সকল মেনু

টাঁকশালে বিপর্যয়ের শঙ্কা কাটেনি

 আছাদুজ্জামান ,হটনিউজ২৪বিডি.কম: Taka1457233300 অর্থনীতির প্রধান বাহন টাকা। বিশেষ কাগজে তৈরি এই টাকা ছাপানো হয় দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন (বাংলাদেশ) লিমিটেডে। প্রতিষ্ঠানটি ‘টাঁকশাল’ নামেই অধিক পরিচিত।

দেশের সব টাকার নোট ছাপানোর এই প্রতিষ্ঠানটি চরম সংকটের মধ্যে রয়েছে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ এই সংকট কেটে যেতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গাজীপুরে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন (বাংলাদেশ) লিমিটেডে ১৯৮৮ সালে টাকা ছাপানো শুরু করে। তখন থেকেই প্রতিষ্ঠানটি জার্মানি থেকে ক্রয় করা কেবিএ-নোটাসিস সুইসের মেশিন দিয়ে চাহিদানুযায়ী টাকা ছাপিয়ে আসছে। দিন দিন অর্থনীতির আকার বড় হওয়ায় টাকার চাহিদা বাড়লেও টাঁকশালে তেমন বাড়েনি মেশিনারির সংখ্যা।

টাকা ছাপানোর কারখানায় নতুন লাইন স্থাপন করা না হলে এবং বর্তমানে চালু মেশিন অকেজো হয়ে পড়লে টাকা ছাপানো বন্ধ হয়ে যাবে। আর এই ধরণের মেশিন মেরামত করার মত কারিগর দেশে না থাকায় বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।

এ প্রসঙ্গে টাঁকশালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জিয়াউদ্দীন আহমেদ হটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো দেশের মেশিন ১৫-২০ বছরের বেশি দিন চলে না। ১৯৮৮ সালে স্থাপনের পর থেকে এখনো টাকা ছাপানোয় ব্যবহার করা হচ্ছে সেই পুরাতন মেশিনগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের যে পরিমাণ টাকা ছাপাতে বলে, তা ছাপানোর মত সক্ষমতা টাঁকশালের নাই। টাঁকশালের সক্ষমতা বাড়ানো দরকার। প্রতিষ্ঠানটি ব্যাপক সংকটের মধ্যে রয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘উৎপাদনে থাকা এই মেশিনগুলো যদি আবারও নষ্ট হয়ে যায় তাহলে তা আর ঠিক করা যাবে না। কারণ মেশিনগুলোর আয়ুষ্কাল শেষ।’

তিনি জানান, টাঁকশালে টাকা ছাপানোর মেশিনের অভাবে যে সংকট দেখা দেয়, তা দূর করতে গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান উদ্যোগ নেন। তিনি ব্যাংক থেকে সাড়ে ১১শ কোটি টাকা ধার দেন। যা দিয়ে ৪টি মেশিন কেনার কাজ চলছে।

টাঁকশালের এমডি আরো জানান, এর আগে ২০১০ সালে ও ২০১৪ সালে বিদেশি প্রতিষ্ঠান কেবিএ-নোটাসিস সুইসের কাছ থেকে ‘ইনটাগলিও প্রিন্টিং মেশিন’ নামে টাকা ছাপানোর দুটি মেশিন কেনা হয়। ২০১০ সালে কেনা মেশিনটির মূল্য প্রায় ১২৪ কোটি টাকা ও ২০১৪ সালে কেনা মেশিনটির দাম ১৪২ কোটি টাকা। মেশিন বাড়লেও লাইন বাড়েনি। এসব মেশিনও চাহিদানুযায়ী টাকা ছাপাতে মোটেও যথেষ্ট না।

জিয়াউদ্দীন আহমেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চাহিদা অনুযায়ী টাকা ছাপানোর প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি মাথায় রেখে নতুন চারটি মেশিন কেনার কাজ পুরোদমে চলছে। কেবিএ-নোটাসিস সুইসের কাছ থেকে ‘ইনটাগলিও প্রিন্টিং মেশিন’ নামের টাকা ছাপানোর মেশিনই ক্রয় করা হচ্ছে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ এসব মেশিনে টাকা ছাপানো শুরু করা যাবে। তবে নতুন মেশিন চালু না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্টদের দুশ্চিন্তার কমতি নেই।

প্রায় ৮০০ কর্মকর্তা-কর্মচারীর এই প্রতিষ্ঠানে সব কর্মই প্রিন্টিং মেশিন কেন্দ্রিক। মেশিনের কোনো যন্ত্রাংশ নষ্ট হলে পুরো ছাপার কাজ বন্ধ হয়ে যায়। আর এসব মেশিনের যন্ত্রাংশ ওই কোম্পানি ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। এসব যন্ত্রাংশ বিদেশ থেকে কিনে আনা স্বল্প সময়ে সম্ভব নয় বলে টাঁকশাল সূত্রে জানা যায়।

১৯৮৮ সালের আগে টাকার নোট বিদেশ থেকে ছাপিয়ে আনা হতো। টাঁকশাল চালু হওয়ার পর প্রথম বছর ২৬ কোটি ৪৩ লাখ নোট ছাপানো হয়। আর গত বছর ছাপানো হয় প্রায় ১১০ কোটি লাখ নোট। নোট ছাপানোর পরিমান কয়েক গুণ বাড়লেও সে তুলনায় বাড়েনি ছাপা মেশিন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১০ টাকা থেকে ১,০০০ টাকা মূল্যমানের নোট ছাপানোর কাজ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর এক, দুই ও পাঁচ টাকার নোট ও ধাতব মুদ্রা সরকারি হিসেবে বের করে অর্থ মন্ত্রণালয়। নোট ছাপানোর কাজটি করে একমাত্র টাঁকশাল। তবে কয়েন বা ধাতব মুদ্রাগুলো জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে তৈরি করে আনা হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top