এম. শরীফ হোসাইন, ভোলা: ভোলার ঈদের বাজার উপলক্ষে শপিংমল আর বিপনী বিতানগুলোয় ভিড় করছেন নিজেদের ও প্রিয়জনদের পোশাক কিনতে। ক্রেতাদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে ঈদের বাজার। এসব মানুষের গন্তব্য ছিল আয় কিংবা আর্থিক সঙ্গতির ওপর ভিত্তি করে। নিন্ম আয়ের মানুষের ছুটেছেন হকার্স মার্কেট বা চকবাজার থেকে শুরু করে সাধারণ বিপণী কেন্দ্রগুলোতে। আর উচ্চবিত্তশালিরা ছুটেছেন শহরের বিভিন্ন অভিজাত ফ্যাশন হাউজ ও মার্কেটগুলোতে। যদিও দাম একটু বেশী, তাতে কি; ঈদ বলে কথা। বাধ্য হয়েই বেশী দাম দিয়ে প্রয়োজনীয় কেনা-কাটা করছেন ক্রেতারা। শহরের কে জাহান শপিং কমপ্লেক্স, গিফ্ট কর্ণার প্লাস, চৌধূরী প্লাজা, তালুকদার ভবন, জিয়া সুপার মার্কেট, জাহাঙ্গীর প্লাজা, আমেনা প্লাজায় ও চক বাজার গিয়ে দেখা গেছে ক্রেতাদের উপছে পড়া ভিড়। বিগত বছরের তুলনায় এ বছর কেনা বেচা অনেক বেশী ভাল হবে আশা করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। শুধু ভোলা শহরের ক্রেতারাই নয়, বিভিন্ন উপজেলা থেকে কেনা-কাটার জন্য আসছেন।
সূত্রে জানা যায়, আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে ১৭ রমজানের পর থেকে শহরের মার্কেটগুলোতে সকাল ৯টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা থেকে সব বয়সী নারী পুরুষ ও শিশু ক্রেতাদের উপচে পরা ভিড় রয়েছে। তবে মধ্যম ও উচ্চবিত্তের কেনাকাটায় শহরে উৎসব বিরাজ করছে। ক্রেতারা বিপনী বিতানগুলোতে নতুন নতুন ডিজাইনের পোশাক খুঁজে বেড়ান। দোকানীরা ক্রেতাদের আকৃৃষ্ট করতে উঠিয়েছেন বিভিন্ন ব্র্যান্ড লেভেলের পোশাক। শিশুদের জন্য রয়েছে বাহারি রংঙের পোশাক। এবারের ঈদে এসেছে মহিলাদের জামদানীসহ বিভিন্ন নামের ব্র্যান্ডে শাড়ী। দাম একটু বেশি হলেও ক্রেতাদের পছন্দ সেদিকেই। তাছাড়া রয়েছে ইন্ডিয়ান শাড়ী। ছেলেদের পছন্দের তালিকায় বেশী বিক্রি হচ্ছে দেশীও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ডিজাইন শার্ট এবং বাহারী ডিজাইনের জিন্স প্যান্ট ও রঙিন নকশা পাঞ্জাবী।
ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করলে তারা তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। সদর রোডের জাহাঙ্গীর প্লাজার পোশাক ব্যবসায়ী স্টাইল কর্ণারে কর্ণধার মেজবাহ উদ্দিন বাধঁন ও এম প্লাসের কর্ণধার মিজান জানান, রমজানের প্রথম থেকে বৃষ্টি ও আর্থিক মন্দার কারণে বিক্রি নেই বললেই চলে। তবে ক্রেতারা প্রতিদিন যাচাই-বাছাই করে ঘুরে ফিরলেও যাওয়ার সময় কিছু না কিছু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
কেনা-কাটা করতে আসা ক্রেতাদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, এবারের ঈদে নতুন নতুন ডিজাইনের পোশাক এসেছে মার্কেটগুলোতে। তবে দাম গত বছরের তুলনায় কিছুটা বেশি। তার পরে ক্রয় করতে হচ্ছে তাদের। ভোলা নাজিউর রহমান কলেজের প্রভাষক ও সাংবাদিক জুন্নু রায়হান বলেন, এমন পোশাক কিনতে চাই যেন সব সময় পরা যায়। বেশিরভাগ সময় তো কলেজ আর লেখা-লেখির কাজে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। তাই ব্র্যান্ডের শার্ট কিনতে ঝামেলা কম। নির্ধারিত দামে কেনা যায়।
জাহাঙ্গীর প্লাজার মার্কেটে মাহী স্মার্ট চয়েজ’র কর্ণধার মামুন ও জি স্টার এর কর্ণধার মিজান বলেন, ব্র্যান্ডের পোশাকের প্রতি ঝোঁক এবার মূলত তরুণদের একটু বেশী। তারাই ছুটছেন দেশি-বিদেশী ব্র্যান্ডের পোশাক কিনতে। বিভিন্ন কয়ালিটির ও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের জিন্স, গ্যাবাডিং’র প্যান্ট, শার্ট ও টি শার্ট এবারে কালেশনে রয়েছে। আছে নামী-দামী ব্র্যান্ডের পাঞ্জাবী। এসব পোশাকের দাম পড়ছে কোয়ালিটির উপর ভেবে নিন্মে ৭শ’ ৫০ থেকে সর্বোচ্চ কয়েক হাজার টাকা পর্যন্ত। তাছাড়া ছোটদের আছে নানা ধরনের পোশাক।
তারা আরো জানান, বিদেশী ব্র্যান্ডের পাঞ্জাবী না মিললেও দেশীয় ব্র্যান্ড এনেছে নানান ধরন, রং ও বৈশিষ্ট্যের পাঞ্জাবী। বেশি বাজেটের মানুষেরা শার্ট, প্যান্টের পাশা-পাশি কিনছে পাঞ্জাবী।
সদর রোডের আরেক তরুণ ব্যবসায়ী বিয়ে বাজারের কর্নধার মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, এবারের ঈদে নতুন কিছু দেশী ও বিদেশী বিভিন্ন নামের পাঞ্জাবী এসেছে। ইন্ডিয়ান পাঞ্জাবী, ফতুয়াসহ বিভিন্ন রং ও ডিজাইনের, এছাড়া বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পারফিউমসহ নানা প্রশাধনী রয়েছে। ঈদ উপলক্ষ্যে অন্য পোশাক যতই কেনা হোক না কেন পাঞ্জাবী না কিনলে ঠিক ঈদের মজা পাওয়া যায় না।
এদিকে ঈদের দিন যতো ঘনিয়ে আসছে, ক্রেতারা ঘরে বসে থাকছেন না। তরা ছুটেছে নিজের কিংবা প্রিয়জনের জন্য ঈদের-জামা-জুতো কিনতে। ভোলার বিভিন্ন অভিজাত ফ্যাশন হাউজ ও মার্কেটগুলো ঈদ উপলক্ষে রয়েছে আকর্ষণীয় ও উচ্চমূল্যের পোশাকের সমাহার। সন্ধ্যার পরে মার্কেটগুলোতে আলো ঝলমলে এসব দোকানে পণ্যের ব্রান্ড নেম এর গুরুত্বই অনেক বেশি। এবারের ঈদকে সামনে রেখে ভোলার বিপণি বিতানগুলোতে তরুণীদের পোশাকে নজর কেড়েছে। নামটাও বাহারি। ‘পাখি’ নয় এবার ‘কিরণমালা’। ভারতীয় টিভি সিরিয়াল কিরণমালার মূল চরিত্রের নামকরণে বাজার ছেয়ে যাচ্ছে কিরণমালা নামক এ পোশাকে। ভোলার মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা গেছে এমনই চিত্র।
শহরের কে-জাহান মার্কেট, গিফ্ট কর্ণার, গিফ্ট কর্ণার প্লাস, ও জিয়া মার্কেটে কয়েকটি দোকানে কিরণমালা, ফ্লোর টাচ, নামে এসেছে। এছাড়া বিভিন্ন মডেলের ইন্ডিয়ান সালোয়ার কামিজ ও দেশী বিভিন্ন ব্র্যান্ডের তরুনীদের পোশাক চোখে পড়ছে। তবে ইন্ডিয়ান পোশাকের চেয়ে দেশী এসব পোশাকে ক্রেতাদের চাহিদা বেশি বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
তারা বলছেন, ১৫ রোজার পর থেকের ঈদের ভিড় শুরু হওয়ার কথা থাকলে ভিড় বাড়বে ২০ রোজা’র পরে। এখন যা কিছু ক্রেতা এসেছে তাদের নজর এই কিরণমালার দিকে। আমাদের এখানে কিরণমালা পোশাকের দাম পড়বে ২ হাজার ৬শ’ টাকা থেকে শুরু করে কয়েক হাজার টাকা পর্যন্ত। অপরদিকে ভোলার ফ্যাশান হাউজ বা শো-রুমের এবারের ঈদে টেকচারে মূল আকর্ষণ থাকছে ইন্ডিয়া পোশাক কিরণমালা টপস।
শহরের জিয়া মার্কেটের এক দোকানী বলেন, এটাতো ভৌতিক সিরিয়াল। আসলে ঈদ বাজার নামের ওপরই সব চলে পোশাক চলে। ক্রেতারা যেহেতু কিরণমালার দিকে ঝুঁকছেন। তাই কিরণমালা নিয়ে এসেছি। সোমা জান্নাত নামক ক্রেতার খুঁজছেন কিরণমালা সালোয়ার কামিজ। একই মার্কেটের পাকিজা দোকানটির একজন বিক্রেতা হেলাল জানান আসন্ন ঈদ বাজারে এরইমধ্যে চাহিদার বাজার দখল করে নিয়েছে কিরণমালা। কিরণমালা ভারতীয় বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল স্টার জলসার ডেইলি সোপ কিরণমালা। ডেইলি সোপটির মূল চরিত্রের কিরণমালা নামে অভিনয় করছেন রুকমা রায়। কিন্তু বাংলাদেশের ঈদ বাজারে কিরণমালা নামক যেসব পোশাক এসেছে তার কোনো পোশাকই কখনো পড়েন নি চরিত্রটি। অন্যদিকে আশঙ্কা, কিরণমালাকে কেন্দ্র করে এরইমধ্যেই নানা আশঙ্কা তৈরি হয়েছে ক্রেতা বিক্রেতা উভয় মহলেই।
স্কুল পড়–য়া ছাত্রী মৌসূমী ইসলামের মা রুবাইয়া ইসলাম বলেন, গত বছর পাখি ড্রেসের জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় কয়েকজন আত্মহত্যা করেছে। এসব আমরা পত্রপত্রিকায় দেখেছি। এইবার বাজারে যেভাবে কিরণমালা পোশাক আসছে এবং শোনা যাচ্ছে তাতে নতুন কোনা দুর্ঘটনা ঘটতেও পারে।
তবে বরাবরের মতো পণ্যের দাম বেশি বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা। অভিযোগ থাকলেও কিন্তু তারা বসে নেই। ঠিকই প্রিয়জনের জন্য কিনছেন ঈদের পোশাক। দিন যত গড়াবে, ততোই বাড়তে থাকবে কেনাকাটা ভিড়। আর বিক্রেতাদের মুখে দেখা যাবে হাঁসি। ঈদের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই ভিড় বাড়ছে দোকানে। ব্যবসায়ীদের মতে বেচা-কেনা মোটামুটি হলেও চাকুরিজীবীদের হাতে বোনাসের টাকা এলেই বিক্রির মাত্রা আরো বেড়ে যাবে। ঈদে অন্যান্য পোশাকের সঙ্গে সবারই নতুন জুতো চাই। আর তাই ক্রেতাদের সেই চাহিদাকে সামনে ভোলার ছোট-বড় দোকানগুলোয় সাজানো হয়েছে বিভিন্ন ডিজাইনের নতুন জুতা দিয়ে। এসব বাহারি ডিজাইনের জুতার পসরা সাজিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী জুতা বিক্রি হচ্ছে না বলে জানান বিক্রেতারা।
অপদিকে কসমেটিকস, সিটিগোল্ড হাউসগুলোতে ভিড় জমে উঠছে। জিয়া মার্কেটের সিঙ্গাপুর প্রসাধনী ব্যবসায়ী ফরিদ আহমেদ (রানা) জানান, গত বছরের চেয়ে এ বছর বেচাকিনা মোটামুটি ভালো হবে বলে আশা করছি। ভিড় এড়াতে এবার রোজার শুরু থেকেই টুকটাক মার্কেট করছেন ক্রেতারা। বাকি দিনগুলোতে আরও বেচাকেনা বাড়বে বলে আশা করছেন।
পোষাক আর কসমেটিক দোকানে রয়েছে যেমন ভীড়, ঠিক তেমনি রয়েছে পাদুকা বিপনীগুলোতেও ক্রেতাদের ভীড়। গতকাল সদর রোডের বেশ কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখা যায়, রহমান সু হাউস, প্রগতি সু, মডার্ন সু, ওয়ান-সু, রিপা সু, ন্যাশনাল সু, ভোলা সু হাউস, পাদুকা বিপণি, পদশ্রীসহ বিভিন্ন দোকানে নতুন নতুন ডিজাইনের জুতার পসরা বসিয়েছেন বিক্রেতারা। কিন্তু এ বছর তেমন ক্রেতা নেই।
এ বিষয়ে ওয়ান সুজের দোকানের মালিক মো. মাকসুদুর রহমান (রিয়াদ) জানালেন, অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর জুতাসহ সব জিনিসের দাম বেশি হওয়ায় চাহিদার তুলনায় বিক্রি কম হচ্ছে। ঈদকে সামনে রেখে নিত্য-নতুন ডিজাইনের জুতা আনা হয়েছে। সাধারণ মানুষের চাহিদা মেটাতে এখানে কম দামের এবং বেশি দামের জুতা রাখা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, রমজানের প্রথম থেকে বৃষ্টি ও আর্থিক মন্দার কারণে বিক্রি নেই বললেই চলে। তবে ঈদের প্রায় এক সপ্তাহ আগে বিক্রি বাড়বে বলে তিনি আশা করেন। এদিকে নামি-দামি জুতার শোরুমগুলোয়ও নতুন ডিজাইনের জুতার পসরা বসেছে। ঈদ উপলক্ষে পাদুকা কোম্পানীগুলো বিভিন্ন ডিজাইনের জুতা বাজারে এনেছে। আর ক্রেতারা তাদের সাধ্য অনুযায়ী কিছু না কিছু কেনার চেষ্টা করছেন।
আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল ফিতরে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে পুলিশ সুপার মোহাঃ মনিরুজ্জামান এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, ঈদ উপলক্ষে প্রতিটি মার্কেটে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থান থেকে কেনাকাটা করতে আসা ক্রেতাদের সার্বিক নিরাপত্তা দেয়ার জন্য শহরের প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ন পয়েন্টে পুলিশী নজরদারী বৃদ্ধি করা হয়েছে। তাছাড়া সদর রোডে পয়নিক্সাশনের জন্য ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে, তাই ঈদ উপলক্ষ্যে যানজট নিরশনের জন্য ওয়ান ওয়ে রাস্তা ব্যবহার করার জন্য জনসাধারণকে আহবান জানানো হয়েছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।