২০১০ সালের ৭ জুলাই মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য একটি শিল্প পার্ক স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। সে মোতাবেক ২০১৩ সালের শেষ দিকে গজারিয়ার বাউশিয়া, মধ্যম বাউশিয়া, পোরারচক, চৌদ্দকাহনিয়া মৌজায় ৪৯২ একর জমি অধিগ্রহণ করে মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসন, যার মূল্য ৭৭৭ কোটি টাকা। জমির মালিকদের পাওনা পরিশোধে বিজিএমইএর কাছে অর্থ চেয়ে ২০১৩ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে তিনটি চিঠি দেয় জেলা প্রশাসন। কিন্তু বিজিএমইএ অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় গত মাসে অধিগ্রহণ বাতিল করা হয়।
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল হাসান বাদল বলেন, তৈরি পোশাক শিল্প পল্লীর জমি অধিগ্রহণ বাতিল করা হয়েছে। তবে অর্থের সংস্থান হলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আবার অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জুনের মধ্যে বিজিএমইএ অর্থ পরিশোধ করতে পারলে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় কোনো সমস্যা হবে না।
এদিকে অধিগ্রহণ বাতিল হওয়ার বিষয়টিতে একমত নয় বিজিএমইএ। তাদের দাবি, মুন্সীগঞ্জের জমি গার্মেন্ট শিল্প পার্কের জন্যই থাকছে। কারণ অধিগ্রহণের সময় বাড়িয়ে নেয়া হয়েছে। শিগগিরই সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই শেষে সব টাকাও পরিশোধ করা হবে।
যোগাযোগ করা হলে বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, অধিগ্রহণের সময় বাড়িয়ে নেয়া হয়েছে। তাই বাউশিয়ার জমি গার্মেন্ট শিল্প পার্কের জন্যই বরাদ্দ আছে। আগামী এপ্রিলে সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হবে এবং জুনের মধ্যে সব অর্থও পরিশোধ হবে।
জানা গেছে, আইন অনুযায়ী অধিগ্রহণের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জমির অর্থ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে জমি মালিককে ফেরত দিতে হয়। তৈরি পোশাক শিল্প পার্কের জমির ক্ষেত্রে এ রকম ঘটেছে। এখন নতুন করে ভূমি অধিগ্রহণে আইনি জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। এ জমি অধিগ্রহণ করে অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে বিব্রত হয়েছে স্থানীয় জেলা প্রশাসন। ভূমি মালিকদের কাছে আস্থার সংকটে পড়েছে জেলা প্রশাসন। নির্দিষ্ট সময়ে অর্থ পরিশোধ করলে এত দিনে বিজিএমইএ ভূমি উন্নয়নের কাজ শুরু করতে পারত বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
সূত্র জানায়, বিজিএমইএ দেশী ও বিদেশী প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করে। বিশ্বব্যাংক এ প্রকল্পে অর্থায়নে এগিয়ে আসে। একইভাবে আগ্রহ প্রকাশ করে চীনভিত্তিক হংকং কেআরডি ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট গ্রুপ লিমিটেড। তবে এসব প্রতিষ্ঠান অর্থায়নের জন্য সরকারি গ্যারান্টি চায়। ফলে অর্থ সংগ্রহে ব্যর্থ হয় বিজিএমইএ। সর্বশেষ চীনা প্রতিষ্ঠান ওরিয়েন্টাল ইন্টারন্যাশনাল হোল্ডিং অর্থ বিনিয়োগে এগিয়ে আসে। গত বছরের ১০ জুন বিজিএমইএ ও ওরিয়েন্টাল ইন্টারন্যাশনাল হোল্ডিংয়ের মধ্যে এ বিষয়ে একটি চুক্তি হয়। কিন্তু গত সাত মাসে প্রতিষ্ঠানটি বিজিএমইএকে কোনো অর্থ না দেয়ায় জমির দাম পরিশোধ করতে পারেনি বিজিএমইএ।
দেশের তৈরি পোশাক কারখানার ২৫ শতাংশ পরিকল্পনা অনুযায়ী গড়ে উঠেছে। বাকি ৬০ শতাংশ কারখানা বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের জন্য তৈরি ভবনে এবং ১৫ শতাংশ কারখানা গড়ে উঠেছে আবাসিক ফ্ল্যাটে। বাউশিয়ায় গার্মেন্ট শিল্প পার্ক হলে এসব কারখানা সেখানে স্থানান্তর করা হবে। কিন্তু সেখানে বৃহৎ এ শিল্পের চাহিদার তুলনায় জমি অনেক কম। সরকারের কাছ থেকে পাওয়া জমিতে কারখানা স্থানান্তরে সার্মথ্যবান বড় উদ্যোক্তারাই বেশি আবেদন করেছেন। কিন্তু প্রয়োজন ও আগ্রহ থাকলেও আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় বাউশিয়ায় কারখানা স্থানান্তরে পিছিয়ে পড়ছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।