সকল মেনু

কন্যাসন্তানের বাবা-মায়ের জন্য সুসংবাদ

হটনিউজ ডেস্ক:

প্রিয় নবীর আগমনের আগে মেয়েসন্তানরা ছিল চরম অবহেলিত, ঘৃণিত। কন্যাসন্তান জন্মের সংবাদ শোনামাত্র তাদের মুখ অন্ধকার ও মলিন হয়ে যেত। এমনকি কন্যাসন্তানকে জীবিত মাটিতে পুঁতে ফেলার নির্মম ঘটনাও ঘটেছিল সে সময়।

মেয়েদের প্রতি ঘৃণ্য আচরণের নিন্দা : মেয়েদের প্রতি তাদের এই ঘৃণ্য আচরণের নিন্দা জানিয়ে আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদে ইরশাদ করেছেন, ‘তাদের কাউকে যখন কন্যাসন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়, তখন তার মুখমণ্ডল কালো হয়ে যায় এবং সে অসহনীয় মনস্তাপে ক্লিষ্ট হয়। তাকে যে সংবাদ দেওয়া হয়, তার থেকে বাঁচতে সে নিজ সম্প্রদায় থেকে আত্মগোপন করে; সে চিন্তা করে যে হীনতা সত্ত্বেও সে তাকে রেখে দেবে, না মাটিতে পুঁতে দেবে। সাবধান! তারা যা সিদ্ধান্ত করে, তা কতই না নিকৃষ্ট।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৫৮-৫৯)

কন্যাসন্তানের বাবা-মায়ের জন্য সুসংবাদ : কিন্তু নবীজির আগমনের পর ধীরে ধীরে পাশবিক এই অবস্থার পরিবর্তন হতে লাগল। কন্যাসন্তানদের প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়ল। এমনকি সে সময় যারা কন্যাসন্তান জন্ম দিত এবং তার যথাযথ দেখাশোনা করত তাদের প্রতি নবীজির সুসংবাদ ছিল এরূপ : ‘যার তিনজন কন্যাসন্তান হবে আর সে তাদের আবাসের ব্যবস্থা করবে, তাদের প্রতি মমতা প্রদর্শন করবে এবং তাদের ভার বহন করবে, তার জান্নাত নিশ্চিত। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! যদি দুজন হয়? বলেন, দুজন হলেও। বর্ণনাকারী বলেন, সাহাবিদের কারো কারো ধারণা : যদি কেউ বলত একজন হলে? তাহলে নবীজি বলতেন, একজন হলেও।’ (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ১৪২৪৭)

কন্যাদের প্রতি রাসুল (সা.)-এর ভালোবাসা : তা ছাড়া প্রিয় নবীজি তাঁর বাস্তব জীবনেও এর যথাযথ প্রমাণ দেখিয়ে গেছেন। নিজের মেয়েদের প্রতি তাঁর আদর-স্নেহ, ভালোবাসা, মায়া-মমতা কেমন ছিল তার একটি উদাহরণ আম্মাজান আয়েশা (রা.) এভাবে তুলে ধরেন—‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে কথাবার্তায় ফাতেমার চেয়ে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ আর কাউকেই দেখিনি। সে যখন তাঁর কাছে আসত তখন তিনি উঠে দাঁড়াতেন, তাকে স্বাগত জানাতেন, চুমু খেতেন এবং নিজের আসনে তাকে বসাতেন। আবার যখন তিনি ফাতেমার কাছে যেতেন তখন সেও তাঁর জন্য উঠে দাঁড়াত, তাঁর হাত ধরত, তাঁকে স্বাগত জানাত, চুমু খেত এবং নিজের আসনে তাঁকে বসাত।’ (আল আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৯৭১)

সুনানে নাসাঈর এক বর্ণনায় এসেছে, নবীজি (সা.)-এর নাতনি উমামা (রা.) যখন শিশু ছিলেন, একদিন নবীজি তাকে কাঁধে চড়িয়ে মসজিদে চলে এলেন। এরপর এভাবেই নামাজে দাঁড়ালেন। দাঁড়ানো থেকে যখন রুকুতে যাবেন তখন তাকে নামিয়ে নিলেন। এরপর দাঁড়িয়ে আবার তাকে কাঁধে চড়ালেন। এভাবেই তিনি পুরো নামাজ শেষ করলেন। (নাসাঈ, হাদিস : ৭১১)

মেয়েদের প্রতি রাসুলের সম্মাননা : তবে নবীজির এ ভালোবাসা শুধু নিজের মেয়ে আর নাতনিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং অন্য মেয়েশিশুদের প্রতিও তাঁর ভালোবাসা ছিল অনুসরণীয়। তার একটি উদাহরণ উম্মে খালিদ (রা.) এভাবে তুলে ধরেন—‘একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে কিছু কাপড় নিয়ে আসা হয়। তার মধ্যে কিছু কালো নকশি করা ছোট চাদর ছিল। তিনি বলেন, আমরা এগুলো পরব, তোমাদের অভিমত কী? উপস্থিত সবাই চুপ থাকল। তারপর তিনি বলেন, উম্মু খালিদকে আমার কাছে নিয়ে এসো। তাকে বহন করে আনা হলো। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজের হাতে একটি চাদর নিলেন এবং তাকে পরিয়ে দিলেন। এরপর বলেন, এটি তুমি পুরাতন করো ও ছিঁড়ে ফেলো, অর্থাৎ তুমি বহুদিন বাঁচো। ওই চাদরে সবুজ অথবা হলুদ রঙের নকশি ছিল। তা দেখে তিনি বলেন, হে খালিদের মা! এটি কত সুন্দর! (বুখারি, হাদিস : ৫৮২৩)

মহান আল্লাহ আমাদের সন্তানদের প্রতি যথাযথ যত্নবান হওয়ার তাওফিক দান করুন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top