সকল মেনু

সিপিডির দুই দিনব্যাপী জাতীয় সম্মেলন ও সাংস্কৃতিক উৎসব

হটনিউজ ডেস্ক: রাজধানীর আগারগাঁওয়ের এলজিআরডি অডিটরিয়ামে শুরু হয়েছে ‘প্রান্তিক ও বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীর বৈষম্য, বিচ্ছিন্নতা এবং অধিকার’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী জাতীয় সম্মেলন ও সাংস্কৃতিক উৎসব। সম্মেলনে বেদে, হরিজন, কায়পুত্র, চা জনগোষ্ঠী, বিহারি, ঋষিসহ ৫০ জাতিগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের তিন শতাধিক মানুষ অংশ নেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান।
‘কাউকে পেছনে ফেলে নয়’ স্লোগানে শুরু হওয়া এই সম্মেলন ও সাংস্কৃতিক উৎসবে প্রধান অতিথি অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ‘মাঝে মধ্যে আমরা শুনি চা বাগানে ন্যায্য মজুরির জন্য আন্দোলন হচ্ছে। গারোদের জমি দখল করে নেওয়া হয়েছে। মূলত যাদের টাকা আছে, রাজনৈতিক ক্ষমতা আছে, তারাই এসব শোষণ ও দখলদারিত্বের সাথে জড়িত। এসব সমস্যা সমাধানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে শক্তি অর্জন করতে হবে। ভারতে এসব জনগোষ্ঠীর সমন্বয়ে রাজনৈতিক দল আছে। এভাবে আমাদের দেশেও তাদেরকে দৃশ্যমান হতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভূমির প্রথাগত অধিকারের সুরক্ষা প্রয়োজন। এজন্য আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। বাজেটে এসব মানুষের কথা থাকতে হবে। অন্যথায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের একাত্তরের চেতনা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।’
উদ্বোধনী পর্বের সভাপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও পিপিআরসির নির্বাহী পরিচালক ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘সমাজের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিদের কাছে প্রান্তজনদের সমস্যা-সংকট পৌঁছে দেওয়া আজকের এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য। প্রান্তিক সব সম্প্রদায়কে বিচ্ছিন্নতা কাটিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। একে অপরের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। শোষণ-নির্যাতনের বিষয়টি বুদ্ধিমত্তার সাথে চাহিদা আকারে সাজিয়ে তা মোকাবেলা করতে হবে। প্রান্তিক মানুষদের শক্তির জায়গাগুলো অনুসন্ধান করে সেই অনুযায়ী সম্প্রদায়ের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। তাহলে দৃশ্যমান হওয়া সহজ হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের দেশের উন্নয়ন তৎপরতার মধ্যে বৈষম্য রয়েছে। অথাৎ আমাদের উন্নয়ন তৎপরতায় বিভ্রান্তি রয়েছে। এব্যাপারে সরকারকে নতুন করে ভাবনা চিন্তা করতে হবে।’
সম্মেলনের মূল প্রবন্ধে সেড-এর পরিচালক ফিলিপ গাইন বলেন, ‘বাংলাদেশে সংখ্যাগরিষ্ট বাঙালি ছাড়াও অনেক ধরনের জাতিসত্তার মানুষ আছে। সরকার আগের ২৪ জাতিসত্তার পরিবর্তে এখন ৫০টিকে স্বীকৃতি দিয়েছে। আরো ৫০-এর অধিক জাতিগোষ্ঠীর স্বীকৃতি দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এসব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সঠিক পরিসংখ্যান থাকা দরকার। কিন্তু সরকারিভাবে আমাদের দেশে এর জন্য উদ্যোগ অপর্যাপ্ত। আমরা মধুপুরের ৪৪টি গ্রামে জরিপ করেছি। এক সময় যেখানে সবাই গারো ও কোচ ছিলো সেখানে এখন ৬৫ শতাংশ বাঙালি। এসব গ্রাামে ১১ শতাংশ বাঙালির ভিটেমাটির মালিকানা দলিল আছে আর গারোদের আছে মাত্র চার শতাংশ। বনমামলা মধুপুরের মানুষাক আতংকিত করে রেখেছে। এখানে একজনের নামে ১০০টি পর্যন্তমামলা আছে। হয়েছে। আন্দোলনের সময় কাউকে গুলি করে মারা হয়েছে। কেউ আবার চিরদিনের জন্য পঙ্গুত্ববরণ করেছে। এই ভূমির সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত। আমরা এই প্রন্তিক মানুষদের অধিকার ও সুরক্ষা কীভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারি তা আলোচনা হওয়া দরকার।’
‘হরিজনদের চাকরির জন্য প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে পরিস্কারভাবে ৮০ শতাংশ কোটার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না। চা বাগানে মাতৃমৃত্যুর হার অন্য জায়গার চেয়ে বেশি। কিন্তু কেন? এসব বিষয় নিয়ে আমাদের আলোচনা করছি।’
এসময় আরো বক্তব্য রাখেন সাহিত্যিক হরিশংকর জলদাস, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রামভজন কৈরী, সিপিবির সম্মানীত ফেলো অধ্যাপক রওনক, সিসিডিবি’র নির্বাহী পরিচালক জয়ন্ত অধিকারী, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি অর্ডে ম্যালিয়ট প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের এক ফাঁকে ‘মধুপুর: দ্যা ভ্যানিশিং ফরেস্ট এন্ড হার পিপুল ইন অ্যাগোনি’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধান অতিথি।
এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আইনুন নাহারের সভাপতিত্বে ‘বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পরিচয়, সংস্কৃতি এবং ভাষা’, ইএনএফপিএ-এর কর্মকর্তা মো. শামসুজ্জামানের সভাপতিত্বে ‘প্রান্তিক বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীর জন্য টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন’, এবং ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়–য়ার সভাপতিত্বে ‘প্রান্তিক ও বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক সনদ ও জাতীয় আইন’ নিয়ে তিনটি সমান্তরাল অধিবেশনে বিশেষজ্ঞরা আলোচনা করেন এবং ভুক্তভোগীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
সম্মেলনের প্রথম সন্ধ্যায় ‘সংস্কৃতির মাধ্যমে সাঁওতালদের প্রতিরোধ’ শীর্ষক আলোচনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করেন গারো, সাঁওতাল, আধিবাসী, চা জনগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক দল, তেলেগু যুব সংঘের শিল্পীরা। এর আগে তথ্যচিত্র ‘অরণ্যের আর্তনাদ’ এর উদ্বোধনী প্রদর্শনী ও মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
আগামীকাল শুক্রবার কয়েকটি সমান্তরাল আলোচনা ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার পাশাপাশি ঢাকা ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ হবে এই জাতীয় সম্মেলন ও সাংস্কৃতিক উৎসব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top