ইয়াছিন রানা সোহেল,রাঙামাটি: রাঙামাটি পৌরসভার হিসাব সহকারী হিসেবে ১৯৯৩সালে নিয়োগ পান মোঃ জাহাঙ্গীর আলম। পৌরসভার ম্যানুয়াল অনুযায়ী পদটি তৃতীয় শ্রেনীর হলেও জাহাঙ্গীর আলমের হাবভাবে তিনিই যেনো প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা। টাকা ছাড়া কোনো কাজই করতো বলে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ঠিকাদার থেকে ঝাড়–দার এমনকি বেওয়ারিশ লাশ দাফন কাফন পর্যন্ত সবার কাছ থেকেই তিনি পার্সেন্টিস নিতেন। তার এহেন আচরণে সবাই তাকে পিসি(পার্সেন্টিস) জাহাঙ্গীর নামেই চিনতো। রাঙামাটি পৌরসভার একাধিক কর্মচারীর সাথে আলাপে জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলম এখানে কর্মরত থাকাবস্থায় প্রত্যেক কর্মচারী থেকে নানাভাবে টাকা নিতেন। তারা জানায়, তার যন্ত্রনায় সবাই অতিষ্ট ছিল। তিনি পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারী কাউকেই পাত্তা দিতো না। সে বিগত মেয়রের খুব কাছের লোক ছিলো বলে তার হাবভাবে মনে হতো তিনি যেনো প্রথম শ্রেণির কোনো কর্মকর্তা। সে প্রভিডেন্ট ফান্ড কিংবা গ্র্যাচুয়াটি ফান্ডের বিষয় নিয়ে কেমন একটা মাথা ঘামাতেন না। ঠিকাদারদের বিল দেয়া নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকতো। কারণ ঠিকাদারদের বিল দিলেতো পার্সেন্টিস পেতো। ঠিকাদার থেকে ঝাড়–দার প্রত্যোকের কাছ থেকে সে পার্সেন্টিস নিতো। এজন্য তাকে পিসি(পার্সেন্টিস) জাহাঙ্গীর নামেই সবাই চিনতো।
এই জাহাঙ্গীর আলম পৌরসভার বিধিবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে হিসাব রক্ষক হিসেবে পদোন্নতি নেন। এই পদোন্নতি নেয়ার পর তিনি অফিসের বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজে হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা(ভারপ্রাপ্ত) লিখতেও দেখা গেছে।
অথচ পৌরসভার ম্যানুয়াল অনুযায়ী পৌরসভার সাংগঠনিক কাঠামোর শ্রেণি ক-২-এর মতে হিসাব সহকারী পদটি তৃতীয় শ্রেণির এবং এ পদের পদোন্নতি হয়না।
পৌরসভার চাকুরি বিধিমালা ১৯৯২তফসিল অনুযায়ী হিসাব সহকারী হতে হিসাব রক্ষক হিসেবে পদোন্নতি পেতে পারেনা। এছাড়া হিসাব রক্ষক হিসেবে পদোন্নতি পেতে হলে ক্যাশিয়ার পদে চাকুরিরত হতে হবে। হিসাব সহকারী পদ হতে পদোন্নতি পাওয়া বিধি সম্মত কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের পৌর-২এর সহকারী সচিব এ কে এম আনিছুজ্জামান জানান, পৌরসভার চাকুরিবিধিমালা ১৯৯২অনুযায়ী এই পদ থেকে পদোন্নতি হয়না। এটি পদোন্নতি যোগ্য পদ নয়। পৌরসভায় ব্লক পোস্ট সত্ত্বেও যদি হিসাব সহকারী থেকে হিসাব রক্ষক হিসেবে পদোন্নতি নিয়ে বেতন ভাতাদি গ্রহণ করে তবে তার বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান,এই ধরনের পদোন্নতি নিয়ে যদি কেউ বেতন ভাতাদি গ্রহণ করে তবে তাকে অবশ্যই সব টাকা পৌরসভার ফান্ডে ফেরত দিতে হবে এবং তাকে আগের পদেই ফিরে যেতে হবে।
পদোন্নতির সুযোগ না থাকা সত্তেও কিভাবে হিসাব সহকারী থেকে হিসাব রক্ষক পদে পদোন্নতি পেলেন, কোন সচিবের স্বাক্ষরে পদোন্নতি হয়েছে মুঠোফোনে এসব জানতে জাহাঙ্গীর আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রশ্ন শুনেই লাইন কেটে দেন। এরপর একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও এবং খুদে বার্তা (এসএমএস) দিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
বর্তমানে জাহাঙ্গীর আলম রাঙামাটি পৌরসভা থেকে বদলি হয়ে রাউজান পৌরসভায় হিসাব রক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি সেখানেও উক্ত পদের বেতন ভাতাদি গ্রহণ করছেন। কম স্কেলের বেতনভোগি হয়ে কিভাবে বড় স্কেলের বেতনভাতাদি পৌর ফান্ড হতে নিচ্ছেন তিনি এমন প্রশ্নের জবাবে রাউজান পৌর মেয়র কাজী আবদুল আল হাছান জানান, মন্ত্রনালয় থেকে যে চিটি দেয়া হয়েছে সেখানে হিসাব রক্ষকই লেখা ছিল। জাহাঙ্গীর আলমের সার্ভিস বুক জমা দিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র হাছান জানান, এখনো সার্ভিস বুক জমা দেননি। জমা দিলে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখবো।
হিসাব সহকারী থেকে হিসাব রক্ষক তদপরবর্তী হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা(ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে ২০১৩সালের জুন থেকে ২০১৫সালের জানুয়ারী পর্যন্ত প্রায় বিশ হাজার টাকা অতিরিক্ত বেতন ভাতাও গ্রহণ করেছেন। জানা যায়, গত ২০১১-১৪ অর্থ বছরের নিরীক্ষা চলাকালে জাহাঙ্গীরের উক্ত বেতন ভাতাদি গ্রহণ অবৈধ এবং বিধিসম্মত নয় বলে অডিট আপত্তি উত্থাপিত হয়েছিল এবং উক্ত টাকা রাঙামাটি পৌরসভা তহবিলে জমা দেয়ার জন্য অটিডদল কর্তৃক সুপারিশ করা হয়।
অডিট আপত্তির পরে এই টাকা ফেরত দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র সাইফুল ইসলাম চৌধুরী ভুট্টো জানান, এই টাকা ফেরত দেয়ার জন্য তাকে চিটি দেয়া হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সে টাকা ফেরত দিবেন বলে জানিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র জানান, বিগত মেয়রের সময়েই তার পদোন্নতি হয়েছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।