নিজস্ব প্রতিবেদক : ব্যাহত হচ্ছে মেধা বিকাশের অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা ব্যবস্থা। টার্ম ছুটি শেষ হওয়ার ১১ দিন পার হলেও কোন বিভাগে ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর দীর্ঘ সেশন জটের আশঙ্কা রয়েছে। প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের উপস্থিতি থাকলেও শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় উদ্বিগ্ন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এদিকে শিক্ষকরা বলছেন সিডিউল অনুযায়ী ক্লাস নিতে চাইলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি না থাকায় সেটি সম্ভব হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ৮ থেকে ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের টার্ম ছুটি ছিল। ছুটি শেষ হলেও আজ অবধি কোন ক্লাস ও পরীক্ষা হয়নি। এতে হতাশায় ভুগছেন নবীণ শিক্ষার্থীরাও। ২০ দলীয় জোটের ডাকা টানা হরতাল-অবরোধের কারণে দূর-দূরান্তে থাকা শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি শূন্যের কোঠায় নামায় ক্লাস নিতে অনিহা দেখা দিয়েছে শিক্ষকদের মাঝেও। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রমতে, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ২৪টি ডিসিপ্লিনে ৫ হাজারেরও বেশী শিক্ষার্থী রয়েছে। নাশকতা এড়াতে অধিকাংশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে আসছে না। এছাড়া কতিপয় শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে আসলেও ক্লাস করতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন। ক্লাস ও পরীক্ষার অনিশ্চয়তায় বিপাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ অচলাবস্থা নিরসন করে দ্রুত স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু করার দাবি তাদের। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী প্রশান্ত মন্ডল জানান, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে মিড টার্ম পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। হরতাল-অবরোধের কারণে নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা হয়নি। লাগাতার সহিংস রাজনীতির কারণে এখন অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার। তিনি আরো জানান, হরতাল-অবরোধে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস চলাচল বন্ধ থাকে। এ অবস্থায় দূর-দূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা আসতে পারে না। ইংরেজী ডিসিপ্লিনের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান জানান, অবরোধের কারণে সেশন জটে পড়তে হচ্ছে। চারুকলা অনুষদের অংকন এবং চিত্রায়ন বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী অমিত বিশ্বাস জানান, ৮ থেকে ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের ছুটি ছিল। ছুটি শেষ হওয়ার ১১ দিন পেরিয়ে গেলেও আজ অবধি তাদের ছুটি বলবৎ রয়েছে। কবে নাগাদ এর শেষ হবে, তা জানা নেই বলে আক্ষেপ করেন এ শিক্ষার্থী। অমিত আরো বলেন, শেষ বর্ষে ভর্তি হতে হলে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। চলমান রাজনৈতিক সংকটে তাদের রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া যথাসময়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়া এবং ক্লাস বন্ধ থাকায় সেমিস্টার পিছিয়ে যাচ্ছে। একই বিভাগের নবীণ শিক্ষার্থী বিনীতা রায় জানান, বছরের শুরুতেই ক্লাস শুরু হওয়ার কথা ছিল। অবরোধ-হরতালের কারণে এখন পর্যন্ত ক্লাসই করতে পারিনি। নিয়মিত ক্লাস করতে না পারায় এখন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোর্স সম্পন্ন হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। হতাশায় ভুগছি। জীব বিজ্ঞান স্কুলের ফরেস্ট্রি এন্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের স্নাতকোত্তর-১ বর্ষের শিক্ষার্থী হিমাদ্রী শেখর বলেন, হরতালে বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনোই কোন ক্লাস হয় না। অবরোধে কতিপয় ডিসিপ্লিনের ক্লাস হলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি একেবারে কম। সামাজিক বিজ্ঞান স্কুলের ডেভলপমেন্ট স্ট্যাডিজ বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী অভিষেক ঘোষ বলেন, ক্লাসের সিডিউল থাকা সত্ত্বেও অবরোধের শুরু থেকে তা হচ্ছে না। দ্রুত এ অচলাবস্থা নিরসনে রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আকুল আবেদন তার। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মী মোঃ হারুন বলেন, অবরোধের শুরু থেকে একটি বাসও ক্যাম্পাসের বাইরে যায়নি। খুবি’র গ্রন্থাগারিক ড. কাজী মোকলেছুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা লাইব্রেরীতে নিয়মিত বই লেনদেন, পত্রিকা পাঠ ও পড়াশুনায় ব্যস্ত থাকে। এছাড়া এটি ওয়াইফাই জোন হওয়ায় শিক্ষার্থীরা এখানে নেট ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। তবে বিদ্যমান সংকটের ফলে লাইব্রেরীতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমেছে। আগে যেখানে বিকাল ৫টার পর শিক্ষার্থীদের আনাগোনা লাইব্রেরীতে বেশী ছিল। এখন তা নেই। খুবি’র সমাজবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের প্রধান ড. প্রফেসর মোঃ আব্দুল জব্বার বলেন, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নেই। কিভাবে ক্লাস নেব। ক্লাস রিপ্রেজেন্টটিটিভদের খবর দেয়া হয়েছে। তাদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে উপস্থিত হওয়ার আহ্বান করা হবে। তিনি আরো বলেন, ক্লাস না করেও শিক্ষার্থীদের টেকনোলজির মাধ্যমে শিক্ষণের ব্যবস্থা করা যায়। তবে শিক্ষার্থীরা উপস্থিত না হওয়ায় সেটি সম্ভব হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) টিপু সুলতান জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই চলছে। তবে কোন বিভাগে ক্লাস বা পরীক্ষা নেয়ার বিষয়টি ওই বিভাগের একান্ত নিজস্ব ব্যাপার। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মোঃ ফায়েক উজ-জামান বলেন, নাশকতা এড়াতে শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ক্লাস নেয়ার বিষয়টি ঐচ্ছিক করা হয়েছে। যেসব শিক্ষার্থী ক্লাস করবেন তাদের অবশ্যই ক্লাস নেয়া হবে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুলগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।