সকল মেনু

কাজ নেই, খাদ্য সংকট

হটনিউজ ডেস্ক:
দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করলেও বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ দুর্দশা কমেনি। বন্যা উপদ্রুত এলাকায় মানুষের হাতে কাজ ও ঘরে খাবার না থাকায় চরম খাদ্য সংকটে পড়েছেন তারা। সরকারি ত্রাণ সহায়তার পাশাপাশি বেসরকারী বিভিন্ন সংগঠন ও সাহায্য সংস্থা বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ তৎপরতা শুরু করলেও তা বিপুল সংখ্যক বন্যা কবলিত মানুষের জন্য একবারেই অপ্রতুল। গত ২৪ ঘন্টায় ফুলবাড়ি উপজেলায় সাথী (৩) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বন্যায় জেলায় এ পর্যন্ত পানিতে ডুবে ১৭ শিশুসহ ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে উলিপুর উপজেলায় ৯ শিশুসহ ১১ জন, চিলমারী উপজেলায় ৬ শিশু, রৌমারী উপজেলায় ১ জন, রাজিবপুর উপজেলায় ১ শিশু ও কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় ১ জন। সরকারি হিসেবে কুড়িগ্রামে চলতি বন্যায় ২ লাখ ৩৯ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নলকূপের ক্ষতি হয়েছে সাড়ে ৯ হাজার। জেলা প্রশাসন থেকে গো-খাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এছাড়াও বন্যার কারণে ভিজিএফ বরাদ্দ এক মাসের জায়গায় টানা তিনমাস ধরে পাবেন বন্যা কবলিতরা।

বগুড়া : বগুড়ায় দুটি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। জেলার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনটের পর এবার নিমজ্জিত হলো গাবতলী উপজেলা। এখন ৪টি উপজেলার প্রায় ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। শুক্রবার থেকে শনিবার বিকাল পর্যন্ত গাবতলী উপজেলার প্রায় ৪৪টি গ্রাম, ২২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এতে করে নতুন করে সাড়ে ১৬ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। জেলায় সরকারিভাবে ৪ জনের কথা বলা হলেও ৫ জনের মৃত্যু সংবাদ পাওয়া গেছে। গতকাল যমুনা ও বাঙালি নদীতে পানি কমার কারণে লোকালয়ে ঢুকে পড়া পানিও কিছুটা কমেছে। বাঙালী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলায় আরও একটি উপজেলা গাবতলীতে নতুন করে বন্যা দেখা দিয়েছে। এই উপজেলার বেশ কিছু ফসলী জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। নিমজ্জিত হয়েছে ২১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি উচ্চ বিদ্যালয়। এই উপজেলায় বন্যার পানিতে পড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। বন্যাজনিত কারণে এ পর্যন্ত জেলার তিন উপজেলায় গত কয়েকদিনে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সারিয়াকান্দি উপজেলায় সাপে কেটে ১ জন, সোনাতলা উপজেলায় ২ জন এবং গাবতলী উপজেলায় পানিতে ডুবে ১জনের মৃত্যু হয়েছে। বগুড়ার বন্যাকবলিত সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, ধুনট ও নতুন করে গাবতলী উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার গোচারণ ভুমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে গো-খাদ্য সংকট। বগুড়া জেলা প্রাণী সম্পদ দফতরের কর্মকর্তা ডা. রফিকুল ইসলাম তালুকদার জানান, গাবতলী উপজেলা নতুন করে প্লাবিত হওয়ায় গাবতলী উপজেলায় নেপিয়ার ঘাসের চাষ হয়ে থাকে। এখানে ৪০ একর নেপিয়ার ঘাস পানিতে ঢুবে গেছে। এদিকে বগুড়ার ধুনটে বন্যার পানিতে ডুবে দুলালী খাতুন (২) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বিকেলে উপজেলার নিমগাছী ইউনিয়নের বেড়েরবাড়ী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শিশু ওই গ্রামের চা বিক্রেতা দুলু মিয়ার মেয়ে।

সিরাজগঞ্জ : যমুনার পানি ফের কমতে শুরু করলেও এখনো জেলার বন্যা কবলিতদের জন্য যমুনা নদী অভিশাপ হয়ে রয়েছে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে নদী ভাঙনও শুরু হয়েছে। গতকাল চৌহালী উপজেলার খাসপুকুরিয়া ও এনায়েতপুরে নদী ভাঙনে বেশ কয়েকটি বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অন্যদিকে এখনো হাজার হাজার ঘরবাড়ি পানির নিচে থাকায় বসতভিটার খুটে পড়ে ঘর ভেঙে পড়তে শুরু করেছে।
দুুই সপ্তাহের বেশি পানিবন্দী থাকায় নিম্নআয়ের মানুষগুলো অসহায়ের মধ্যে দিনযাপন করছে। ইতোমধ্যে শুকনো খাবারসহ শিশু খাদ্য-বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বানভাসির অর্ধেক মানুষের কাছেও সরকারি সহায়তা পৌঁছেনি।

নীলফামারী : নীলফামারীতে তিস্তা নদীর বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। গতকাল ছয়টায় তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েণ্টে বিপদসীমার ২৫ সেণ্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। নদীর পানি বিপদসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও বাড়া-কমার মধ্যে থাকায় দূর্ভোগ কমেনি তিস্তা পাড়ের মানুষের। ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ময়নুল হক বলেন, ‘তিস্তার পানি বিপদ সীমার নীচে নামলেও বাড়া-কমার মধ্যে রয়েছে। ফলে দূর্ভোগ কমছে না বন্যাকলিত মানুষের।

গাইবান্ধা : গত দু’দিন থেকে কমতে শুরু করেছে গাইবান্ধা জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, তিস্তা ও করতোয়ার পানি। জেলার সাত উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা এখনো পানিতে তলিয়ে থাকায় মানুষের ভোগান্তি যেমন বেড়েই চলেছে তেমনি নষ্ট হতে চলেছে পানিতে তলিয়ে থাকা আবাদি জমির ফসল, পাট ও বীজতলা। গাইবান্ধা কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী জেলার ১৪ হাজার ২১ হেক্টর জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। এর মধ্যে ৬ হাজার ৬১৯ হেক্টর পাট, ৩ হাজার ১৯০ হেক্টর আউশ ধান, ২ হাজার ৮৮১ হেক্টর বীজতলা, ১ হাজার ১৭৭ হেক্টর শাকসবজি এবং ১৫৪ হেক্টর জমির অন্যান্য ফসল রয়েছে।

জামালপুর : দ্বিতীয় দফায় যমুনা নদীর পানি বাড়ার পর আবারও কমতে শুরু করায় জামালপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হচ্ছে। পানি কমতে শুরু করলেও এখনো চরম দুর্ভোগের মধ্যে আছে বানভাসি মানুষ। জামালপুরের সাত উপজেলায় টানা ১৬ দিন ধরে যমুনার পানি বিপদসীমার ওপরে থাকায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিনযাপন করছে বন্যা কবলিতরা। পানি বিপদসীমার নিচে নেমে না আসায় এখনো বেশিরভাগ বসতবাড়ি বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। বাড়িতে ফিরতে না পেরে আশ্রয় কেন্দ্রে থাকলেও আয়ের পথ বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবন কাটছে তাদের। দুর্গত এলাকায় এখনো ত্রাণ সংকট রয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তা পেলেও তা ফুরিয়ে যাওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে দিন কাটছে বন্যার্তদের। চলতি বন্যায় জামালপুরে পানিবন্দী হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ১৩ লাখ মানুষ। সেইসাথে বন্যার পানির তোড়ে ভেঙ্গে গেছে প্রায় ৫৩ হাজার বসতবাড়ি, বেশিরভাগ আঞ্চলিক সড়ক। বন্যার কারনে ১১ দিন ধরে দেওয়ানগঞ্জ লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। জেলা প্রশাসনের হিসেব অনুযায়ী এবারের বন্যায় পানিতে ডুবে এবং সাপের কামড়ে জেলায় ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top