সকল মেনু

৩০ হাজার মানুষ মেতে উঠলেন চারা লাগানো উৎসবে

প্রশাসনের উদ্যোগে আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাতটা থেকে আটটা পর্যন্ত ১৫৩টি সড়কে আড়াই লাখ গাছ লাগানো কর্মসূচি পালন করা হয়। সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন এই কর্মসূচিতে। ছবিটি তারাগঞ্জের ইকরচালি এলাকা থেকে তোলা। ছবি: মঈনুল ইসলামসকাল থেকেই আজ খুব আনন্দে ছিলেন রংপুরের তারাগঞ্জবাসী। ঘণ্টাব্যাপী উপজেলাজুড়ে চলল এক অন্য রকম উৎসব। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৩০ হাজার মানুষ যোগ দিলেন এ উৎসবে। লক্ষ্য একটাই, ‘সবুজ তারাগঞ্জ গড়ি’। এই কর্মপরিকল্পনার আওতায় আজ বৃহস্পতিবার ৪৬০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ১৫৩টি রাস্তায় এক ঘণ্টায় আড়াই লাখ গাছের চারা লাগানো হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের আয়োজনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রায় ৩০ হাজার মানুষ সকাল সাতটা থেকে আটটা পর্যন্ত রাস্তার ধারে গাছের চারা লাগান।

ইকরচালী উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী মনিরা খাতুনের চোখে-মুখে ফুটে উঠেছিল গাছের চারা লাগানোর আনন্দ। বলল, ‘আজ ভোরে ঘুম থাকি উঠছি। পাসুন, খুন্তি নিয়া রাস্তায় আসছি। বাঁশিতে ফুঁ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবায় মিলি রাস্তার ধারে গাছ লাগা শুরু করছি। এক ঘণ্টায় মনের আনন্দে ২০-৩০টা করি গাছ লাগাইছি।’

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হাজারো মানুষ মনের আনন্দে গর্ত খুঁড়ে গাছ লাগাচ্ছেন। কেউ গর্ত খুঁড়ছেন, কেউ সেই গর্তে গাছ লাগাচ্ছেন। আম, জাম, কাঁঠাল, আমলকী, পেয়ারা, মেহগনি, বকুল, বাগানবিলাস, রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের গাছের চারা রোপণ করা হয়।
জবদীশ গ্রামের আনসার আলী (৫০) বলেন, ‘বাবা, সকালেই সবাই মিলি ঘুম থাকি উঠছি। হামরা একজন আকেজনক ডাকাছি। কোদাল, খুন্তি নিয়া রাস্তাত যেয়া দাঁড়াইছি। সাতটা বাজতে বাঁশিত ফুঁক দিছে। হামরা সবাই মিলি গাছ লাগা শুরু করছি। এক ঘণ্টা আগত গাছ লাগা শ্যাষ করি দিছি।’
সকাল সাতটায় রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের তারাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সামনে ফিতা কেটে গাছ লাগানো কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার কাজী হাসান আহমেদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রংপুরের জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার, স্থানীয় সরকারের রংপুরের উপপরিচালক সুলতানা পারভিন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আতাউর রহমান, মাহামুদা বেগম, তারাগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিলুফা সুলতানা, আওয়ামী লীগের সভাপতি আতিয়ার রহমান, সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম।
বৃক্ষ রোপণে অংশ নেওয়া শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কৃষকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল বুধবার ১৫৩টি রাস্তায় ট্রাক, ট্রলি, রিকশাভ্যানযোগে আড়াই লাখ গাছের চারা নিয়ে আসা হয় উপজেলায়। আজ সকাল সাতটায় গাছ লাগানোর আহ্বান জানিয়ে তিন দিন ধরে পুরো উপজেলায় মাইকিং করা হয়েছে। আজ ভোর থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত পুরো উপজেলার প্রতিটি মসজিদ থেকে মাইকিং করে ছয়টার মধ্যে গাছ লাগানোর জন্য রাস্তায় যাওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। এ কাজে শৃঙ্খলা বজায় রাখা ও নিরাপত্তার জন্য পুলিশ, আনসার বাহিনীকে রাস্তায় মোতায়েন করা হয়। ওই সময়ে চিকিৎসকের চারটি দলও এলাকাজুড়ে ঘুরে বেড়ায়।

গাছ লাগানো কার্যক্রমে প্রতি ৫০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন করে তত্ত্বাবধায়ক রাখা হয়। তত্ত্বাবধায়কদের কাছে ছিল বাঁশি ও ড্রাম। ঘড়ির কাঁটা সাতটায় পৌঁছামাত্র তত্ত্বাবধায়কেরা বাঁশিতে ফুঁ দিয়ে ড্রাম বাজালে গর্ত খুঁড়ে গাছ রোপণের কাজ শুরু করা হয়। আটটা বাজার সঙ্গে সঙ্গে তত্ত্বাবধায়কেরা বাঁশিতে ফুঁ দিয়ে ড্রাম বাজালে গাছ রোপণের কাজ বন্ধ করা হয়। এভাবে এক ঘণ্টায় ৪৬০ কিলোমিটার এলাকায় আড়াই লাখ গাছের চারা রোপণ করা হয়।
ইউএনও জিলুফা সুলতানা বলেন, এক ঘণ্টায় আড়াই লাখ গাছ লাগিয়ে তারাগঞ্জবাসী স্বপ্নের উদ্যান তৈরি করেছেন। সবার সহযোগিতায় এটা সম্ভব হয়েছে। ‘একতাই বল’ তারাগঞ্জবাসী সেটা প্রমাণ করেছেন। তারাগঞ্জবাসী দেখিয়েছেন, ঐক্য থাকলে যেকোনো ধরনের কাজে সফল হওয়া সম্ভব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top