ইয়াছিন রানা সোহেল,রাঙামাটি: সোমবার মধ্যরাত থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদ হতে সকল প্রকার মৎস্য আহরণ, বাজারজাতকরণ এবং পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের বংশবৃদ্ধি, হ্রদে অবমুক্ত করা পোনা মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধি, মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতকরণসহ হ্রদের প্রাকৃতিক পরিবেশ মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির সহায়ক হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতিবছর কাপ্তাই হ্রদে তিন মাস মাছ শিকার বন্ধ রাখা হয়। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও আজ মধ্যরাত থেকে মাছ শিকার বন্ধ কার্যকর হবে। সাধারণত অন্যান্য বছর ১মে থেকে মাছ শিকার বন্ধ করা হলেও এবছর হ্রদে তুলনামূলক বেশি পানি থাকার কারণে কিছুটা দেরিতে মৎস্য শিকার বন্ধ কার্যকর হচ্ছে। গত ৪ মে রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে কাপ্তাই হ্রদ পরিচালনা সংক্রান্ত এক সভায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মাছ শিকার বন্ধকালীন হ্রদের মৎস্য আহরণের ওপর নির্ভরশীল প্রায় ২০ হাজার জেলেকে বিশেষ ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের কর্মকর্তাবৃন্দ।
রাঙামাটি মৎস্য গবেষনা ইনস্টিটিউড জানায়, কাপ্তাই হ্রদে কার্প প্রজাতি মা মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিত করার জন্য ডিম ছাড়ার মৌসুম মাছ ধরা বন্ধ রাখা প্রয়োজন। কাপ্তাই হ্রদ দেশের কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজননের একটি অন্যতম স্থান। এই হ্রদে প্রতিবছর বাংলাদেশের প্রাকৃতিক প্রজননকৃত মাছের মধ্যে শতকরা ৩১ ভাগ কাতাল, শতকরা ১২ ভাগ রুই, শতকরা ৭ ভাগ মৃগেল এবং শতকরা ৫১ ভাগ কালিবাউশের প্রজনন হয়। যা দেশের সামগ্রিক মৎস্য সম্পদের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্র্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
রাঙামাটি বিএফডিসি’র ব্যবস্থাপক কমান্ডার মঈনুল ইসলাম জানান জানায়, চলতি মাছ ধরা মৌসুমে এপ্রিল ২০১৫ সাল পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদ হতে ৮ হাজার ১ শত ৭৮ মেট্রিক টন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আহরণ করা হয়েছে এবং মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন আহরিত মাছের ওপর ৮ কোটি ৭৯ লক্ষ টাকার রাজস্ব আয় করেছে। পাশাপাশি স্থানীয় বাজারগুলোতে রাজস্ব ছাড়াই জেলেরা মাছ বিক্রির সুযোগ পেয়েছে। গত বছর মাছ শিকার বন্ধ মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদের ওপর নির্ভরশীল ১৮ হাজার ৯শত ৬০ জেলেকে মাস প্রতি ২০ কেজি করে ৩ মাসের জন্য খাদ্যশস্য প্রদান করা হয়েছে। চলতি মাছ ধরা বন্ধ মৌসুমে হ্রদের ওপর নির্ভরশীল ১৯ হাজার ১ শত ৫৯ জেলেকে মাস প্রতি ৪০ কেজি করে ৩ মাসের জন্য খাদ্যশস্য বরাদ্দ প্রদানের জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ এবং দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে।
এছাড়া মাছ ধরা বন্ধ মৌসুমে অবৈধ উপায়ে মাছ আহরণ বন্ধ এবং পরিবহন ও বাজারজাতকরণ বন্ধ কল্পে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার পাশাপাশি কাপ্তাই হ্রদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কোস্ট গার্ড মোতায়ান করা হবে। মাছ শিকার বন্ধ মৌসুমে হ্রদে অবৈধ উপায়ে মাছ শিকারের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মাছ ধরা বন্ধকালীন সময় আরোপিত নিষেধাজ্ঞা যাতে কঠোরভাবে পালন করা হয় সে লক্ষ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি টাস্কফোর্স কাজ করবে। এছাড়া মাছ শিকার বন্ধ মৌসুমে মাঝে মাঝে হ্রদের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিয়মিত টহল জোরদার করা হবে। গত বছর কাপ্তাই হ্রদে বিএফডিসি ২৩ মেট্রিকটন পোনা অবমুক্ত করে। এ বছরে একই পরিমাণ বা তার কিছু বেশি পোনা কাপ্তাই হ্রদে ছাড়া হবে। এছাড়া মাছ শিকার বন্ধকালীন রাঙামাটি শহরের বরফ কলসমূহ বন্ধ রাখা হবে। বর্তমানে কর্পোরেশনের উদ্যোগে জেলার লংগদু উপজেলায় একটি হ্যাচারি নির্মাণের কাজ চলছে এবং প্রায় ৫০ একর পানিতে নার্সারি স্থাপন করা হচ্ছে। এর ফলে আগামীতে কাপ্তাই হ্রদে অধিক পরিমাণে কার্প জাতীয় মাছের পোনা অবমুক্তকরণ সম্ভব হবে।
প্রসঙ্গত, দরিদ্র জেলেদের জন্য বিশেষ ভিজিএফ কার্ড চালুর পর বিগত কয়েক বছরে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরা বন্ধকালীন ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যায়। এতে কাপ্তাই হ্রদে মাছের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিএফডিসি ও বিএফআরআই কর্মকর্তারা।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।