অাছাদুজ্জামান,হটনিউজ২৪বিডি.কম: শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের আকাশে পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে। আগামীকাল শনিবার পবিত্র ঈদুল ফিতর।
শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠকের পর এ কথা জানানো হয়েছে। কমিটির বৈঠক শেষে জানানো হয়, আজ বাংলাদেশের আকাশে চাঁদ দেখা গেছে। তাই কাল সারা দেশে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ধর্মমন্ত্রী ও জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভাপতি মতিউর রহমান।
বছর ঘুরে আবার এসেছে খুশির ঈদ। মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদ উদযাপনে প্রস্তুত মুসলিম সম্প্রদায়। বাঙালি মুসলমানের ঘরে-ঘরে জনে-জনে চলছে ঈদের আনন্দ বারতা। সৌহার্দ্যের, ভ্রাতৃত্বের আর সম্প্রীতির এই আনন্দধারায় সবাইকে ঈদ মোবারক।
মুসলমানের সবচেয়ে বড় এই আনন্দ-উৎসব সামাজিক সম্প্রীতি আর সাম্যচেতনায় ভাস্বর। ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই ঈদের আনন্দে শামিল হবে- এটাই এই ঈদের মর্মবাণী। মাসজুড়ে রোজা পালনের মাধ্যমে সংযম আর ত্যাগের শিক্ষা অর্জন এই আনন্দের জন্য প্রস্তুত করেছে প্রতিটি মুসলমানকে। ঈদ পালনে সবাই মাটির টানে, নাড়ির টানে ছুটে গেছেন স্বজনদের কাছে। তাই চারদিকে এখন স্বজন-পরিজন, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে মিলনের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস।
শাওয়ালের চাঁদ দেখা যাওয়ার খবর পাওয়ার পরপরই সব টেলিভিশন চ্যানেল, বাংলাদেশ বেতার এবং এফএম রেডিও থেকে ভেসে আসছে চিরচেনা সেই গান ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এল খুশির ঈদ’।
শাওয়ালের চাঁদ ভেসে উঠার পরই বিটিভিসহ সকল বেসরকারি টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার এবং এফএম রেডিও থেকে ভেসে আসছে চিরচেনা সেই গান `ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এল খুশির ঈদ`।
শাওয়ালের চাঁদ ভেসে উঠার পরই বিটিভিসহ সকল বেসরকারি টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার এবং এফএম রেডিও থেকে ভেসে আসছে চিরচেনা সেই গান `ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এল খুশির ঈদ`।
ঈদ উপলক্ষে আলোকমালায় সেজেছে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ভবন। সড়কের পাশে ও সড়কদ্বীপে ওড়ানো হয়েছে জাতীয় পতাকা ও ‘ঈদ মোবারক’খচিত নিশান। ঈদ উপলক্ষে শুক্রবার থেকে ঘোষিত ছুটি চলছে সরকারি-বেসরকারি অফিসে। ঈদ সামনে রেখে দেশের রেডিও ও টিভি চ্যানেলগুলো সাত দিনব্যাপী নানা ঢঙের নানা বর্ণের অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। বিনোদনকেন্দ্রগুলো প্রস্তুত দর্শনার্থীদের আগমনের অপেক্ষায়। পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাতের জন্য প্রস্তুত রাজধানীসহ দেশের ঈদগাহগুলো। বৃষ্টি না হলে রাজধানীতে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। এ ছাড়া বায়তুল মোকাররমসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মাঠ ও মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
বাণীতে তারা সবাইকে ঈদ মোবারক জানানোর পাশাপাশি ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে ঈদুল ফিতরের শিক্ষার প্রতিফলন ঘটানোরও আহ্বান জানান।
ঈদের দিন গণভবনে সকাল সাড়ে নয়টা থেকে রাজনীতিক, কবি, সাহিত্যিক, লেখক, সাংবাদিক, কূটনীতিক, বিচারপতি, শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছাবিনিময় করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ঈদের দিন বেলা সাড়ে ১১টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুভেচ্ছাবিনিময় করবেন।
ঈদ উপলক্ষে দৈনিক পত্রিকাসমূহ ইতিমধ্যে প্রকাশ করেছে বিশেষ ক্রোড়পত্র। ঈদের এই আনন্দ বাড়িয়ে দিতে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও এফএম রেডিওতে সম্প্রচারিত হচ্ছে ঈদের বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।
উপবাস ভঙ্গের এ উৎসব সাদকাহ দেওয়ার উৎসবরূপে গণ্য হতো প্রিয় নবীর দেশে। সেদিন নবীজির নির্দেশ ছিল বার্লি বা খেজুরের এক সা অথবা গমের অর্ধ সা-র হিসেব ঈদের নামাজের আগেই চুকিয়ে দিতে হবে প্রত্যেককে, যাদের সামর্থ্য আছে। দিতে হবে তাদের, যাদের নেই। এই সাদকাহ দ্বারা পবিত্র হবে রোজাদারের সিয়াম। মূলত ঈদ মানে আনন্দ উৎসব। যে আনন্দ ফিরে ফিরে আসে।
ঈদুল ফিতরকে সিয়াম সাধনার পার্থিব পুরস্কার হিসেবে গণ্য করা যায়। পবিত্র ঈদে আনন্দময় হয়ে উঠুক আমাদের প্রতিটি মুহূর্ত। ঈদ অর্থ আনন্দ, খুশি,উল্লাস। মুসলিম উম্মাহর খুশির দিন ঈদুল ফিতর আর ঈদুল আজহা দুটি দিবসই অত্যন্ত মর্যাদাশীল ও আনন্দময় । সব ভেদাভেদ ভুলে একে অপরকে বুকে জড়ানোর দিন। ঈদ আমাদের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রদত্ত বিরাট নিয়ামতের দিন।
ইসলামে ঈদ একটি সুউচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন পরিপূর্ণ প্রতীক। যা দেহ ও মনের প্রয়োজন মিটিয়ে দেয়। মাহে রমজান ও হজের মাসসমূহের ইবাদত বন্দেগির বাহক হিসাবে ঈদের আগমন ঘটে। ওই সকল মাসের সব কয়টি ইবাদতই রুহের খোরাক জোগায়। ইরশাদ হচ্ছে- ‘তুমি বল : আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর রহমত, এ নিয়েই তাদের সন্তুষ্ট থাকা উচিত।’ (সুরা ইউনুস)
আর শরীরের প্রয়োজন মেটানোর লক্ষ্যে খেলাধুলা ও আনন্দ ফুর্তি ইসলামে বৈধ করা হয়েছে। আর এ কারণেই ঈদের দিনগুলোতে সিয়াম সাধনা হারাম করা হয়েছে। কেননা, রোজা রেখে খানাপিনা ছেড়ে দিয়ে ঈদ উদযাপন করা আদৌ সম্ভব নয়। হজরত আনাস (রা.)-এর বর্ণনা এদিকেই ইঙ্গিত বহন করে। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) মদিনায় আগমন করে দেখলেন ইহুদিরা দুটি দিন খেলাধুলা ও আনন্দ ফুর্তি করে। তখন তিনি বললেন : আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য এর চেয়েও উত্তম দুটি দিন নির্ধারণ করেছেন, তা হলো ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতরের দিন। (আবু দাউদ, নাসায়ী)
প্রসঙ্গত, মধ্যপ্রাচ্যে বৃহস্পতিবার শাওয়ালের চাঁদ দেখা যাওয়ায় শুক্রবার সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, জর্ডান, মিশর, ইয়েমেন ও লিবিয়াসহ বিভিন্ন দেশে ঈদ উদযাপিত হয়। এদিকে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে প্রতিবারের ন্যায় এবারও দেশের বিভিন্ন জেলার অর্ধশত গ্রামে ঈদ উদযাপিত হয় শুক্রবার।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।