এমনকি নবজাতক শিশুকে সকালে দুধ ও খিচুরি খেতে দেওয়ার কথা থাকলেও দেয়া হচ্ছে ২টি শক্ত রুটি ও ২টি কলা। তাছাড়া শিশুদের খাদ্যের তালিকাই নেই খাবার মেন্যুতে। আর এহেন লুটপাট দুর্নীতিতে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের টিএইচও জামায়াত সমর্থক মাহবুবুর রহমান হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের মাসোহারা।
এঅবস্থায় রোগীর খাদ্য লুটে নেয়া ঠিকাদার ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মকর্তারা কাধে কাধ মিলিয়ে মাসে পর মাস নীরবে অসহায় রোগীদের খাদ্য লুটে খাচ্ছেন অভিযোগ ভুক্তভুগী রোগী ও তার স্বজনদের।
রাজাপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, শিশুদের ৩ বেলায় দুধ ও খিচুরি খেতে দেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু দেয়া হচ্ছে বড় রোগীদের খাবারই। যা খেতে হচ্ছে শিশু রোগীর অভিভাবকদের। প্রত্যেক বয়স্ক রোগীকে সকালে ২টি কলা, ২টি রুটি ও ২টি সিদ্ধ ডিম দেওয়ার কখা খাদ্য তালিকায় থাকলেও দেয়া হচ্ছে ২টি ছোট কলা ও ২টি ছোট রুটি। দুপুর ও রাতে সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে বিভিন্ন খাবার মেন্যু থাকে। রোগী যেদিন ভর্তি হয় সেদিন না খেয়ে থাকতে হয়। পরের দিন থেকে তাকে খাবার দেয়া হয়। অথচ ভর্তি রেজিস্ট্রার অনুসাসে খাবারের হিসাব দেয়া হয়।
সরেজমিনে রাজাপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুক্রবারের দুপুর ও রাতের ৩৯ জন রোগীর খাদ্য তালিকায় মাথা পিছু রয়েছে ৩১৮ গ্রাম মুরগীর গোশত, ডাল ৫০ গ্রাম ও বিভিন্ন সবজি খাওয়ানোর কথা থাকলেও খাদ্য সরবরাহকারী ঠিকাদার মুরগীর পরিবর্তে এনেছে পাংগাস মাছ।
কিন্তু যদি মুরগীর পরিবর্তে মাছ খাওয়ানো হয়ে তবে, ৪৩৭.৩৮ গ্রাম প্রত্যেক রোগীকে খাওয়ানোর কথা রয়েছে। সে অনুয়ায়ী ৩৯ জন রোগীকে ১৭ কেজি মাছ খাওয়াতে হবে। কিন্তু ৩৯ জন রোগীর জন্য আনা হয়েছে মাত্র ৪ কেজি মাছ এবং ১ কেজি ৯৫ গ্রাম ডাল খাওয়ানোর কথা থাকলেও ৩৯ জন রোগীর জন্য আনা হয়েছে মাত্র ৪শ’ গ্রাম ডাল ।
অভিযোগ রয়েছে, এভাবে প্রতিদিনই সরকারের বরাদ্দকৃত লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে সাধারন রোগীদের খাবার সরবরাহ নিয়ে চলছে পুকুর চুরি করা হচ্ছে। হাতেম মৃধা (৯৫), আয়নালি (৭০) ও রনি (২২) সহ চিকিৎসা নিতে ভর্তি হওয়া রোগীরা অভিযোগ করেন, শুক্রবার সকালে ২টি কলা ও শক্ত ২টি রুটি দেয়া হচ্ছে যা খাওয়ার সম্পূর্ণ অনুপোযুক্ত। তাছাড়া সকালে ২টি করে ডিম খাওয়ানোর কথা শুনেছি, কিন্তু কখানো খাওয়ানো হয়নি।
এছাড়া দুপুরে ও রাতে যে খাবার খাওয়ানো হয় তার মান খুব খারাপ। আর সবচেয়ে নির্মম রসিকতা চলছে প্রসূতী, নবজাতক ও শিশুরোগীদের খাদ্য সরবারহ নিয়ে।
একশিশু রোগীর মা ইয়াসমিন বেগম অভিযোগ করেন, ৬ মাস বয়সী তার শিশু সন্তান মাফুজের অসুস্থতায় তিনি বাচ্চাকে নিয়ে কয়েক দিন হলো ভর্তি হয়েছেন রাজাপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। কিন্তু এখানে তার শিশু সন্তানের জন্য সকালে ২টি শক্ত রুটি ও ২টি কলা দেয়া হয়েছে কিন্তু কোন ৬ মাস বয়সী বাচ্চা কি এ খেতে পারে ?। জানা গেছে, স্বাস্থ্য কেন্দ্রে খাবার সরবরাহের মুল ঠিকাদার জেলার নলছিটির দুলাল তালুকদার এবং সাব কন্ট্রাক্টর স্থানীয় প্রভাবশালী বিএনপি কর্মী মোঃ সজল মৃধা।
ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তারা নিজেরা এককভাবে সারা জীবন খাদ্য সরবরাহ করবে এজন্য কৌশল করে খাদ্যের বরাদ্দ বৃদ্ধির করার দাবিতে ঝালকাঠি আদালতে ঠিকাদার দুলাল একটি মামলা করেছেন এবং ওই মামলার জন্য নতুন করে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের খাদ্য সরবরাহের টেন্ডার হচ্ছে না। এ সুযোগ ও স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে রোগীসহ সকলকে জিম্মি করে রোগীদের খাবারের লক্ষ লক্ষ টাকা দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে হাতিয়ে নিচ্ছে।
এ বিষয়ে সাব কন্ট্রাক্টর মোঃ সজল মৃধা জানান, দিনদিন দ্রব্য মুল্যের উর্ধ্বগতি থাকলেও পূর্বের বরাদ্দ অনুযায়ী বর্তমানেও লোকসান দিয়ে খাদ্য সরবরাহ করছি। তাই তালিকা অনুযায়ী সব সময় খাবার দেয়া সম্ভব হয় না।
এ বিষয়ে রাজাপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের টিএইচও মাহবুবুর রহমান বলেন, শিশুদের জন্য আলাদা কোন মেন্যু নেই, বড়দের খাবার দেয়া হয় তাদের। খাবারের বিষয়টি তিনি নিজেই তদারকি করেন বলেন করিতকর্মা এ চিকিৎসক।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।