সকল মেনু

যেসব শর্ত মানলে মিয়ানমারে ফেরত যেতে রাজি রোহিঙ্গারা

হটনিউজ ডেস্ক:

আজ বৃহস্পতিবার প্রায় সাড়ে তিন হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর কথা রয়েছে। জাতিসংঘসহ নানা সংস্থার নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগে সে লক্ষ্যে যৌথভাবে কাজ করছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার।

এর আগে ২০১৮ সালের ২৩ জানুয়ারি প্রত্যাবাসন শুরুর কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি।

তবে ২২ আগস্টে রোহিঙ্গা প্রতাবাসনের খবর শোনার পর থেকেই থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে রোহিঙ্গা শিবিরে। মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাচ্ছেন না শরণার্থীরা।

বিশেষ করে আজ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের তালিকায় যাদের নাম রয়েছে, তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এমন খবরই প্রকাশ হয়েছে।

নিজ ভূমিতে কেন ফিরতে চাইছে নাম এমন প্রশ্নে সাংবাদিকদের রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, মিয়ানমার তাদের দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন করতে চায না তারা।

এ বিষয়ে খিন মং নামের উখিয়ায় ১৩ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে জানান, প্রত্যাবাসনের তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তারা কেউই ফেরত যেতে চান না।

কারণ হিসেবে প্রথমে তিনি বলেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শিবিরের পরিস্থিতি এ মুহূর্তে স্বাভাবিক। তারা এখানেই বেশ ভালো আছেন। যেখানে তাদের ঘরবাড়ি পুড়ে ছাই করে ফেলা হয়েছে, সেখানে নতুন করে জীবন শুরু করতে ভয় পাচ্ছেন তারা।

খিন মং রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ের পক্ষে কাজ করা সংগঠন রোহিঙ্গা ইয়ুথ অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা।

বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি আরও জানান, ইউএনএইচসিআরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জোর করে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সে ভরসাতেই ফেরত না যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছেন রোহিঙ্গারা।

রোহিঙ্গাদের ভেরিফিকেশন কার্ড দেবে মিয়ানমার সরকার এমন প্রসঙ্গ তুললে খিন মং বলেন, এতে বিশেষ আগ্রহ নেই রোহিঙ্গাদের। কেননা এমন কার্ড অনাগরিকদের দিয়ে থাকে মিয়ানমার সরকার। এমন পরিস্থিতিতে কার্ডটি তাদের কাছে তেমন একটা মূল্য রাখে না।

তিনি বলেন, মিয়ানমারে ফেরত যেতে কয়েকটি শর্ত বা দাবি রয়েছে রোহিঙ্গাদের। এদের মধ্যে প্রথমটি হলো, মিয়ানমারের বৈধ ও পূর্ণ নাগরিকত্বের স্বীকৃতি। তা মিললেই প্রত্যাবাসনে আগ্রহী হয়ে উঠবেন বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা। আরও যে কয়টি শর্ত রয়ে ছে তাদের- মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। রোহিঙ্গাদের বসতবাড়ি ফিরিয়ে দিতে হবে। একইসঙ্গে তাদের ঘরবাড়িসহ যেসব সম্পত্তি অন্যান্যদের দখলে রয়েছে তার সবই ফেরত দিতে হবে।

আর এসব দাবি নিশ্চিত হলেই স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরতে রাজি হবেন রোহিঙ্গারা।

একই ধরণের কথা জানিয়েছেন প্রত্যাবাসনের তালিকায় থাকা রোহিঙ্গা শিবিরের আরও দুই বাসিন্দা।

খিন মংয়ের এসব বক্তব্যে সহমত পোষণ করলেও মিয়ানমারে ফেরত যাওয়া প্রসঙ্গে মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন তারা।

পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে এক রোহিঙ্গা শরণার্থী জানান, খিন মংয়ের উল্লিখিত দাবিগুলো মিয়ানমার সরকার মেনে না নিলে সেখানে ফেরত যেতে চান না তাদের কেউ।

সেসব বিষয় নিশ্চিত করলে এখনই তারা বাংলাদেশ ছাড়তে রাজি বলে মন্তব্য করেন করেকজন শরণার্থী।

এদের মধ্যে একজন বলেন, আমাদের রোহিঙ্গা হিসেবে মেনে নিলে, নাগরিকত্ব দিলে আমরা সেখানে যাব। এ ছাড়া আমাদের যা যা ক্ষতি হয়েছে সেখানে, সেসব পুষিয়ে দিতে হবে। এছাড়া আর সেখানে গিয়ে লাভ কি! সবচেয়ে বড় কথা- আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করলে আমরা রাখাইনে রাজ্যে ফিরে যাব না।

নিজ ভাষায় সেই রোহিঙ্গা বলেন, বিহানে দিলে সন্ধ্যায় যাইয়ুম। অহন দিলে অহন যাইয়ুম।

এদিকে মিয়ানমারে স্বেচ্ছায় ফেরত যেতে চান কিনা, প্রত্যাবাসিত তালিকাভুক্তদের এমন প্রশ্ন করেছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন, ইউএনএইচসিআরসহ সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিরা।

তাদের অনেকেই ভয়ে সাক্ষাৎকার দিতে যাননি বলে জানা গেছে। বিষয়টি নিয়ে বেশ রোহিঙ্গারা বেশ আতঙ্কিত বলে জানিয়েছেন এক শরনার্থী।

এদিকে বুধবার রোহিঙ্গাদের এমন আতঙ্কের বিষয়ে মিয়ানমার এবং বাংলাদেশে কর্মরত ৬১টি স্থানীয়,জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। সেখানে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, স্বেচ্ছা ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিশ্চিতের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

এদিকে আজ বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কথা থাকলেও বেলা ১১টা পর্যন্ত তা শুরু হয়নি বলে জানা গেছে। তবে তৃতীয় দিনের মতো তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার চলছে।

এর আগে গত দুদিনে ২৩৫ পরিবারপ্রধানের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়।

শালবাগান ক্যাম্প ইনচার্জ মো. খালেদ হোসেন জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তবে এখনও প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি।

জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক সংস্থাসহ (ইউএনএইচসিআর) বিভিন্ন এনজিওর সমন্বয়ে এ কার্যক্রম চলবে।

প্রসঙ্গত ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। কক্সবাজার, উখিয়া ও টেকনাফে বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে প্রায় তিন বছর ধরে তার অবস্থান করছেন।

সূত্র: বিবিসি

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top