সকল মেনু

কার্তিকের পূর্ণিমায় বসবে মণিপুরী ‘মহারাসলীলা’

a94d09deea871ea999b9621c445b1f34-5829328a7c55eহটনিউজ২৪বিডি.কম : কার্তিকের পূর্ণিমা তিথিতে প্রতি বছর মৌলভীবাজারের মাধবপুর ও আদমপুরে বসে মণিপুরী সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ‘মহারাসলীলা’। প্রচলিত আছে, ১৭৭৯ সালে মণিপুরের মহারাজা ভাগ্যচন্দ্র স্বপ্নদৃষ্ট হয়ে যে নৃত্যগীতের প্রর্বতন করেছিলেন তাহাই রাসোৎসব নামে পরবর্তীতে পালিতে হয়ে আসছে।

রাতভর রাধাকৃষ্ণের প্রণয়োপখ্যানের রাসলীলা উপভোগ করতে সারাদেশ থেকে হাজারো মানুষ ছুটে আসেন সিলেটে। বর্ণাঢ্য আয়োজন মধ্য দিয়ে আজ সোমবার (১৪ নভেম্বর) মাধবপুর ও আদমপুরে অনুষ্ঠিত হবে মহারাসলীলা উৎসব। এ উপলক্ষে মণিপুরী সম্প্রদায়ের মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। এবারই প্রথমবারের মতো মণিপুরী সম্প্রদায়ের লোকজন আদমপুর এলাকায় পৃথক দুটি স্থানে রাসোৎসব করবে।

মাধবপুর (শিববাজার) জোড়ামণ্ডপে মহারাসলীলা সেবা সংঘের উদ্যোগে বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরীরা ১৭৪তম বার্ষিকী এবং আদমপুর ইউনিয়নের তেতইগাঁও সানাঠাকুর মণ্ডপে রাসোৎসব উদযাপন কমিটির উদ্যোগে মণিপুরী মৈ-তৈ সম্প্রদায়ের লোকজন ৩১তম মহারাস উৎসব উদযাপন করবে।

রাস উৎসব উপলক্ষে উভয় স্থানেই বসবে বিরাট মেলা। মণিপুরী সম্প্রদায়ের লোকজনের পাশাপাশি অন্যান্য জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার লোকজন মেতে উঠবে আনন্দ উৎসবে। সাদাকাগজের নকশায় সজ্জিত মণ্ডপগুলো একটি রাতের জন্য হয়ে উঠবে লাখো মানুষের মিলনতীর্থে।

কমলগঞ্জে প্রায় এক মাস ধরেই চলছে রাসোৎসবের প্রস্তুতি শুরু হয়। মণিপুরী সম্প্রদায়ের কুমারি মেয়েরা রাসলীলায় অংশ নেয়। এ ক্ষেত্রে বাড়িগুলোয় রাসধারী ও রাসলীলার উস্তাদ এনে শিক্ষা দেওয়ার রেওয়াজ প্রচলিত।

মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মাধবপুর জোড়া মণ্ডপ প্রাঙ্গনে শ্রী শ্রী কৃষ্ণের মহারাসলীলা উপলক্ষে সোমবার সকাল ১১টা থেকে গোধূলীলগ্ন পর্যন্ত রাখাল নৃত্য (গোষ্ঠলীলা), সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মতবিনিময় সভা। রাত সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত নট সংকীর্তন, রাত ১১টা থেকে মঙ্গলবার ঊষালগ্ন পর্যন্ত শ্রী শ্রী কৃষ্ণের মহারাসলীলা অনুষ্ঠান হবে।’

মহারাস উদযাপন কমিটির সভাপতি ফালগুনী সিংহ ও সাধারণ সম্পাদক হেমন্ত সিংহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আদমপুর তেতইগাঁও উন্মুক্ত মঞ্চে সোমবার সকাল ১০টায় রাখাল নৃত্য, বিকাল সাড়ে ৫টায় আলোচনা সভা ও গুণীজন সংবর্ধনা, সন্ধ্যা ৭টায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রাত ১১টায় নিপাপালা এবং রাত সাড়ে ১১টায় মহারাসলীলা হবে।

ঢাক-ঢোল, খোল-করতাল আর শঙ্খ ধ্বনির মধ্য দিয়ে শ্রী কৃষ্ণ ও তার সখি রাধার লীলাকে ঘিরে এই একটি দিন বছরের আর সব দিন থেকে ভিন্ন আমেজ নিয়ে আসে কমলগঞ্জবাসীর জন জীবনে। রাসলীলায় মণিপুরী নৃত্য শুধু কমলগঞ্জের নয়, গোটা ভারতীয় উপমহাদেশের নৃত্য কলায় বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে।

উৎসব উপলক্ষে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করছে প্রশাসন। কমলগঞ্জ থানার ওসি বদরুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, মহারাসলীলা উপলক্ষে মাধবপুর ও আদমপুর ইউনিয়নে সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা ও র‌্যাবের টহল জোরদার করা হয়েছে।

১৯২৬ সালে মণিপুরী মেয়েদের রাস নৃত্যে মুগ্ধ হয়েছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। পরে কবিগুরু কমলগঞ্জের নৃত্য শিক্ষক নীলেশ্বর মুখার্জীকে শান্তি নিকেতনে নিয়ে গিয়ে মণিপুরী নৃত্য শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top