সকল মেনু

পাপিয়ার ‘পাপের তথ্য’ জানতে ওয়েস্টিন হোটেলকে দুদকের চিঠি

হটনিউজ ডেস্ক:

ব্লাকমেইল, প্রতারণা ও অবৈধ অস্ত্র রাখার অভিযোগে গ্রেফতার বহিষ্কৃত যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামীমা নুর পাপিয়া ওরফে পিউ সম্পর্কে তথ্য জানতে ওয়েস্টিন হোটেলে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের উপ-পরিচালক শাহীন আরা মমতাজ সোমবার বিকালে অভিজাত হোটেল কর্তৃপক্ষকে এ চিঠি দেয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের পরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য জানান, চিঠিতে ওয়েস্টিন হোটেলে পাপিয়া এ পর্যন্ত কতদিন অবস্থান করেছেন এবং সেখানে কত টাকা বিল দিয়েছেন সেটা জানতে চাওয়া হয়েছে। এছাড়া পাপিয়ার কাছে আসা ব্যক্তি ও হোটেলে অবস্থানকারীদের বিষয়েও তথ্য চাওয়া হয়েছে। অনুসন্ধানের স্বার্থে প্রয়োজনে ওই সময়ের ভিডিও রেকর্ডও চাওয়া হতে পারে।

সূত্র জানায়, কারা ওই আস্তানায় যাতায়াত করত তাদের নামসহ পদ-পদবি উল্লেখ করে আগামী ৫ কার্যদিবসের মধ্যে দুদকে তথ্য দেয়ার কথা বলা হয়েছে চিঠিতে। এর আগে ২২ ফেব্রুয়ারি বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতারের পর আলোচনায় এলে পাপিয়ার অবৈধ সম্পদের খোঁজে নামে দুদক। দুদকের উপ-পরিচালক শাহিন আরাকে এ বিষয়ে দায়িত্ব দেয়া হয়।

গোয়েন্দা সংস্থার জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে যাদের নাম পাওয়া গেছে সেই তালিকাসহ পাপিয়াকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তার আলোকে একটি প্রতিবেদন তৈরির পর সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে দাখিল করা হয়েছে। তদন্ত শেষে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে ওই কর্মকর্তা জানান। ওই কর্মকর্তা বলেন, অনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি তার আস্তানায় আসা ব্যক্তিদের গোপন ভিডিও সংগ্রহ করে তা প্রকাশের ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকাসহ বিভিন্ন কাজ বাগিয়ে নিতেন।

এদিকে দুদক সূত্রে জানা গেছে, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আয়-ব্যয়ের হিসাব বড় ভূমিকা রাখে। তাই হোটেলে তার ব্যয়ের বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়েছে। পাপিয়ার অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়ে রোববার অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দেয় দুদক।

দুদক বলছে, পাপিয়ার সম্পদ অনুসন্ধানের পাশাপাশি তিনি কাদের সহায়তায় এসব সম্পদ অর্জন করেছেন তাও খতিয়ে দেখা হবে।

উল্লেখ্য, গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলের প্রেসিডেন্ট স্যুট নিজের নামে কয়েক মাস ধরে বুক করে অবৈধ নারী, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা এবং চাঁদাবাজিসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছিলেন শামীমা নূর পাপিয়া। র্যা ব বলছে, গত তিন মাসে শুধু ওই হোটেলেই পাপিয়া বিল দিয়েছেন এক কোটি ৩০ লাখ টাকা। হোটেলটির বারে তিনি প্রতিদিন বিল দিতেন প্রায় আড়াই লাখ টাকা। এই হোটেলের প্রেসিডেন্সিয়াল সুইট বরাদ্দ ছিল পাপিয়ার।

ওয়েস্টিন হোটেলের ২২ তলায় সবচেয়ে বিলাসবহুল প্রেসিডেন্সিয়াল সুইটটিতে থাকতে বহু টাকা গুনতে হতো পাপিয়াকে। চার বেডরুমের ওই সুইটের প্রতিরাতের ভাড়া সাধারণভাবে দুই হাজার ডলারের মতো।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পাপিয়া তার অতিথিদের প্রথমে নিয়ে যেতেন ওয়েস্টিনের লবিতে। পরে লাঞ্চ বা ডিনার শেষে সেখান থেকে নিয়ে যেতেন তার নামে বরাদ্দকৃত বিলাসবহুল প্রেসিডেন্সিয়াল সুইটে।

২৩ তলাবিশিষ্ট ঢাকা ওয়েস্টিন হোটেলের লেভেল-২২ এ ১ হাজার ৪১১ বর্গফুট জায়গাজুড়ে বিলাসবহুল প্রেসিডেন্সিয়াল সুইট। সেখানে অতিথিদের সুন্দরী তরুণীদের সঙ্গে কিছুক্ষণ বৈঠক করতেন পাপিয়া।

এর পর পছন্দসই তরুণীকে নিয়ে গোপন কক্ষে প্রবেশ করতেন ভিআইপিরা।

শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে প্রথম অনলাইনভিত্তিক যৌন ব্যবসার প্ল্যাটফর্ম ‘এসকর্ট’ গড়ে তোলেন যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ। এটি গড়ে তুলতে রাজনীতিকে তিনি ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন।

এখান থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সুন্দরী তরুণী সরবরাহ করা হতো। কয়েক বছর আগে ‘এসকর্ট’টি গড়ে তোলা হলেও এরই মধ্যে তা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে সারাদেশের বিভাগীয় শহরগুলোয়।

যৌনব্যবসার অনলাইনভিত্তিক সাইট ‘এসকর্ট’ এখনও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় রয়েছে। রিমান্ডের প্রথম দিনেই জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য দিয়েছেন সদ্য বহিষ্কৃত যুব মহিলা লীগ নেত্রী পাপিয়া। এসকর্টের সঙ্গে জড়িত দেহব্যবসায়ী সুন্দরী তরুণী এবং তাদের খদ্দেরদের নামও বলেছে পাপিয়া।

উল্লেখ্য, ২২ ফেব্রুয়ারি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে পালানোর সময় পাপিয়াসহ চার জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। পরের দিন সকালে রাজধানীর ইন্দিরা রোডে পাপিয়ার বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। সেখান থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, পাঁচটি পাসপোর্ট, তিনটি চেক, বেশ কিছু বিদেশি মুদ্রা এবং বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়। অবৈধ অস্ত্র ও মাদক রাখা, জাল টাকা সরবরাহ, মাদক ব্যবসা এবং অনৈতিক কাজের অভিযোগে ইতোমধ্যে তিনটি মামলা করেছে র‌্যাব। এ সব মামলায় পাপিয়া ও তার স্বামী মতি সুমনের ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

আর গ্রেফতার হওয়ার পর প্রতারণা, অবৈধ অর্থ পাচার, জাল টাকা সরবরাহ, মাদক ব্যবসা ও অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে শামীমা নুর পাপিয়াকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে যুব মহিলা লীগ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top