মো. আমিরুজ্জামান, নীলফামারী ০২ সেপ্টেম্বর: দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা এখন “আসমানি” কবিতার রুপক দরিদ্র আসমানির আবাসস্থলের মতো হয়েছে। তিন মাস না পেরুতেই প্রায় এক শত ছাপান্ন কোটি টাকার উর্দ্ধে বরাদ্দে নির্মান সম্পন্ন হওয়া এ কারখানার অভ্যন্তরের উপ-কারখানারগুলোর টিনের ছাদ ফুটো অসংখ্য ছোট-বড় ছিদ্র হয়েছে। আর এ সকল ছিদ্র দিয়ে গড়িয়ে পানি পড়ছে। ফলে হাজার কোটি টাকার মেশিন পত্র নষ্ট ও উৎপাদন ব্যহত হওয়ার পাশাপাশি কর্মরতরা প্রাণহানির হুমকিতে থাকায় অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়েছে ঐতিহ্যবাহি এ কারখানাটি।
গংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, ১৮৭০ সালে প্রতিষ্ঠিতএ কারখানায় তৎকালীন সময়ে ২২ টি উৎপাদন উপ-কারখানায় (সোপ) প্রায় হাজার খানেক মেশিন বসিয়েছিলেন ইংরেজরা। যার প্রতিটির মুল্য সমকালীন সময়ে প্রায় দেড় লাখ টাকা ছিল। অবকাঠামো গড়তে তারা হাফ ইঞ্চি পুরু লোহার টিন এবং রেল লাইন ব্যবহার করেছেন। এর ফলে প্রায় দেড় শত বছরের আয়ুস্কালেও তেমন কোন কিছুই নষ্ট হয়নি। যার সাক্ষি এষনও বহন করছে অনেক অবকাঠমো। কয়েকটি উৎপাদন সপের ছাদের টিন ফুটো হওয়া এবং মেঝে নির্মাণে কারখানাটিকে অত্যাধুনিকতায় সাজাতে সরকার দু” দফায় একশত ছাপান্ন কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ কারখানার উৎপাদন উপ-কারখানাগুলোর অবকাঠামো সংস্কার বা মেরামতের তিন মাস পার না হতেই ইরেজদের হাতে গড়া অবকাঠামোর চেয়ে আরো করুন দশায় নিপতিত হয়েছে। আর ছাদের পানি আটকাতে গত ১৩ আগষ্ট জি ও এইস সোপের ইনচার্জের নির্দেশে মেরামতে আব্দুল জলিল (৫৫) নামে এক শ্রমিক ৫০ ফুট ছাদ হতে পড়ে গিয়ে গুরুত্বর আহত হন। বর্তমানে তিনি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এতে বিদ্যুৎ ব্যাবহারের কাজে কর্মরত শ্রমিকরা প্রায়শই বিদ্যুতায়িত হওয়ার অভিযোগ করেন। কারন উৎপাদন অব্যহত রাখতে কারখানার উর্ধŸতনদের চাপে তারা বাধ্য হয়ে জীবনের হুমকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।
সুত্র জানায়, গত ২০১২ সালে তমা কন্সট্রাকশন নামে এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রায় একশত ছাপান্ন কোটি টাকার বরাদ্দে সৈয়দপুর রেরওয়ে কারখানার অভ্যন্তরের উপ-কারখানাগুলোর মেঝে, অবকাঠামো ও ছাদ নির্মাণ এবং সংস্কার কাজ শুরু করে। এ কাজের দেখা শোনায় সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান ও পরে হারুনুর রশিদ কে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। মেয়াদান্তের চেয়ে অতিরিক্ত সময়ে কাজ সম্পন্ন করে চলতি বছরের ১৫ জুন সংশ্লিষ্টদের হস্তান্তর করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আর এর তিন মাস না পেরুতেই এ কারখানার ২৬টি উপ-কারখানার টিন ফুটো হয়েছে।
ভারী বর্ষনে মটকাগুলো পচে অসংখ্য বড়-বড় ছিদ্র শুধুই বাড়ছে। সরেজমিনে ওই কারখানায় ঘুরে সিএইচ আর, ব্রয়লার, ওয়াগন, ক্যারেজ, ওয়েলডিং, ইলেকট্রিক, লোক মেশিন, হুইল, কামার শাল, পেইন্টস মিল, জিওএইস,প্রডাকশন, বগি, মিল রাইট, ফাউন্ড্রি, টুল রুম, ইয়ার্ড, ক্যরেন, জি আর, এফটিএল, এলসিডাব্লু, জিআর, ডিজেল, পাওয়ার হাউসসহ বিভিন্ন উপ-কারখানাগুলোতে দেখা যায়, প্রতিটি উপকারখানার ছাদের মটকাগুলো পচে খসে পড়ছে। সেখানে সুড়ঙ্গের মতো বিশাল-বিশাল ছিদ্র হয়েছে। আর প্রতিটি সপের মেঝেতে পানি জমে রয়েছে। এতে করে শ্রমিকরা সঠিকভাবে তাদের উৎপাদন কাজ করতে পারছেনা। মেশিন পত্র গুলো নষ্ট হতে চলেছে।
কারখানাটির ওয়েল্ডিং সোপের ফাষ্ট গ্রেডের শ্রমিক গোলাম মোস্তফা জানায়, পানি পড়ার কারনে এ মৌসুমে নিয়মিত ভাল ভাবে কাজ করতে পারছিনা। এছাড়া প্রায় বৈদ্যতিক শর্ট খেতে হয়। সি এইচ আর সোপের মোঃ মনির নামে এক শ্রমিক জানান, ইংরেজদের হাতে গড়া এ কারখানার উপ-কারখানাগুলোতে এ্যালবাসটিন টিন দ্বারা ছাদ ও ঘেরা তৈরী করা হয়েছিল। ওই টিনগুলোই ব্যাবহার করলে আরো শতাধিক বছর কাটত। অথচ ভালো টিনগুলো খুলে নাম মাত্র টিন দিয়ে সংস্কার করল কতৃপক্ষ। যার কারনে এ কারখানার ইংরেজদের হাতে ক্রয়কৃত বর্তমান বাজার মুল্যের হাজার-হাজার কোটি টাকার মেশিন পত্র বিকল হওয়ার পথে।
এ নিয়ে সি এইস আর সোপের ইনচার্জ দ্বিজয় কুমারের সাথে কথা হলে তিনি জানান, সবেমাত্র ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ করল। আর এতেই পানি পড়া শুরু। এর কারনে মেশিন পত্র নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি শ্রমিকরা প্রাণহাণির আশংকা নিয়ে কাজ করছেন।
এ নিয়ে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) নুর আহাম্মদ হোসেন জানান, টিন চুয়ে পানি পড়া নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছি। এ বিষয়টি ভিন্ন সেক্টরের তাই এ নিয়ে কোন মন্তব্য করতে চাইনা। তবে পানি পড়ার বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবগত করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।