বাসার মালামাল লুট করতে আসা ডাকাত দলের সদস্যদের চিনতে পারায় খুন হতে হয় লক্ষ্মীপুরের তেওয়ানীগঞ্জ ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মো. মনির হোসেনকে। তাকে হত্যার ঘটনায় জড়িত ডাকাত দলের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে এমন তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গতকাল সোমবার বিকালে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি মিলনায়তনে এ বিষয়ে এক ব্রিফিংয়ে সিআইডির অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক হাসিবুল আজিজ এ বিষয়ে জানান, মনির হোসেন রাজনীতির পাশাপাশি ঠিকাদারি করতেন। আর এই কাজের ব্যয় মেটাতে দুই লাখ টাকা তুলে বাসায় রেখেছিলেন। আর বিষয়টি তার শ্রমিক সরবরাহকারীরা জানতেন। তবে মনির জানতেন না শ্রমিক সরবরাহকারীর পরিচয় দিয়ে তাঁর সঙ্গে ঘুরছে একদল ডাকাত।
গত ১৭ ডিসেম্বর রাতে মনিরের লক্ষ্মীপুরের বাড়িতে ডাকাত দল ঢুকে ওই টাকা লুটে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় ডাকাতরা একে অন্যের নাম ধরে ডাকছিল। তখন মনির তাদের চিনে ফেলেন। তখন এই ডাকাতরাই তাকে হত্যা করে।
এ ঘটনায় চার ডাকাতকে গ্রেপ্তার করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে দাবি করে সিআইডি কর্মকর্তা হাসিবুল আজিজ বলেন, ঘটনার পরপরই তারা হত্যা রহস্য উন্মোচনে তৎপর ছিলেন। আর তদন্তের ১০ দিনের মাথায় হত্যাকাণ্ডের কারণ খুঁজে বের করে মূল আসামিদের গ্রেপ্তার ও হত্যার রহস্য উন্মোচন করেন সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত মুক্তা ধর সাংবাদিকদের জানান, মোট নয়জন মনিরের বাড়িতে ডাকাতি ও হত্যাকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। গত ১৭ ডিসেম্বর দিবাগত রাত দেড়টার দিকে এদের একজন বাদে বাকিরা দেয়াল টপকে মনির হোসেনের ঘরে ঢোকে। তাদের প্রত্যেকের মুখে মুখোশ ছিল।
এ সময় মনির ও তাঁর স্ত্রী মনোয়ারা বেগম ছিলেন এক ঘরে। অন্য ঘরে তাঁদের সন্তান। ঘরে ঢুকেই তারা মনিরকে টাকা দিতে বলে। এ সময় ডাকাতরা একে অন্যের নাম ধরে ডাকছিল। তখন মনির তাদের চিনে ফেলেন। তিনি তাদের টাকা নিতে বাধা দেন। তখনই তারা হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে মনির হোসেন ও তাঁর স্ত্রী মনোয়ারাকে আঘাত করেন। পরে তারা ওই টাকা ও এক জোড়া কানপাশা, তিনটি নাকফুল, দুই জোড়া কানের দুল নিয়ে পালায়। তাদের মধ্যে দুই বা তিনজন মনির হোসেনের মোটরসাইকেলে করে ঘটনাস্থল ছেড়ে যায়।
তিনি বলেন, ওই ঘটনার পর স্বজনরা গুরুতর অবস্থায় মনির ও তার স্ত্রীকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ঢাকায় নেওয়ার পথে মনির হোসেন মারা যান। মনোয়ারা বেগম এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় ১৮ ডিসেম্বরই লক্ষ্মীপুর সদর থানায় মামলা হয়।
সিআইডি সূত্র জানায়, ওই ঘটনা তদন্তের এক পর্যায়ে গত ১৮ ডিসেম্বর প্রথমে ডাকাত দলের সদস্য লক্ষ্মীপুরের মামুনুর রশীদকে (৩৫) গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর মামুন জিজ্ঞাসাবাদে ডাকাতির কথা স্বীকার করে। পরে তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে ওই ডাকাতির সঙ্গে জড়িত আবুল কালাম আজাদ, ফারুক ও আইয়ুবকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আইয়ুবের বাসা থেকে মোটরসাইকেলটি উদ্ধার হয়।
সিআইডি সূত্র জানায়, ডাকাত দলের প্রধান আজাদের নামে লক্ষ্মীপুর থানায় চারটি, চন্দ্রগঞ্জ থানায় দুটি, কমলনগর, সুধারাম ও লাঙ্গলকোট থানায় তিনটি হত্যা ও ডাকাতির মামলা আছে। মামুনের নামে অস্ত্র ও আইয়ুব আলীর নামে নোয়াখালীর সুবর্ণচর এলাকায় হত্যাসহ নানা অভিযোগে মামলা হয়েছে। পুলিশ বলছে, এই ডাকাত দলটি চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলায় ডাকাতি করত।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।