ঢাকা, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫, নিরাপদনিউজ : প্রাথমিকের পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর কাজ আগামী সপ্তাহ থেকেই শুরু হচ্ছে। সমস্ত জটিলতার অবসান ঘটিয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ও বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতি আগামী সপ্তাহ থেকে অর্থাৎ ৮ থেকে ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বই ছাপানোর কাজ শুরু করবে বলে বাসসকে জানায়।
এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ন চন্দ্র পাল বলেন, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের ঐকান্তিক চেষ্টায় প্রাথমিকের বই ছাপানোর কার্যাদেশ পাওয়া ২২ মূদ্রণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমস্ত জটিলতার অবসান ঘটানো সম্ভব হয়েছে। এখন কার্যাদেশ পাওয়া এ প্রতিষ্ঠানগুলো পিজি (পারফরমেন্স গ্যারান্টি) লেটার দিবে। তা গ্রহণের পর তাদের সঙ্গে বই ছাপানোর চুক্তি হবে। চুক্তির পরই প্রতিষ্ঠানগুলো বই ছাপানোর কাজ শুরু করতে পারবে।
তিনি বলেন, ৯৮টি লটে প্রাথমিকের ১০ কোটি ৮৭ লাখ ৪০ হাজার ১১টি বই ছাপানোর কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। ৯৮টি লটের জন্য ২২ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ৯৮ চুক্তি সম্পাদিত হবে।
এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, কার্যাদেশ দেয়ার ২৮ দিনের মধ্যে চুক্তিগুলো সম্পন্ন করার বিধান রয়েছে। কিন্তু মানসম্মত বই ছাপানোর বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের বিভিন্ন শর্তের কারণে কার্যাদেশ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যে মতবিরোধ দেয়া দিয়েছিল তা নিরসন করতে প্রায় একটি সপ্তাহ নষ্ট হয়ে যায়। তাই আর যেন সময় নষ্ট না হয় সে জন্য দ্রুত চুক্তিগুলো সম্পন্ন করে আগামী সপ্তাহ থেকেই অর্থাৎ ৮ থেকে ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ছাপার কাজ শুরু করা হবে।
বাংলাদেশ মূদ্রণ শিল্প সমিতির সভাপতি শহীদ সেরনিয়াবাত বলেন, পাঠ্যপুস্তকের পান্ডুলিপি ও এনসিটিবি’র অনুমতি পাওয়া মাত্র তারা আর ১ মিনিটও দেরি না করে, ছাপার কাজ শুরু করে দিবে।
তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রীকে তারা কথা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেন ২০১৬ সালের পয়লা জানুয়ারি প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে পারেন, সে লক্ষ্যেই তারা যে সময়গুলো নষ্ট হয়েছে তা পুষিয়ে দিতে ডে-নাইট কাজ করবেন।
শিগগিরই পিজি লেটার দেয়া হবে জানিয়ে সভাপতি বলেন, চুক্তি সম্পাদন প্রক্রিয়া চলাকালীন যদি এনসিটিবি কার্যাদেশ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে পাঠ্যপুস্তকের পান্ডুলিপির সিডি দিয়ে দেয় তাহলে তারা ছাপার কাজ শুরু করে দিতে পারে।
তিনি বলেন, এ কাজের জন্য শ’ শ’ কোটির টাকার কাগজ কেনা হয়েছে, রাখার জায়গার অপ্রতুলতার জন্য যত দ্রুত ছাপার কাজ শুরু করা যায়, তাদের জন্য ততই মঙ্গল।
প্রাথমিকের বইয়ে মানসম্মত কাগজ প্রদান ও স্বচ্ছ ছাপার ব্যাপারে কোন আপোষ করা হবে না উল্লেখ করে সেরনিয়াবাত বলেন, কোয়ালিটি রক্ষায় কার্যাদেশ পাওয়া কোন প্রতিষ্ঠানকেই চুল পরিমান ছাড় দেয়া হবে না।
তিনি বলেন, মানের প্রসঙ্গ এনেই গত ১৭ আগস্ট বিশ্বব্যাংক জামানত ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ, কাগজ কেনার পর বিশ্বব্যাংকের কারিগরি শাখা কাগজের মান ও ফর্মা পরীক্ষা, উপজেলা পর্যায়ে যাওয়া বইয়ের মান পরীক্ষার শর্ত দেয়। মান পরীক্ষার পর সন্তোষজনক হলে বিল পরিশোধ করার কথা জানায় বিশ্বব্যাংক।
বিশ্বব্যাংকের এসব শর্তের কারণে সমিতির অপারগতায় কার্যাদেশ দিতে পারছিল না এনসিটিবি উল্লেখ করে সভাপতি বলেন, এ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে গত ৩১ আগস্ট শিক্ষামন্ত্রী বিশ্বব্যাংক ও এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) প্রতিনিধি, এনসিটিবি, প্রকাশক ও প্রেস মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
তিনি বলেন, ওই বৈঠকে প্রকাশকেরা মানসম্পন্ন পাঠ্যবই ছাপাবেন জানালে বিশ্বব্যাংক তাদের ৫টির মধ্যে চারটি শর্ত প্রত্যাহার করে নেয়। তবে জামানতের শর্তটি বহাল রাখে। মুদ্রণ শিল্প সমিতি ওই শর্তটি মেনেই বই ছাপানোয় সম্মতি দিয়েছে।
এনসিটিবি সূত্র আরো জানায়, ২০১৬ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিকের প্রায় ১১ কোটি বই ছাপাতে ৩শ’ ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও ২শ’ ২১ কোটি টাকায় বই ছাপানোর কাজ পায় দেশীয় ২২টি প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে বিশ্বব্যাংক দেবে ৯ শতাংশ, অর্থাৎ, ১৮ কোটি টাকা।-বাসস
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।