সকল মেনু

বিপদ-আপদ থেকে উপকার পাওয়ার দোয়া

হটনিউজ ডেস্ক:

মানুষের জন্য দোয়া ইউনুস-এর ফজিলত ও গুরুত্ব অনেক বেশি। এ দোয়ার সঠিক আমলে মানুষ দুনিয়ায় যাবতীয় বিপদ-আপদ থেকে উপকার পায়। হাদিসে দোয়া ইউনুস-এর ফজিলত ও উপকারিতা তুলে ধরা হয়েছে। আবার সমাজেও ‘দোয়া ইউনুস’ পড়ার কিংবা খতম করার প্রচলন রয়েছে। যদিও অনেকে এ ব্যাপারে মতবিরোধ করেছেন।

দোয়া ইউনুস-এর পরিচয়

আল্লাহর পয়গাম্বর হজরত ইউনুস আলাইহিস সালাম দেশ ত্যাগ করে চলে যাওয়ার সময় নদীতে ঝাঁপ দিলে তিনি মাছের পেটে বন্দি হন। এ অবস্থায় বিপদে পড়ে তিনি মহান আল্লাহর কাছে যে দোয়া পড়েন আর সে দোয়ার বরকতে আল্লাহ তাকে মহাবিপদ থেকে উদ্ধার করেছিলেন, তাই দোয়া ইউনুছ। আর তাহলো-

لَا إِلَـٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ

উচ্চারণ : লা ইলাহা ইল্লা আংতা, সুবহানাকা ইন্নি কুংতু মিনাজ জ্বালিমিন।’

অর্থ : ‘তুমি ব্যতীত সত্য কোনো উপাস্য নেই; তুমি পুতঃপবিত্র, নিশ্চয় আমি জালিমদের দলভুক্ত।’

দোয়া ইউনুস-এর উপকারিতা

  • আল্লাহ তাআলা মুমিন মুসলমানের জন্য সে ঘটনা ও এ ফজিলতপূর্ণ দোয়াটি তুলে ধরে বলেন-

وَذَا النُّونِ إِذ ذَّهَبَ مُغَاضِبًا فَظَنَّ أَن لَّن نَّقْدِرَ عَلَيْهِ فَنَادَىٰ فِي الظُّلُمَاتِ أَن لَّا إِلَـٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ – فَاسْتَجَبْنَا لَهُ وَنَجَّيْنَاهُ مِنَ الْغَمِّ ۚ وَكَذَٰلِكَ نُنجِي الْمُؤْمِنِينَ

‘আর মাছ ওয়ালার (ইউনুস আলাইহিস সালাম) কথা স্মরণ করুন। তিনি রাগ করে চলে গিয়েছিলেন। অতঃপর মনে করেছিলেন যে, আমি তাঁকে ধরতে পারব না। অতঃপর তিনি অন্ধকারের মধ্যে (মাছের পেটে থাকা অবস্থায়) এ কথা বলে আহ্বান করলেন-

لَا إِلَـٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ

‘লা ইলাহা ইল্লা আংতা, সুবহানাকা ইন্নি কুংতু মিনাজ জ্বালিমিন।’

অর্থ : তুমি ব্যতীত সত্য কোনো উপাস্য নেই; তুমি পুতঃপবিত্র, নিশ্চয় আমি জালিমদের দলভুক্ত।’

অতপর আমি তাঁর আহবানে সাড়া দিলাম এবং তাঁকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিলাম। আমি এমনি ভাবে বিশ্ববাসীদেরকে মুক্তি দিয়ে থাকি।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ৮৭)

  • তাফসিরে তাবারিতে আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে-

আর ইউনুস আলাইহিস সালাম মাছের পেটে বন্দি থাকা অবস্থায় আমাকে ডাকার ফলে যেভাবে তাকে মুক্তি দিয়েছিলাম সেভাবে আমি মুমিনদেরকেও বিপদ থেকে উদ্ধার করব যখন তারা আমার কাছে সাহায্য চায় এবং আমাকে ডাকে।’

  • হজরত সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

‘যুননুন (মাছ ওয়ালা) ইউনুস আলাইহিস সালাম মাছের পেটে দোয়া করেছিলেন-

لَا إِلَـٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ

‘লা ইলাহা ইল্লা আংতা, সুবহানাকা ইন্নি কুংতু মিনাজ জ্বালিমিন।’

অর্থাৎ ‘তুমি ব্যতীত সত্য কোনো উপাস্য নেই; তুমি পুতঃপবিত্র, নিশ্চয় আমি গোনাহগারদের দলভুক্ত। যখনই কোনো মুসলিমের (দোয়া ইউনুস) মাধ্যমে দোয়া করে, আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তার দোয়া কবুল করে থাকেন।’ (তিরমিজি, মিশকাত)

দোয়া ইউনুস পড়ার নিয়ম

যে কোনো বালা-মসিবত, বিপদাপদ, দুশ্চিন্তা-পেরেশানি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ইত্যাদি থেকে মুক্তির উদ্দেশ্যে দোয়া ইউনুস পাঠ করা অত্যন্ত কার্যকর আমল। কিন্তু এ দোয়া ইউনুস কখন, কীভাবে এবং কতবার পড়তে হয়? সমাজে প্রচলিত খতমে ইউনুস উপলক্ষে বিভিন্ন সংখ্যায় এ দোয়া পড়ার কি সঠিক?

দোয়া উইনুস পড়ার নিয়ম হলো মহান আল্লাহর কাছে একান্ত বিনয় ও নম্রতা, একাগ্রতা, পূর্ণ আন্তরিকতা ও ভয়ভীতির মাধ্যমে যাবতীয় বিপদ-আপদ থেকে মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করা। তবে এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো পরিমাণ বা সংখ্যা নেই। তবে এ দোয়া কবুল ও উপকারিতা লাভে রয়েছে কিছু নিয়ম-নীতি আর তাহলো-

আরও পড়ুন: যে সময়ের দোয়া আল্লাহ ফেরত দেন না

  • আমির সানআনি বলেন, ‘যদি বলা হয়, এটা তো একটা জিকির, দোয়া নয়, তবে আমরা বলব, এটি এমন একটি জিকির যা দ্বারা দোয়া শুরু করা হয়। এটা পড়ার পর যা ইচ্ছা দুআ করা যাবে।’ (আত-তানবির)
  • এভাবে প্রথমে দোয়া ইউনুস পাঠ করার পর আল্লাহর কাছে কাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্য নিয়ে দোজা করলে, আশা করা যায়, মহান দয়ালু দাতা আল্লাহ দোয়া কবুল করবেন। এ ক্ষেত্রে দোয়া কবুলের শর্তাবলি ও আদব ঠিক থাকতে হবে।
  • এ দোয়ার আমলকারীকে অবশ্য্ হালাল উপার্জন থেকে খাদ্য-পানীয় গ্রহণ করা এবং হালাল অর্থের উপর জীবন যাপন করা।
  • দোয়ার শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা ও নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর দরুদ পাঠ করা। দোয়া শেষে আবারও দরুদ পাঠ করা ভালো।
  • অন্তরে দোয়া কবুল হওয়ার দৃঢ় আস্থা ও মনোভাব অক্ষুণ্ন রাখা।
  • একান্ত বিনয়-নম্রতার সাথে কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে বারবার দোয়া করতে থাকা।
  • দোয়া করতে করতে বিরক্ত না হওয়া।
  • দোয়া কবুলের জন্য তাড়াহুড়া না করা।
  • দোয়ার মধ্যে গোনাহের কোনো কিছু না থাকা ইত্যাদি।

মনে রাখতে হবে

মহান আল্লাহ তাআলা বান্দার দোয়া তিনভাবে কবুল করে থাকেন, যা প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত। আর তাহলো-

  • মহান আল্লাহ বান্দাকে কখনও কখনও তার প্রত্যাশিত চাওয়াটি দুনিয়ায়ই পূরণ করে দেন।
  • কখনও কখনও তিনি এর প্রতিদান আখেরাতের জন্য জমা রাখেন। তিনি বান্দার দুনিয়াবি প্রত্যাশা পূরণ না করে এই দোয়ার বিনিময়ে আখেরাতে তাকে মহা পুরস্কারে ভূষিত করবেন, যা তার জন্য দুনিয়া থেকে আরও বেশি কল্যাণকর।
  • কখনও এ দোয়ার কারণে তাকে বড় ধরনের বিপদ থেকে হেফাজত করেন। যার তার জন্য একেবারে অবশ্যম্ভাবী ছিল।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথভাবে দোয়া ইউনুস-এর মাধ্যমে বিভিন্ন বিপদ-আপদ থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। যেভাবে তিনি হজরত ইউনুস আলাইহিস সালামকে বিপদ থেকে হেফাজত করেছিলেন। এ দোয়া ইউনুস এর মাধ্যমে দুনিয়াবাসিকে মহামারি করোনাসহ যাবতীয় প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকেও হেফাজত করুন। আমিন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top