শ্যামনগর থেকে ফিরে যশোর প্রতিনিধি আব্দুল ওয়াহাব মুকুল : শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী ও আটুলিয়া ইউনিয়ন এখন লোনা পানির নিচে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে বিন্দুমাত্র পদক্ষেপ গ্রহন না করায় তিন দিন পর শিশু, নারী ও পুরুষ একত্রিত হয়ে তাদের এলাকা রক্ষায় সফল হয়েছে। খোলপেটুয়া নদীর ভাঙন কবলিত স্থানের পার্শ্ববর্তী রিং বাধটি অবশেষে নির্মান করা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু গত মঙ্গলবার দুপুরে ভাঙন কবলিত স্থানটি দুপুরের জোয়ারের আবার প্রায় ৩০ ফুট ভেঙে জোয়ারের লবন পানি তীব্র বেগে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। ফলে ১ হাজার ছোট বড় চিংড়ি ঘের ভেসে গিয়ে ক্ষতির পরিমান ২’শ কোটি ছাড়িয়েছে। গৃহহীন হয়েছে প্রায় ৪শত পরিবার। খাবার পানির অভাব তীব্র হওয়ায় ডায়রিয়া, আমাশয় সহ পেটের পীড়া জনিত নানান রোগ ছড়িয়ে পড়ছে।
গতকাল বুধবার মাদিয়া ও পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামের বিপুল সংখ্যক নর-নারী ভাঙন কবলিত স্থানে কাজ করে নির্মান কাজ সম্পন্ন করে। তিনদিনে সরকারী কোন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। এলাকার জনপ্রতিনিধি, সমাজ সেবক ও কয়েকটি বে-সরকারী প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে নির্মান কাজটি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে। প্লাবিত এলাকার খাবার পানির অভাব তীব্র হওয়ায় ডায়রিয়া, আমাশয় সহ পেটের পীড়া জনিত নানান রোগ ছড়িয়ে পড়ছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে। ইতিমধ্যে ক্ষতির পরিমান ২’শ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে বলে বেসরকারী সংস্থাগুলি জরিপে জানা গেছে। গৃহহীন অধিবাসীরা অবর্ননীয় কষ্ট নিয়ে বিনিদ্র জীবন যাপন করছে।
রোববার দুপুরের জোয়ারে খোলপেটুয়া নদীর তীরবর্তী বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের মাদিয়া নামক স্থানে আকষ্মিক ভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশের ৪র্থ দিনে দুপুরের আগেই বাধ মেরামত করা সম্ভব হয়। সরেজমিনে দেখা যায় হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমিয়েছে ভাঙ্গন ও খোল পেটুয়ার আগ্রাসী তান্ডব দেখার জন্য কিন্তু কার্যত বিকল্প রিং বাঁধ নির্মাণে কাজ করছে শতাধিক শ্রমিক। গতকালও স্থানীয় সংসদ সদস্য এস এম জগলুল হায়দার, বিজিবি ব্যাটালিয়নের সদস্যরা ঝোড়া-কোদাল হাতে কাজে নেমে পড়লে বেশ কাজের গতির সঞ্চার হয়। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে বিন্দুমাত্র পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি। এমনকি তাদের কোন সদস্যদেরকে আশেপাশে দেখা যায়নি।
ভাঙ্গন সংলগ্ন এলাকার বসবাসকারীরা জানায়, দীর্ঘ ১৮ মাস যাবৎ ভাঙ্গন স্থানটি অত্যান্ত ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় থাকলেও সংশ্লিষ্টদের কোন তদারিক ছিল না। এলাকাবাসীর প থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের বারবার তাগিদ দেয়ার সর্ত্ত্বেও কোন পদপে নেয়া হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবহেলার কারণে ভাঙ্গনটি সংগঠিত হয়েছে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান।
প্লাবনে ক্ষতিগ্রস্থ আটুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ডাঃ আব্দুল হামিদ জানান, খোলপেটুয়ার ভাঙ্গনে তার ইউনিয়নের উত্তর আটুলিয়া বড় ও ছোট কুপট, ভড়ভুড়িয়া, আড়পাঙ্গাশিয়া, যতীন্দ্রনগর, বাদুড়িয়া, মোল্লাপাড়া, হাওলভাঙ্গী, কাচিহারা ও বয়ারসিং গ্রামের ছোট বড় ৫ শতাধিক চিংড়ি ঘের ভেসে গিয়ে ক্ষতির পরিমান ১’শ কোটি ছাড়িয়েছে বলে বেসরকারী তথ্যে জানা গেছে। গৃহহীন হয়েছে প্রায় ৪শত পরিবার। তিনি আরো জানান বাঁধ মেরামতে তাদের প থেকে দেওয়া হয়েছে তবে তা পর্যাপ্ত নয়। তিনি জরুরী ভাবে সরকারের প থেকে পর্যাপ্ত বরাদ্দের আবেদন জানান।
প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অবস্থাদৃষ্টে বলা যায় ইতিমধ্যে প্লাবিত এলাকায় খাবার পানির অভাবে ডায়রিয়া, আমাশয় সহ পেটের পীড়া জনিত রোগ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। ভাঙ্গন সংলগ্ন গ্রাম গুলিতে প্রায় মানুষ শূন্য হয়ে পড়েছে। আতঙ্কে সবাই ঘর ছাড়া হয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে।
বুড়িগোয়ালিনীর চেয়ারম্যান হাজী নজরুল ইসলাম ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা ভবতোষ মন্ডল জানান, তার ইউনিয়নের আড়পাঙ্গাশিয়া, মাদিয়া ও ৫ নং ওয়ার্ডের সম্পূর্ণটা প্লাবিত হয়েছে। চিংড়ির ভরা মৌসুমে ভেসে গেছে ৫ শতাধিত ছোট বড় চিংড়ি খামার। ইউনিয়ন পরিষদের প থেকে নির্মিত অর্থ ও শ্রমিক সরবরাহ করা হয়েছে। বাঁধ মেরামতে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি গড় উদ্যোগটাই বেশি ল্য করা যাচ্ছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।