শাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম, চাঁদপুর: অভয়া¤্রম কর্মসূচি চলাকালেও স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে একশ্রেণীর অসাধু দাদনদার ও আড়তদাররা জাটকা টেম্পু ইলিশ বিক্রির মহোৎসব চালিয়ে যাচ্ছে। আর এসব ইলিশ মাছ নদী থেকে ধরে আনার পর নদীর পাড় লাগোয়া আড়তগুলোতে বিক্রি হচ্ছে। অথচ জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ উপলক্ষে চলতি সপ্তাহে চাঁদপুরে বর্ণাঢ্য নৌ-র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। নৌ-র্যালিতে অংশ নিয়েছিলেন দু’জন মন্ত্রীসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা। র্যালি উদ্বোধন শেষেই দাদনদার ও আড়তদাররা মাজায় গামছা বেঁধে নেমেছেন জেলেদের দিয়ে নদী থেকে মাছ ধরতে। তেমনি জেলেদের ধরা মাছ বিক্রির দৃশ্য দেখা গেলো শহরতলীর আনন্দবাজার ও পুরাণবাজার হরিসভা সংলগ্ন রনাগোয়াল এলাকায়। সরজমিন আনন্দবাজার এলাকায় নদীর পাড় গিয়ে দেখা যায় দাদনদার ও আড়তদাররা ডেকে ডেকে ইলিশ মাছ বিক্রি করছে। জেলেরা নদীর পাড়ে নৌকা ভিড়িয়ে কারেন্ট জাল থেকে ৪ ইঞ্চি থেকে শুরু করে ৭শ’ থেকে ৮শ’ গ্রামের ইলিশ মাছ তুলে আড়তে আনছেন। আর এ মাছ কেনার জন্য বিপণীবাগ, বিষ্ণুদী মোড়, বাবুরহাট, পালবাজার এলাকার মাছ বিক্রেতারা তাদের বল বাটি নিয়ে বসে রয়েছেন। দু’ঘণ্টা ওই এলাকায় অবস্থান করে দেখা যায়, চাঁদপুর শহর থেকে বিভিন্ন বয়সী লোকজন ও বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধি ব্যাগ নিয়ে এসে মাছ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আড়তদাররা জেলেদের বিক্রিত ইলিশ মাছের টাকা থেকে শতকরা ২০ টাকা করে নিয়ে যাচ্ছেন। আনন্দবাজার এলাকার প্রভাবশালী দু সহোদর মিজান সরদার ও নজরুল সরদার, আহসান দেওয়ান, মজলু, কালু বেপারী, সফিকসহ বেশ ক’জন আড়তদার ও দাদনদার দিনের আলোতে হাসি খুশি মেজাজে মাছ বিক্রি করছেন। এ সময় ডিবি পুলিশের ক’জন সদস্যকেও সেথানে দেখা গেলো। স্থানীয় মাছ বিক্রেতা ও এলাকাবাসী জানান, প্রশাসনের বিভিন্ন লোকজনই প্রতিদিন এখানে আসে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার কয়েকজন জানালেন, দু সহোদর ভাইয়ের অত্যাচারে কেউ ভয়ে মুখ খোলেন না। এলাকাবাসীকে ওই এলাকার দাদনদার ও আড়তদাররা হুমকি দিয়ে বলে থাকেন যে, প্রশাসনের লোকজনদের ম্যানেজ করেই তারা মাছ বিক্রি করছেন। দুপুরের ২ ঘণ্টা সময় ওই আড়তদাররা প্রায় ২ লাখ টাকার মতো ইলিশ মাছ বিক্রি করে।
অপরদিকে সন্ধ্যার পর থেকেই পুরাণবাজার হরিসভা লাগোয়া রনাগোয়াল এলাকায় চলে জাটকাসহ ইলিশ বিক্রির উৎসব। দাদনদার যুবলীগ নেতা রফিক ও বিএনপি সমর্থক শাজাহান গাজী, লিটন গাজী, রিপনসহ বেশ ক’জনের নেতৃত্বে চলে এ মাছ বিক্রি। তারা হরিসভা, আল-আমিনের মোড়, লোহারপুল এলাকায় সোর্স রেখে দেন। প্রশাসনের কোন কর্মকর্তা যদি ওই এলাকায় প্রবেশ করে তাহলে তারা দ্রুত খবর পেয়ে যান। স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, পুরাণবাজার ফাঁড়ি পুলিশ ও জেলা মৎস্য অফিসের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে এ কাজ করে যাচ্ছেন। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত লাখ লাখ টাকার ইলিশ বিক্রি চলে ওই এলাকায়।
উল্লেখিত বিষয়ে তরপুরচন্ডী ইউপি চেয়ারম্যান সরদার রফিকুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে আনন্দবাজার এলাকায় মাছ বিক্রি সম্বন্ধে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ, সেমিনার ও র্যালিতে অংশ নিয়েছি। এই সময়ে নদী থেকে ইলিশ মাছ ধরা সম্পূর্ণ বেআইনি। কারা মাছ ধরে এবং বিক্রি করে আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নেবো। যারা ইলিশ মাছ ধরে এবং বিক্রির সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যারা মাছ বিক্রি করছে প্রশাসনিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক।
পুরাণবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ ও চাঁদপুর মডেল থানার সাবেক সেকেন্ড অফিসার মাহবুব মোল্লার সাথে রনাগোয়াল এলাকায় মাছ বিক্রিসহ বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এসব ব্যাপারে কিছুই জানিনা। কারা মাছ বিক্রি করে, আমাদেরকে টাকা দেয় তাদেরতো চিনি না। ঠিক আছে এ ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছি।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।