সকল মেনু

অন্ধকার জগতের রানী ডিজে নেহার যত কুকর্ম

হটনিউজ ডেস্ক:

মদ পানের পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মাধুরী ও তার বন্ধু আরাফাতের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর এখন একে একে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে অন্ধকার জগতের সব চাঞ্চল্যকর তথ্য। এ ঘটনায় গ্রেফতার ভুক্তভোগীর বান্ধবী ফারজানা জামান ওরফে ডিজে নেহা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নিজের অন্ধকার জগত সম্পর্কে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন।

এই নেহার অন্যতম টার্গেট ছিলো শিল্পপতি কিংবা তাদের সন্তানরা। হাতের নাগালে কোনো শিল্পপতি পেয়ে গেলেই যেনো কপাল খুলে যেতো তার। কলাকৌশলে বিভিন্ন রকমের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেই জায়গা করে নিতো টার্গেটকৃতদের মনে।
রবিবার রিমান্ডের তৃতীয় দিনে নেহার ফোনবুকে পুলিশ ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ডজনখানেক শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীর নাম্বার পেয়েছে। যেগুলো সাংকেতিকভাবে সংরক্ষণ করা। এসব ধর্নাঢ্যদের অনেকের কাছে মদ, তরুণী সরবরাহ করতেন তিনি। কখনও কখনও নেহা নিজেই তাদের সঙ্গ দিয়েছেন। বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে হাতিয়েছেন মোটা অঙ্কের টাকা।

তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, ডিজে নেহার পছন্দের মোবাইল ফোনে (আইফোন) টার্গেট করা ব্যবসায়ী ও ধনী যুবকদের নম্বর ‘ক্লায়েন্ট-১’, ‘ক্লায়েন্ট-২’, ‘ক্লায়েন্ট-৩’ এমন ধারাবাহিকভাবেই সংরক্ষণ করা আছে। জিজ্ঞাসাবাদে নেহা জানিয়েছেন, গত বছরের মার্চে চট্টগ্রামের এক গাড়ি ব্যবসায়ীর সঙ্গে একটি পার্টিতে তার পরিচয় হয়। এরপর ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে কৌশলে ৬ মাসে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন নেহা। নেহার এসব কাজে সহযোগিতা করতেন তারই চাচাতো ভাই শাফায়াত জামিল বিশাল। বিশাল সার্বক্ষণিক নেহার সঙ্গেই থাকতেন।

৬ মাসের পরিচয়ে চট্টগ্রামের গাড়ি ব্যবসায়ী জিম্মি

২০২০ সালের মার্চে নেহার সাথে ইংরেজি ‘আর’ আদ্যাক্ষরে শুরু নামের চট্টগ্রামের এক গাড়ি ব্যবসায়ীর পরিচয় ঘটে। এর এক পর্যায়ে ওই ব্যবসায়ীকে একান্ত সম্পর্কে জড়িয়ে ইমোশনাল ব্লাকমেইলিং করতে থাকে। ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে গত মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত, ৬ মাসে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।

আন্তর্জাতিক ইয়াবা ডন কার্লোসের সঙ্গে নেহার ঘনিষ্ঠতা

আন্তর্জাতিক ইয়াবা কারবারিদের মধ্যে কার্লোস অন্যতম। তার পুরো নাম আবু জাফর মোহাম্মদ কার্লোস। সে ইয়াবা ডন কার্লোস নামেও পরিচিত। ২০১৭ সালের মাঝামাঝিতে ঢাকায় গ্রেপ্তার হয়েছিলো ‘আবু জাফর মোহাম্মদ কার্লোস’ নামের আন্তর্জাতিক ইয়াবা ব্যবসায়ী। তার সঙ্গে জড়িয়ে মিডিয়ায় আলোচনায় উঠে আসে বেশ কজন মডেল অভিনেত্রীর নাম। অনন্য মামুন পরিচালিত ‘অস্তিত্ব’ চলচ্চিত্রের প্রযোজক কার্লোস। অস্তিত্ব সিনেমা বানানোর পর কার্লোস ঢাকার সিনেমা পাড়ার নামি-দামি নায়িকাদের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। এসব নায়িকার অনেককে নিয়ে তিনি থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় যাতায়াত শুরু করেন। এদের কয়েক জনের সঙ্গে তিনি লিভ টুগেদারও করছিলেন। এই কার্লোসও ডিজে নেহার খুব কাছের এবং ঘনিষ্ঠ একজন ছিলো বলে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, ২৮ জানুয়ারি উত্তরার ব্যাম্বু স্যুট রেস্টুরেন্টে ইউল্যাব শিক্ষার্থীদের মদপান করাতে নেহা ও তার খুব কাছের বন্ধু আরাফাত পার্টির আয়োজন করেন। মদপানের পর অসুস্থ হয়ে আরাফাতও মারা গেছেন। সেদিন নেহার ফোনেই তার চাচাতো ভাই শাফায়াত জামিল ওরফে বিশাল এয়ারপোর্ট এলাকা থেকে মদ কিনে নিয়ে যায় ওই রেস্টুরেন্টে।

নেহা পুলিশকে জানিয়েছেন, খদ্দেরদের তালিকা সংরক্ষণ করতেন বিশাল। এছাড়াও অবৈধ দরদামে সে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে দায়িত্ব পালন করতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মাধুরীর মৃত্যুর পর তার বাবার মামলায় অজ্ঞাত আসামি হিসাবে নিজেই আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন বিশাল। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। এছাড়া ওই ছাত্রীর ছেলে বন্ধু আরিফ এবং তাদের বাসায় আশ্রয়দাতা তাফসিরও কারাগারে আটক রয়েছেন।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসি হারুন অর রশিদ বলেছেন, নেহাকে জিজ্ঞাসাবাদে আমরা অনেক তথ্য পেয়েছি। এসব যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এ ঘটনায় তদন্ত চলছে। যদি মামলার তদন্তের স্বার্থে লাশ তোলা প্রয়োজন হয় সে ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করে তোলা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top