৫৩.৮০%) দশ ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ ৫% বৃদ্ধি ধরলে ১৯৯০ সালে এটি হওয়ার কথা ছিল ৮৮৩ ডলার। বঙ্গবন্ধুর মাথাপিছু আয়ের বেঞ্চ মার্ক থেকে এরশাদ সরকারের মাথাপিছু আয় ৫৭৭ ডলার কম ছিল।

খালেদা জিয়ার প্রথম মেয়াদ শেষে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৩২৯ ডলার। এটি তাঁর প্রথম মেয়াদের সর্বোচ্চ মাথাপিছু আয় ছিল। ১৯৭৫ সালের বঙ্গবন্ধুর ২৭৮ ডলারের বেঞ্চ মার্ক অনুযায়ী ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় থাকা উচিত ছিল ৮০১.৮৬ ডলার। এর সাথে বঙ্গবন্ধু সরকারের মাথাপিছু আয়ের বৃদ্ধির হারের (৫৩.৮০%) দশ ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ ৫% বৃদ্ধি ধরলে ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় থাকা উচিত ছিল ১০৮০ ডলার। বঙ্গবন্ধুর মাথাপিছু আয়ের বেঞ্চ মার্ক থেকে খালেদা জিয়ার প্রথম সরকারের মাথাপিছু আয় ৭৫১ ডলার কম ছিল।

খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় মেয়াদ শেষে ২০০৬ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৫১০ ডলার। এটি তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের সর্বোচ্চ মাথাপিছু আয় ছিল। ১৯৭৫ সালের বঙ্গবন্ধুর ২৭৮ ডলারের বেঞ্চ মার্ক অনুযায়ী ২০০৬ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় থাকা উচিত ছিল ১০৫৪ ডলার। এর সাথে বঙ্গবন্ধু সরকারের মাথাপিছু আয়ের বৃদ্ধির হারের (৫৩.৮০%) দশ ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ ৫% বৃদ্ধির হার ধরলে ২০০৬ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় থাকা উচিত ছিল ১৪৮৫ ডলার। বঙ্গবন্ধুর মাথাপিছু আয়ের বেঞ্চ মার্ক থেকে খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় সরকারের মাথাপিছু আয় ৯৭৫ ডলার কম ছিল।

গবেষণায় দেখানো হয়, জিয়া ও এরশাদ এবং খালেদা জিয়ার দুই মেয়াদে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ভারত ও পাকিস্তান থেকে কম ছিল। ২০২১ সালের পূর্বে একমাত্র জাতির পিতার মাথাপিছু আয় দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ ছিল।

গবেষণায় দেখানো হয়, জাতির পিতার সরকারের ১৯৭৫ সালের ২৭৮ ডলারের বেঞ্চমার্ক ছুঁতে পেরেছিলেন তাঁরই কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালে জাতির পিতার জন্মশত বার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর উদযাপনের মধ্যে। বঙ্গবন্ধুর ১৯৭৫ সালের ২৭৮ ডলার ২০২১ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ১৩৯৫ ডলারে। এর সাথে বার্ষিক বৃদ্ধির হার ৫% ধরলে সেটি দাড়ায় ২০৩৪ ডলার। ২০২১ সালে রাষ্ট্র নায়ক শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২২২৭ ডলেরে উন্নীত করেছেন। ১৯৭৫ সালে মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে জাতির পিতা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠ অর্থনীতিতে পরিণত করেছিলেন। ২০২১ সালে তাঁরই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে আবার দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠ অর্থনীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

গবেষণায় দেখানো হয়, বাংলাদেশের ইতিহাসে জিডিপি’র প্রবৃদ্ধির হার একবারই ৯ শতাংশ অতিক্রম করেছিলো, সেটি ১৯৭৪ সালে জাতির পিতার সরকারের সময়। ঐ বছর প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৯.৫৯%। জাতির পিতার পর বাংলাদেশের ইতিহাসে জিডিপি’র প্রবৃদ্ধির হার ৮ শতাংশ অতিক্রম করেছিলো বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে, সেটি ২০১৯ সালে। ঐ বছর জিডিপি’র প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৮.১৫%।

গবেষণা পত্রের সূচনায় বলা হয়, জাতির পিতাকে নিয়ে যত বেশী গবেষণা করা হচ্ছে, তাঁর যুগান্তকারী কীর্তিসমূহ- যা বহুবছর রাষ্ট্রীয় অপপ্রচারের কারণে ধামাচাপা পরেছিল, সেগুলো নতুনভাবে আমাদের সামনে উঠে আসছে। যথাযথ ও মানসম্মত গবেষণার মাধ্যমে জাতির পিতার মহান কীর্তি সমূহ নতুন প্রজন্মের সামনে নিয়ে আসতে হবে। ইতিহাস এবং জাতির কাছে এটি আমাদের দায়বদ্ধতা। এতে বলা হয়, একটি রাষ্ট্র প্রকৃত অর্থে কতোটা উন্নতি লাভ করছে, তার মাপকাঠি হচ্ছে ঐ রাষ্ট্রের মাথাপিছু আয়ের প্রবৃদ্ধি। একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের জন্য জিডিপির প্রবৃদ্ধির হারের চেয়ে মাথাপিছু আয়ের প্রবৃদ্ধির হার অধিক গুরুত্বপূর্ণ।

ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, একটি দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে পৃথিবীর বুকে একটি স্বাধীন জাতি রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছি। আসলে এই পদ্মা মেঘনা যমুনা পাড়ের এই অঞ্চলটি বা দ্বীপ অঞ্চলটি কোনদিনই একটি স্বাধীন জাতি রাষ্ট্র ছিল না। কোনদিনই স্বশাসিত ছিল না। এটি দীর্ঘদিন পাঠান, মোঘল, পরবর্তীতে ইংরেজরা প্রায় ২০০ বছর এবং শেষে, পাকিস্তানি, জমিদার, সামন্ত প্রভুরা, সামরিক, বেসামরিক আমলারা বাংলাদেশকে শাসন করেছে, শোষণ করেছে।

ফলশ্রুতিতে, কৃষক, শ্রমিক যারা সকাল-সন্ধ্যা কঠোর পরিশ্রম করেছে, যাদের ঘামে, রক্তে সোনালী ফসল জন্মেছে, তারা চিরদিনই অর্ধাহারে, অনাহারে থেকেছে, কষ্ট করেছে এবং তারা সবসময় বঞ্চিত ছিল।

বঙ্গবন্ধু তাঁর কৈশর বয়স থেকেই এই মানুষগুলোর বঞ্চনা দেখেছেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সারাটা জীবন জুড়েই ছিল কৃষি, কৃষকের কল্যাণ, মানুষের কল্যাণ।

দীর্ঘ মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছেন। ঘরবাড়ি, দোকানপাট, শিল্পকারখানা ধ্বংস হয়েছে, রাস্তাঘাট ধ্বংস হয়েছে এরকম একটি পরিস্থিতি থেকে বঙ্গবন্ধু সরকারকে নতুন করে শুরু করতে হয়েছে।

আমি অমর্ত্য সেনের ‘An Uncertain Glory: India and its Contradictions’ বইটিতে পড়েছি: ১৯০১ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ৪৭ বছর জিডিপির গড় আয় ছিল ০.০৯ পার্সেন্ট; অবিশ্বাস্য; অলমোস্ট জিরো। এরপর পাকিস্তান- ৪৭ এর পর থেকে ১৫ বছরপর্যন্ত জিডিপির গ্রোথ ছিল মাইনাস। বঙ্গবন্ধু যখন শুরু করেন, তখন পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় ছিল ৯০ ডলার এবং এই ৯০ ডলার থেকে বঙ্গবন্ধু এটাকে ২৩৮ ডলার করেছেন।

মুক্তিযুদ্ধের শেষে বাংলাদেশের সাইজ অব ইকোনমি ছিল, ৮ বিলিয়ন ডলার মাত্র। ২০০৬ সালে বিএনপির সময়ে আমাদের টোটাল জিডিপির সাইজ ছিল ৪ লক্ষ ৮০ হাজার কোটি টাকা। সেই আজকে বাংলাদেশের জিডিপি দাঁড়িয়েছে ৩০ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি এবং মাথাপিছু আয়, যেটা বঙ্গবন্ধু রেখে গিয়েছিলেন ২৩৮ ডলার, এটি এখন হয়েছে ২২৬০ বা ২২৩০ ডলার।

ড. মশিউর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধুর দর্শণের প্রধাণ তিনটি দিক হলো, গভীর গণতান্ত্রিক মানবতা, মানুষের মর্যাদা, দেশকে চেনা ও গভীর দেশপ্রেম।

সংবিধানের চতুর্থ সংশোধন নিয়ে বক্তব্য এসেছে। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছিল সবচেয়ে বড় দল; তারপরেই কৃষক প্রজা পার্টি। যে সকল রাজনৈতিক দল মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় সমর্থন করেছিল, মূলত সেই দেশপ্রেমিক দলগুলোর সাথে সমন্বয় করে একটি নতুন দল, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠন করা হয়। রাজনেতিক নেতৃত্ব ও প্রশাসনের কাঠামো ভিত্তিক সমন্বয় করে, শিক্ষাবিদ ও সুশীল সমাজকে প্রশাসনে সম্পৃক্ত করে। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের স্হান ছিলনা।

বঙ্গবন্ধুর সরকার, আমদানি ও সরকারি ব্যায় মিটাবার প্রয়োজনে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মূদ্রা তহবিলে যোগ দিয়েছিল। বাংলাদেশ রেয়াতি সুদে ঋণ এবং অনুদান পায়। স্বাধীনতার আগের ঋণের কিছু দায়, বাংলাদেশের উপর বর্তায়; দ্বিপক্ষিক ঋণের বড় অংশ অনুদানে রূপান্তরিত হয়। বৈদেশিক মূদ্রায় ঋণ পরিশোধের দায় লাঘব হয়। আমাদের সক্ষমতা ঘাটতি সম্পর্কে ধারনা সঠিক নয়। বিশ্বব্যাংক ভারতে কতিপয় ঋণ স্হগিত করে এবং ঐসব ঋণ ব্যবহার শতভাগ নিরীক্ষা (প্রত্যেক ভাউচার পরীক্ষা) করে। প্রতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি সম্পর্কে উভয় পক্ষ সম্মত হয়। ।

বঙ্গবন্ধুর সংক্ষিপ্ত শাসনকালে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়। দেশদ্রোহীদের হাতে বঙ্গবন্ধু নিহত হবার পর নেমে আসে অরাজকতা। দিক নির্দেশনাহীন প্রশাসন, দেশের কোন মঙ্গল করতে পারেনা। বঙ্গবন্ধু যে উন্নয়ন শুরু করেছিলেন, তা থমকে যায়। জনগনের রায় নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের দায়িত্ব গ্ৰহনের পরে, উন্নয়নের ধারা ফিরে আসে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সে ধারা নতুন গতি পায়। বঙ্গবন্ধু উন্নয়নের যে ধারা সূচনা করেছিলেন, তাতে যদি বিরতি না পড়তো তাহলে বাংলাদেশ, নি:সন্দেহে আরো উন্নত পর্যায়ে থাকত।

ড. সেলিম মাহমুদ অনেক পরিশ্রম ও যত্নের সাথে পরিসংখ্যান / উপাত্ত সংগ্ৰহ করেছেন ও উপস্থাপন করেছেন। এই দীর্ঘ সময়ে তথ্য নির্মাণে অনেক পরিবর্তন এসেছে। খানা আয় ব্যায় সার্ভে, শীল্প ও কৃষি সুমারি ইত্যাদিতে পরিবর্তন আসে, ভিত্তি-বছর বদল হয়। উপকরণ ও উৎপাদন সহগ (ইনপুট – আউটপুট কোইফিসিয়েন্ট) পরিবর্তিত হয়। ১৯৯৩ সালে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জাতীয় আয় হিসাব পদ্ধতি পরিবর্তিত হয়; ২০০৮ সালে উক্ত পদ্ধতি সংশোধিত হয়, এর ফলে তথ্য-উপাত্তের অনেক পরিবর্তন হয়েছে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাথে আলাপ করে এসব বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যেতে পারে। জনগণ, তথ্য ও গবেষণা উপকমিটির বক্তব্য প্রামান্য হিসাবে মেনে নিবে।

ড. কাজী খলিকুজ্জামান বলেন, বঙ্গবন্ধু কিভাবে অর্থনীতির ভিত্তিটা স্থাপন করলেন, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমন একটি অর্থনীতি, যেটা একেবারেই বিধ্বস্ত ছিল, কৃষি বিধ্বস্ত ছিল, রাস্তাঘাট বিধ্বস্ত ছিল, পাকিস্তানিরা ফেলে যাওয়া শিল্প বন্ধ ছিল এবং বাংলাদেশি যে শিল্পগুলো ছিল, সেগুলোও চলছিল না। কোন প্রশাসনিক ব্যবস্থা ছিল না। এরকম একটি অবস্থা থেকে বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন, তারপর শুরু হলো অগ্রগতি।

বঙ্গবন্ধু প্রত্যেকটা পদক্ষেপ নিয়েছেন মানুষকে কেন্দ্র করে। প্রথমে তিনি বলেছেন- দু:খী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে হবে। দুখী মানুষ কারা, যারা বঞ্চিত। সেই বঞ্চনার কথা, মুক্তির কথা, তিনি ৭ই মার্চের ভাষণে বলেছিলেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top