কবির চৌধুরী তন্বয়,হটনিউজ২৪বিডি.কম: বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারত। বাংলাদেশের এক পরিক্ষীত বন্ধু। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত এক অগ্নী পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বাংলাদেশের জনগণের হৃদয়ে শ্রদ্ধা, সম্মান আর ভালোবাসার জায়গাটুকু খোদাই করে অর্জন করেছে।
বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্নদ্রষ্ঠা, মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাঙালিদের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে ভারত হারিয়েছে তাদের প্রায় চার হাজার সেনা সদস্য আর আহত হয়েছে প্রায় দশ হাজারের মতন। তখন প্রায় এক কোটি বাঙালি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে যে মহানুভবতা প্রদর্শন করেছে তা বিশ্বের ইতিহাসে অন্যন্য হয়ে থাকবে।
মহাভারতের বর্তমান মহানায়ক প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদি’র আসন্ন বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে দু’দেশের রাজনীতিবিদ, জনগণ, মিডিয়া ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক ধরনের উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি, অর্থনীতি, সন্ত্রাসবাদ, মৌলবাদ, জঙ্গী তৎপরতা এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের উন্নত জীবন ব্যবস্থার সমিকরণে ব্যস্থ যেন সবাই।
বাংলাদেশ-ভারত’র মাঝে কাটাতারকে উপেক্ষা করে মোদির সফর বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে, কারণ সফর সঙ্গী হয়েছেনে পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপধ্যায়।
মোদি সরকারের এক বছরে প্রতিবেশী দেশ ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ছাড়াও পূর্ব এশিয়ার সিঙ্গাপুর, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া; দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিল; উত্তর আমেরিকার দেশ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা; ইউরোপের দেশ ফ্রান্স ও জার্মানি এবং অস্ট্রেলিয়া সফর করেছেন।
সরকার গঠন করার আগের নর্দ্রে মোদি আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে দৃশ্যমান অনেক তফাৎ প্রতিয়মান হয়েছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সাথে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সহ সকল বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নর্দ্রে মোদি ও তার সরকারের আন্তরিকতার ঘাটতি তেমনটা দৃশ্যমান এখনো হয়নি।
ইন্দ্রিরা-মুজিব চুক্তি সহ অনেক সমস্যার সমাধানের পথে মোদি-হাসিনা সরকার আন্তরিকতার সহিত আজ অনেক দূর অগ্রসর হয়েছে।
কিন্তু বহু আলোচিত স্থল সীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন ও তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে ঝুলে থাকা চুক্তির মতো অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধান না হওয়ায় নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশে সফর সরকার গঠনের এক বছর পর চুড়ান্ত হয়।
ইতিমধ্যেই কাগজ-কলম এ স্বাক্ষর সহ অনেক সমস্যার সমাধান হয়েছে, বিশেষ করে ছিটমহলবাসীর এতদিনের দুঃখ দূর্দশা ইতি হয়েছে। ছিটমহলবাসী ও তাদের নিয়ে টানাহেচড়া, বঞ্চনার গল্প-কাহিনী থেকে মুক্তি পেয়েছে, পেয়েছে নিজেদের নিজস্ব ঠিকানা, নাগরিকত্ব ও ভোটাধিকার। তৈরি হয়েছে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা।
নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী ৫ জুন, ২০১৫ সাংবাদিক সম্মেলনে তিস্তা চুক্তি নিয়ে ধৈর্য্য ধরার যে ইঙ্গিত দিয়েছে তা অতিসহসায় অনুমান করা যায় ‘তিস্তা চুক্তি’ এবারেও হচ্ছে না।
যদিও এ ব্যাপারে আনন্দ বাজার পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে আগেই।
তিস্তা নদী ভারতের সিকিম রাজ্য থেকে উৎপত্তি হয়ে উত্তরবঙ্গের ভিতর দিয়ে এসে প্রায় ৪৫ কিমি. বাংলাদেশে বয়ে শেষে যমুনা (বাংলাদেশের ব্রহ্মপুত্র) নদে মিশেছে।
১৯৮৩’র অস্থায়ী ব্যবস্থা অনুযায়ী, ভারতবর্ষ ৩৯ শতাংশ ও বাংলাদেশ ৩৬ শতাংশ পানি পাবার কথা।
কিন্তু নতুন যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির জন্য বাংলাদেশ বার বার এগিয়ে গেছে, তাতে সমবণ্টনের কথা বলা হয়েছে। যা আবার রাজনৈতিকভাবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাছে নিজেদের স্বার্থটাই মুখ্য বিবেচনায় বা সবার আগে রেখেছে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশতি হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ নষ্ট হবে বলে এতদিন ধরে মমতা চুক্তি স্বাক্ষরের পক্ষে ছিলেন না। যদিও নরেন্দ্র মোদি এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সাথে নিয়েই আসছেন। যাতে প্রাথমিক দীর্ঘসূত্রিতা পেরিয়ে সম্মতিতে পৌঁছানো যায়। এটি একটি ভালো লক্ষন।
তবুও রাজনৈতিক সমীকরণ ও প্রাদেশিক পানিবণ্টনের ইতিহাস অনুযায়ী, তিস্তার পানি সমস্যার সমাধান যে এখনই সম্ভব, তা একেবারেই পরিস্কার নয়। তবে ধারণা করা যায়। কারণ, তিস্তার পানির ভাগ যদি উত্তরবঙ্গে কোনোভাবে কমে যায়, তাহলে অল্প বর্ষার ক্ষেত্রে দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের মতামত।
তবুও আলাপ-আলোচনা ও বন্ধুত্বের প্রয়োজনে উভয় দেশের মানুষ ও মানবতার কল্যাণে আমাদের সমাধানের পথ খুজতে হবে, বাস্তব সমাধানের জায়গায় পৌঁছাতেই হবে।
আমি মনেকরি, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ও কুটনৈতিক সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য উদ্যোগ পরম বন্ধুপ্রতীম দেশ ভারতের সাথে অতীতের ন্যায় সকল সমস্যার সমাধান ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।