সকল মেনু

বোয়ালখালীতে তেলবাহী ওয়াগন খালে : তদন্ত প্রতিবেদন জমা

oil_train1437709462নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে রেল সেতু ভেঙে তেলবাহী ওয়াগন ও ইঞ্জিন খালে পড়ে যাওয়ার ঘটনায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দুটি বিভাগ পরস্পরকে দোষারোপ করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে প্রকৌশল ও মেকানিক্যাল বিভাগকেই দায়ি করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজের নাজুক পরিস্থিতি, ব্রিজের দু’পাশে ওয়াল ভেঙ্গে যাওয়া, ঠিকাদার কাজ না করা, অদক্ষ ড্রাইভারকে দিয়ে ৪০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানোসহ বিভিন্ন বিষয় তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। প্রকৌশল বিভাগ ও মেকানিক্যাল বিভাগ দুই দপ্তরের পরস্পর বিরোধীতার কারণে অনেকগুলো কারণ চিহ্নিত হবে না বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ঈদের আগে গত ১৬ জুলাই তদন্ত কমিটির সদস্যরা তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন পূর্বাঞ্চলের জিএম মো. মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, বিষয়টি খুবই গুররুত্বপূর্ণ। ট্রেন চলাচলে মনিটরিংয়ে থাকলেও ঈদের বন্ধ শেষ করে অফিস শুরু করেছি মাত্র। তাই বিস্তারিতভাবে প্রতিবেদনটি দেখতে পারিনি। প্রতিবেদনে কি চিহ্নিত বা উল্লেখ করা হয়েছে, তা দেখেই পরে বিস্তারিত বলা সম্ভব হবে বলে জি এম মোজাম্মেল হক মন্তব্য করেন।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, তদন্ত প্রতিবেদনে কারা, কিভাবে দায়ী এমন বিষয়ে পক্ষে বিপক্ষে দোষী সাব্যস্ত করা নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে। তদন্ত কমিটির সদস্য প্রকৌশল বিভাগ ও মেকানিক্যাল বিভাগের হওয়ায় নিজেদের বিভাগকে কৌশলে তদন্তে দোষী না করতে বৈঠক চলে কমিটির সদসদের মধ্যে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ৩ দিনের মধ্যে জমা দেয়ার কথা থাকলেও ঘটনার ২৭ দিন পর কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলেন, দায়িত্বহীনতা, তদন্ত কমিটির সদস্যদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও স্ব স্ব দপ্তরকে দোষী সাব্যস্ত না করতে ‘কৌশলে’ বাঁচানোর জন্য দ্বন্দ্ব লেগেছিল এতোদিন। এতে ওয়াগন দুর্ঘটনার ২৭ দিন পর দায় সারাভাবে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিটি। পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি তর্ক করতে গিয়ে প্রকৃত ঘটনাও আড়ালের সম্ভাবনা রয়েছে। অন্য বিভাগ বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দিয়ে নতুন করে তদন্ত না করলে চিহ্নিত হবে না আসল ঘটনা। এ দ্বন্দ্বের কারণে প্রকৃত ঘটনা আড়াল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে রেল সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

ওয়াগন দুর্ঘটনার একটি তদন্ত কমিটির আহবায়ক ও চিফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (সিএমই) হারুন উর রশীদ বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে প্রকৃত দোষী ও মূল কারণ চিহ্নিত করতে কিছুটা সময় লেগেছে। ঈদের আগেই জমা দিয়ে দিয়েছি প্রতিবেদন। এখন এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সিদ্ধান্ত নেবেন কি করবেন। একই কথা বললেন তদন্ত কমিটির সদস্য ও চিফ ইঞ্জিনিয়ার কামরুল আহসান। তিনি বলেন, দুর্ঘটনার সূত্রপাত চিহ্নিত করতে হবে এবং কোনো প্রকার ঘটনা আড়ালের সুযোগ নেই।

উল্লেখ্য, গত ১৯ জুন দুপুরে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার বেঙ্গুরায় একটি রেলসেতু ভেঙে ফার্নেস অয়েলবাহী একটি ওয়াগনের ইঞ্জিন ও তিনটি ওয়াগন খালে পড়ে যায়। দুর্ঘটনার পর পরই রেলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলীকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ ছাড়া বিভাগীয় প্রধান প্রকৌশলী-১ কে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেতু ধসের ঘটনায় রেলের দুই প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top