সকল মেনু

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর: প্রাধান্য পাচ্ছে পানি বাণিজ্য প্রতিরক্ষা ও কানেকটিভিটি

হটনিউজ ডেস্ক:

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরকালে অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টন, বাণিজ্য সহযোগিতা, কানেকটিভিটি, প্রতিরক্ষা এবং রোহিঙ্গা ইস্যু প্রাধান্য পাবে। সফরকালে ৫ অক্টোবর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা। এ সময় দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা চুক্তি সই এবং নতুন নতুন ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩ থেকে ৫ অক্টোবর ভারত সফর করবেন। এ সফরের উদ্দেশ হল, ৩-৪ অক্টোবর দিল্লিতে অনুষ্ঠেয় ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের অধীন ইন্ডিয়া ইকোনমিক সামিটে যোগদান করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪ অক্টোবর এ সামিটে বক্তব্য রাখবেন। সম্মেলনের থিম হল- ‘ইনোভেটিং ফর ইন্ডিয়া, স্ট্রেংথেনিং সাউথ এশিয়া, ইম্প্যাক্টিং দ্য ওয়ার্ল্ড।’ প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামনিয়াম জয়শঙ্কর সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। তবে শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে কী কী বিষয় অধিক গুরুত্ব পাবে সে সম্পর্কে এখনই কিছু প্রকাশ করেনি কর্তৃপক্ষ।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফরকালে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব বিষয়ে আলোচনা হবে। তবে আমরা এখনও পর্যন্ত কোনো অগ্রাধিকার ইস্যু ঠিক করিনি। অগ্রাধিকার ইস্যু সফরের আগে জানিয়ে দেয়া হবে।’ এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত আর কিছু বলেননি। তবে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, বাংলাদেশ পানি বণ্টন, বাণিজ্য সহযোগিতা, কানেকটিভিটি ও রোহিঙ্গা ইস্যু অগ্রাধিকার পাবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি দ্রুত সম্পাদনের জন্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি আহ্বান জানাতে পারেন। ৭ বছর পর গত মাসে ঢাকায় যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিস্তার পানি প্রবাহের সর্বশেষ তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ভারতের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং ২০১১ সালে বাংলাদেশ সফরে আসার আগেই তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির খসড়া নিয়ে দুই পক্ষ একমতে পৌঁছে। তবে চুক্তির বিরোধিতা করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এবার দিল্লি সফরকালে তিস্তা চুক্তি দ্রুত সম্পাদনের কথা বলবেন প্রধানমনন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের পূর্বে ভারতের নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল করম্ভীর সিং শুভেচ্ছা সফরে ঢাকায় আসতে পারেন। এ সফরের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে। বাংলাদেশে চীনের ব্যাপক মাত্রায় সামরিক সহযোগিতা থাকায় ভারত এখন এ খাতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ২০১৭ সালে ভারত সফরকালে দুই দেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতার অংশ হিসেবে ভারত ৫০ কোটি ডলার বাংলাদেশকে ঋণ দেবে বলে সমঝোতা স্মারক সই হয়।

শর্ত অনুযায়ী, ঋণের এ অর্থে ভারত থেকে সামরিক সরঞ্জাম কিনবে বাংলাদেশ। জয়শঙ্কর সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরকালে দুই দেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা চুক্তি দ্রুত কার্যকর করার জন্যে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরকালে দিল্লি সামরিক সহযোগিতার প্রতি অধিক গুরুত্বারোপ করতে পারে। শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরকালে নিরাপত্তা, জ্বালানি, যোগাযোগ, উন্নয়ন সহযোগিতা, পরিবেশ, শিক্ষা, অবকাঠামো উন্নয়ন, সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য, সুনীল অর্থনীতি, পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার, মহাকাশ গবেষণা এবং সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

হিন্দুস্তান টাইমস এক প্রতিবেদনে বলেছে, শেখ হাসিনা তার আসন্ন ভারত সফরকালে আসামে নাগরিকপঞ্জির ব্যাপারে তার উদ্বেগের কথা জানাতে পারেন। কারণ, নাগরিক তালিকা থেকে বাদ পড়াদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শনিবার ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ‘বাংলাদেশের তরফে ভারতের নাগরিকপঞ্জি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফরকালে আলোচনার কিছু নেই। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর আমাদের বলে গেছেন, এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ ইস্যু। ফলে এ নিয়ে আমাদের আলোচনার কিছু নেই।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জুলাইয়ে চীনে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। ওই সম্মেলনে অংশগ্রহণের পাশাপাশি তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বেশ কিছু চুক্তি সই হয়েছে। এবার ইন্ডিয়া ইকোনমিক সামিটে যোগদানের সুযোগে ভারতের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক এবং সেখানে নতুন কিছু চুক্তি সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ বরাবরই দুই বড় প্রতিবেশী ভারত ও চীনের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলে। প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফর দৃশ্যত সেই ধারাবাহিকতার অংশ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top