নোয়াখালী প্রতিনিধি : পবিত্র ঈদুল-আজহা ও দুর্গাপূজায় ঘরমুখো মানুষকে নির্বিঘ্নে বাড়ি পৌঁছে দিতে, দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে বিরামহীন ছুটে বেরিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বিভিন্ন স্থানে সরেজমিন পরিদর্শন ও তদারকি করেছেন রাস্তা ঘাটের উন্নয়ন কাজ। তবে তিনি সময় পাননি কেবল নিজ জেলা নোয়াখালীর দিকে ফিরে তাকাবার। আর, সে কারণেই জেলার রাস্তাঘাটের বেহাল দশায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন, খোদ নিজ নির্বাচনী এলাকা কোম্পানীগঞ্জসহ- পুরো জেলার মানুষেরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার সদর উপজেলাসহ ৯টি উপজেলার সড়কগুলো দীর্ঘদিন কোনো সংস্কার হয়নি। ফলে, অধিকাংশ সড়কেই সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দের। জরাজীর্ণ এসব সড়ক হয়ে পড়েছে চলাচলের অনুপযোগী। বিশেষ করে, চৌমুহনীতে চারলেন সড়কের অবস্থা খুবই শোচনীয়। ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন এ সড়কে চলছে শ’ শ’ যানবাহন। আর, ধীরগতির যান চলাচলের কারণে সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজটের। দুর্গতির শিকার সুগন্ধা পরিবহণের চালক মোবারক হোসেন বলেন, ‘আমরা মন্ত্রী পাইছি। কিন্তু তার সু-দৃষ্টি পাই নাই। উনি সারা দ্যাশের রাস্তা ঠিক কইর্যা ব্যাড়ান, অথচ নিজ এলাকার দিকে নজর দেওনের সময় নাই।’ আনন্দ পরিবহণের সহকারি আজাদ বলেন, ‘আমাগো মন্ত্রী কামের না, কথার মন্ত্রী। হুদা কথা দিয়া কাম অয় না।’
সরেজমিন দেখা যায়, জেলার প্রাণকেন্দ্র খোদ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের রাস্তাটিরই বেহাল দশা। সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। তখন এ রাস্তাটিকে মনে হয় ছোট খাট খাল।
সড়কটির অবস্থা দেখে মন্ত্রীর এলাকা থেকে আইনি সেবা নিতে আসা আবদুল মালেক দুঃখ করে বলেন, ‘ডিসি সাবের সামনের রাস্তা দিয়ে আঁটতেই জান বার অইজার, তাইলে আঁয়ার রাস্তার কবর নিবো কনে।’
নোয়াখালীর প্রধান বাণিজ্য শহর চৌমুহনীর ওপর দিয়ে যাতায়াত করে চট্টগ্রাম-নোয়াখালী, ঢাকা-নোয়াখালী, ফেনী-নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর-চট্টগ্রাম ও ভোলা-চট্টগ্রামের শ’ শ’ যানবাহন। রাস্তাঘাটের বেহাল দশায় এসব যানবাহনের যাত্রী সাধারণকে পথের বিড়ম্বনার পাশাপাশি, পোহাতে হয় যানজট দূর্ভোগও।
জানা যায়, ২০০৮ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার যানজট নিরসনে এখানকার মহাসড়ককে চারলেনে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয়। সে অনুযায়ী, চৌমুহনী পূর্ববাজার থেকে বেগমগঞ্জ চৌরাস্তা পর্যন্ত প্রায় চারকিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নতি করার জন্য মেসার্স কেএএমএসি কনসোর্টিয়াম নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ২০০৯ সালের ১৬ জুন এবং ২০১১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কার্যাদেশও দেয়া হয়।
এরমধ্যে, বেগমগঞ্জ চৌরাস্তা থেকে করিমপুর রোড এবং করিমপুর রোড থেকে চৌমুহনী পূর্ববাজার সড়কের কাজ ২০১১ সালের ডিসেম্বরে শেষ করার কথা থাকলেও- তা শেষ হয় ২০১২ সালে। সে সময় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহার ও অপরিকল্পিতভাবে সড়ক নির্মাণের অভিযোগ ওঠে। কাজটি সড়ক ও জনপথ বিভাগকে বুঝিয়ে দেয়ার আগেই এতে অনেক স্থানে গর্ত সৃষ্টি হওয়ায়, এ অভিযোগের সত্যতাও মেলে।
কিন্তু তারপরও ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে কেবলমাত্র একটি চিঠি দিয়ে দায় সাড়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এটি ছাড়াও, জেলার এলজিইডি এবং জনপথ বিভাগের অনেক রাস্তাই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। মাইজদী সোনাপুর পুর থেকে চরজব্বার থানা পর্যন্ত এলজিইডির ১৫ কিলোমিটার সড়ক জরাজীর্ণ, মাইজদী জজকোর্ট সড়ক, জেলা প্রশাসক সড়ক, কালেকটরী ভবন সড়ক, সরকারি আবাসিক সড়ক, হাউজিং সড়ক, মাইজদী থেকে হাসানহাট সড়ক, সোনাপুর থেকে ইসলামীয়া মাদ্রাসা পর্যন্ত, উত্তর সোনাপুর থেকে তাকপুকুরপাড়, মাইজদী বাজার রাজগঞ্জ সড়ক, মাইজদী বাজার আনছার ক্যাম্প সড়ক, মাইজদী বাজার থেকে জেলখানা সড়ক, নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সড়ক, সার্কিট হাউজ সড়ক, দত্তেরহাট চৌমুহনী হাজীপুর সড়ক এবং বেগমগঞ্জ চৌরাস্তা থেকে সোনাইমুড়ী পর্যন্ত দীর্ঘ ১৫ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক।
এ ছাড়া জেলা সদর, বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী, চাটখিল, সেনবাগ, কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট ও সুবর্ণচর উপজেলার এলজিইডির অনেকগুলো প্রধান সড়কসহ গ্রামাঞ্চলের সড়কগুলোর অবস্থাও খারাপ। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় এসব সড়কে চলাচলে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন স্থানীয়রা।
জেলার রাস্তাঘাটগুলোর এ দুরাবস্থার বিষয়ে জানতে সংশ্লিষ্ট সড়ক ও জনপথ এবং এলজিইডি দফতরে যোগাযোগ করলে দায়িত্বশীলরা সবাই পূজা ও ঈদের ছুটিতে রয়েছেন বলে জানানো হয়।
এ বিষয়ে জানতে, বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।