১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫, নিরাপদনিউজ,ওবাইদুল হক আবু চৌধুরী,বিশেষ প্রতিবেদক: সীমান্ত উপজেলা উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোরানির গরু বিতরণের পরিকল্পনা নিয়ে গোপন বৈঠক করেছে জঙ্গি সংশ্লিষ্ট কতিপয় রোহিঙ্গা নেতারা। রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) প্রশিক্ষপ্রাপ্ত শতাধিক রোহিঙ্গা জঙ্গি এ দুটি শরণার্থী ক্যাম্পে নতুন করে সংগঠিত হওয়ার লক্ষ্যে কোরবানির ঈদকে হাতে নিয়েছে। নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দুটি ক্যাম্পে কর্মরত কয়েকটি এনজিওর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য থেকে অনুদানের বিপুল অর্থ বরাদ্দ ইতিমধ্যে হাতে পেয়েছে জঙ্গি সংশ্লিষ্ট রোহিঙ্গা নেতারা ।
সম্প্রতি কক্সবাজার শহরের কালুর দোকান ও খুরুশকুল সেতু এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুই রোহিঙ্গা জঙ্গিকে আটক করেছে র্যাব। তাদের কাছ থেকে বিপুল অস্ত্র, গুলি ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক দুই রোহিঙ্গা জঙ্গি দিয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। র্যাবকে দেওয়া তথ্যে তারা জানিয়েছে, ৪ বছর আগে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে তারা চট্টগ্রামের পটিয়ায় অবস্থান নেয়।
সেখান থেকে কক্সবাজার শহরে আসে পাঁচ-ছয় মাস আগে। এই দু’জন ধরা পড়ার পর কুতুপালং শরনার্থী শিবিরে অবস্থানকারী রোহিঙ্গা জঙ্গিদের মধ্য দেখা দেয় আতংক। একাধিক গোপনে সংগঠিত হওয়ার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। আটক ব্যক্তিরা হলো- মিয়ানমারের আকিয়াব জেলার মংডু শহরের উকিলপাড়ার মোহাম্মদ ইউনুছ ও মংডু শহরের জামবইন্না এলাকার মোহাম্মদ রফিক।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, আটক ২ ব্যক্তি আরএসও প্রশিক্ষিত জঙ্গি। তারা বিস্ফোরক তৈরিতে দক্ষ। বাংলাদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গা জঙ্গিদের সংগঠিত করে পাহাড়ি এলাকায় সশস্ত্র সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য তারা তৎপরতা চালাচ্ছে। এই জঙ্গি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আরএসওর এক অংশের কমান্ডার আফগানিস্তান ফেরত মুজাহিদ মাস্টার আইয়ুব। এদিকে কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে সরকারিভাবে তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা ১৩ হাজার। অথচ এই ক্যাম্পে তালিকাবহির্ভূত আরও এক লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী অবস্থান করছে।
এ রোহিঙ্গাদের ওপর সরকারি কোনো সংস্থার নিয়ন্ত্রণ নেই। তাদের চলাফেরা ও গতিবিধির ওপর কারও কোনো নজরদারিও নেই। এই সুযোগ গ্রহণ করছে রোহিঙ্গা জঙ্গিরা। তারা গোপনে ক্যাম্পে সংগঠিত হয়ে নিয়মিত বৈঠক করছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এমনকি রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শতাধিক রোহিঙ্গা জঙ্গি নিয়ন্ত্রণ করছে এই শরণার্থী ক্যাম্প।
কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক রোহিঙ্গা জানান, রোহিঙ্গাদের আর্থিক ও মানবিক সহায়তার কথা বলে ইতিমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে ইত্তেহাদুল জমিয়াতুল রোহিঙ্গা, রোহিঙ্গা ভয়েস, শরিকা আল হওয়াদি নামে কয়েকটি রোহিঙ্গা সংগঠন ৪৫০ কোটি টাকা পেয়েছে। এই টাকা গোপনে জঙ্গি তৎপরতার পেছনে ব্যয় হচ্ছে। সূত্র জানায়, ইত্তেহাদুল জমিয়াতুল রোহিঙ্গার সভাপতি আমেরিকা প্রবাসী ড. ওয়াকার উদ্দিন।
উখিয়ায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও সংগ্রাম কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক জঙ্গিদের সহযোগিতা দিচ্ছে তুরস্কের একটি সংস্থা ইনসামা ইয়ারদিনলাফ, মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক এনজিও মুসলিম এইড, ইসলামিক রিলিফ, ইমাম মুসলিম ও সমন্বিত মানবিক উদ্যোগ নামে কয়েকটি সংস্থা। এসব সংস্থার নামে রোহিঙ্গাদের মাঝে কোরবানির পশু এবং ত্রাণসামগ্রীও বিতরণ করা হয়।
উখিয়া থানার ওসি জহিরুল ইসলাম খান জানিয়েছেন, কুতুপালং শরনার্থী ক্যাম্পটি অরক্ষিত হওয়ায় আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ক্যাম্পে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাবের কারনে কোন সময়ে কে আসছে, কে যাচ্ছে, সেটাও জানা সম্ভব নয়। এরপর ও গোপন সূত্রে কোনো খবর পাওয়া গেলে পুলিশ অভিযান চালায়। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন নিশ্চিত মানবপাচারকারী সহ বিভিন্ন মামলার চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে আটক করেছে পুলিশ। ভবিষ্যতে রোহিঙ্গা অপরাধীদের ব্যাপারে কোন অভিযোগ পেলে অবশ্যই অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।