সুনামগঞ্জ থেকে ফিরে এম শাহজাহান আহমদ, মৌলভীবাজার: সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের লোকজনের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম একটি সড়ক উন্নয়নে স্থানীয় সাংসদ, এলজিইডি প্রতিমন্ত্রী ও এলজিইডি’র চিফ ইঞ্জিনিয়ারের নির্দেশ প্রদানের পরও অদৃশ্য কারনে প্রকল্পটি ফাইলবন্দী হয়ে রয়েছে। নদী ও জলাশয় বেষ্টিত এ এলাকার লোকজন ইতিমধ্যে স্বেচ্ছায় সড়কে ৩০শতাংশ মাটি ভরাট করে দেন কিন্তু গত অর্থবছরেও প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি। জানা যায়, উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের গোয়ালাবাজার-সৈয়দপুর এলজিইডি’র রাস্তা হতে বুধরাইল-শিবগঞ্জ বাজার পর্যন্ত এ সড়ক (আইডি নম্বর ৬৯০৪৭৫০৭১) নির্মাণে বিগত সরকারের আমলে স্থানীয় সাংসদ বর্তমান অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান ডিও লেটার দিয়ে তৎকালীন এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের কাছে প্রেরণ করেন। এর প্রেক্ষিতে প্রতিমন্ত্রী জরুরী ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য এলজিইডি’র চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে নির্দেশ দেন। এ ব্যাপারে প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য এলজিইডি’র চিফ ইঞ্জিনিয়ার সুনামগঞ্জ এলজিইডিকে নির্দেশ প্রদান করেন। এর আলোকে প্রকল্পের ফাইলটি জগন্নাথপুর উপজেলা এলজিইডি’র কাছে প্রেরণ করা হয়। জগন্নাথপুর এলজিইডি’র একটি টিম সরেজমিনে সড়কটি পরিদর্শন, স্ক্যাচ ম্যাপ তৈরী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলেন এবং সড়কটির সঠিক বর্ণনা, প্রয়োজনীয়তা ও আর্থিক হিসাব উল্ল্যেখ করে প্রথমে সুনামগঞ্জে ও পরে প্রতিবেদনটি চিফ ইঞ্জিনিয়ারের কাছে প্রদান করা হয়। চিফ ইঞ্জিনিয়ার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রকল্প পরিচালককে নির্দেশ দিলে গত অর্থবছরে সুনামগঞ্জ এলজিইডিতে এ প্রকল্পে খরচের পরিমান অর্থ থাকার পরও প্রকল্পটি ফাইল বন্দী থেকে গেছে। এর ফলে অবহেলিত ও যোগাযোগ বঞ্চিত ৩টি ইউনিয়নের ১৫/১৬টি গ্রামের লোকজনের মধ্যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় লোকজন জানান, উপজেলার সৈয়দপুর-শাহারপাড়া , পাইলগাঁও ও রানীগঞ্জ ইউনিয়নের কুবাজপুর, কিশোরপুর, খালিশাপাড়া(খাসিয়াপাড়া), উলুকান্দি, উলুচন্দ, বুরহানপুর, বুধরপুর, রমাপতিপুর, বুধরাইল, মুরাদাবাদ, ফেছিশ্যাওরা, ইসলামপুর, ব্রাহ্মণগাঁওসহ ১৫/১৬টি গ্রামের লোকজনের যাতায়াতের লক্ষ্যে এ রাস্তাটি নির্মানের দাবী দীর্ঘদিনের। গ্রামগুলোর অবস্থান জলাশয় বেষ্ঠিত দ্বীপ আকৃতির হওয়ায় এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষা শেষে বিশেষ করে মেয়েদের উচ্চ শিক্ষার পথ রুদ্ধ হয়ে আছে। শিবগঞ্জ অরুনোদয় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় নিকটবর্তী থাকার পরও রাস্তার অভাবে ও জলাশয়ের কারণে মেয়েরা স্কুলে যেতে পারেনা। এলাকাবাসী ক্ষোভের সাথে বলেন, সড়কটির কাজ শুরু না হলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভোটের হিসাব-নিকাশও পাল্টে যেতে পারে। পাইলগাঁও ইউপি সদস্য শামীম আহমদ বলেন, এলাকার পশ্চিম প্রান্তের ভুক্তভোগী মানুষ বিকল্প কোন রাস্তা না থাকায় এ রাস্তা দিয়েই সৈয়দপুর- খাদিমপুর-গোয়ালাবাজার হয়ে তৎকালীন সিলেট জেলা সদরে যেতেন । কিন্তু স্বাধীনতার ৪২ বছরে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের নিকট রাস্তাটি নির্মাণের জন্য আবেদন জানালেও কেউ কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি এবং এখনও বিকল্প কোন যোগাযোগ মাধ্যম সৃষ্টি হয়নি। অবশেষে অত্র এলাকার কৃতি সন্তান, লন্ডন থেকে প্রকাশিত ইংরেজি পত্রিকা ‘সাপ্তাহিক বাংলা মিরর’ সম্পাদক আব্দুল করিম গনি মানুষের এই দূর্দশা লাঘবে উদ্যোগ নেন এবং দেশে অবস্থান করে রাস্তাটি এলজিইডি’র অন্তর্ভূক্ত করে প্রকল্প তৈরী করান। আওয়ামীলীগের বিগত সময়ে সংসদ সদস্য ও বর্তমান সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নানের কাছ থেকে তিনি ডিও লেটার সংগ্রহ ও প্রয়োজনীয় প্রচেষ্টা চালান কিন্তু সকল কাজ সম্পন্নের পর প্রকল্পের কাজ কেন শুরু হচ্ছেনা তা আমাদের বোধগম্য নয়। কিশোরপুর এলাকার মৌলানা দবিরুল ইসলাম বলেন, আদিকাল থেকে আমাদের এলাকার লোকজন হেমন্তে পায়ে হেটে পূর্বাঞ্চলের সাথে এ পথ ধরেই যোগাযোগ রাখছে। সরকার আসে সরকার যায় কিন্তু প্রবাসী অধ্যূষিত এ এলাকার মানুষ যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এত অবহেলিত তা চোখে না দেখলে কেউ বুঝতে পারবেনা। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবীর প্রেক্ষিতে অত্র এলাকার সুযোগ্য সন্তান, প্রবাসী সাংবাদিক ও সম্পাদক আব্দুল করিম গনি রাস্তাটির প্রকল্প তৈরী করানোর পর থেকে সরকারি কর্মকর্তারা এলাকায় এসে কয়েকবার মাপ-জোক নেয়ার পর এলাকাবাসীর মধ্যে আশার আলো জেগে উঠে। এমনকি কর্মকর্তারা যেসব স্থানে মাটির সমস্যা দেখিয়েছেন স্থানীয়ভাবে চাঁদা তুলে মাটি কেটে রাস্তাটি চলাচলের উপযোগী ও করা হয়েছে। বিশেষ করে যে সব অভিভাবকরা সন্তানদের লেখাপড়া নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা বেশী খুশী হয়েছিলেন, রাস্তাটি নির্মিত হলে সন্তানরা স্কুলে যেতে পারবে। অবহেলিত গ্রামগুলোতে সুষ্ঠু লেখাপড়ার পরিবেশ সৃষ্টি হবে কিন্তু কর্তৃপক্ষ অহেতুক কালক্ষেপন করে আসছে এমনকি এ রাস্তায় কিছু মাটির জন্য স্থানীয় সাংসদ বিগত ট্রামে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিলেও তিনি সরেজমিনে এসে অচিরেই ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে এলাকাবাসীকে আশ্বস্থ করলেও অদ্যাবধি এ রাস্তায় সরকারিভাবে একবিন্দু মাটি ও পড়েনি। রাস্তা নির্মানের উদ্যোক্তা আব্দুল করিম গনি জানান, এই রাস্তাটি নির্মান করা হলে সৈয়দপুর-খাদিমপুর-গোয়ালাবাজার হয়ে সিলেটের সাথে, বুধরপুর-চকরিয়া-বেগমগঞ্জ হয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সাথে, শিবগঞ্জ হয়ে জগন্নাথপুর উপজেলা সদরের সাথে এবং রানীগঞ্জ-আউশকান্দি হয়ে আঞ্চলিক মহাসড়কের সাথে সংযুক্ত হয়ে ঢাকার সাথে কম সময়ে যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভব। এছাড়া বঞ্চিত এ এলাকার কমপক্ষে ১৫/১৬টি গ্রামের মানুষের যাতায়াত সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। আধুনিক সভ্যতার এ যুগেও এসব এলাকার মানুষদের বর্ষায় নৌকা ও হেমন্তে পায়ে হেঁটে অনেক ঘুরে উপজেলা, জেলাসদর ও বিভাগীয় শহরে যাতায়াত করতে হয়। এ রাস্তার প্রকল্প তৈরী করতে স্থানীয় সাংসদ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, এলজিইডি’র উচ্চ পর্যায় থেকে উপজেলা কর্মকর্তারা পর্যন্ত আন্তরিক আছেন। বিগত অর্থ বছরে এই কাজটি শুরুর কথা ছিল এমনকি এলজিইডি’র চিফ ইঞ্জিনিয়ার প্রকল্প পরিচালককে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ ও দিয়েছিলেন কিন্তু অদৃশ্য কারণে ফাইলটি সেখানেই আটকে আছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।