সকল মেনু

এক’শ বত্রিশেও ম্যারাথন ওমর আলী !

 চাটমোহর (পাবনা)প্রতিনিধি, ২০ নভেম্বর :  বয়স যা বলিছি তাই সই। বিশ্বাস হলি করেন, না হলি আমার করার কিছু নাই। আমি সেই আমলে তামার একআনি-দোআনি পয়সা দেখিছি । বৃটিশ আমলে আমি যে বছর প্রথম বিয়ে করি সে বছরই ঈশ্বরদী-সিরাজগঞ্জ রেল লাইনে মাটি কাটার কাজ শুরু হয়। আমি তখন বেশ বড়। বিয়ে করিছি। বয়সটা সত্যিই এতো কিনা জানতে চাইলে একটু রেগে গিয়েই এ ভাবে জানালেন, দীর্ঘায়ু, পরিশ্রমী, কঠোর ধর্মীয় জীবনযাপন করা ওমর আলী(১৩২)! এখনো সটান চলাফেরা তার। গত সোমবার পাবনার চাটমোহর উপজেলার পার্শ্বডাঙ্গা ইউনিয়নের গুয়াখড়া হাটের পানহাটায় বসে কথা হলো তার সাথে। তার আগে রবিবার তার বাড়ী গিয়ে পাওয়া যায়নি। গিয়েছিলেন চাটমোহরের অমৃতাকুন্ডা হাটে পান বিক্রি করতে। এই বয়সেও ওমর আলী প্রায় ৫০ কিলোমিটার পথ একটি লক্কর-ঝক্কর বাই সাইকেলে প্যাডেল মেরে হাটে হাটে পান বিক্রি করেন। সপ্তাহের ছয়দিনই তিনি হাটে যান। বাড়ী ফেরেন অনেক রাতে। তার শরীরের টানটান ত্বক আর মুখে অক্ষত ৩২ পাটি চকচকে দাঁত দেখলে সত্যিই ঠাওর করা কঠিন, মানুষটার বয়স এতো হয়েছে। তবে তার পরিবার, গ্রামের মানুষ সবার সাথে কথা বলে সত্যতা পওয়া যায়। গ্রামে তার সমসাময়িক বয়সের কেউ নেই। তার পরিবার ও গ্রামবাসী জানান, ওমর আলীর পিতা মেহের উল্লাহ ১৩৫ বছর বেঁচে ছিলেন। পাবনার চাটমোহর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের ধুলাউড়ি গ্রামের শেষ প্রান্তে বোর্ণী গ্রাম। নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার জোনাইল ইউনিয়নের এই বোর্ণী গ্রামেই ওমর আলীর বাড়ী। চাটমোহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের গ্রাম থেকে তিনি চাটমোহরের অমৃতাকুন্ড, গুয়াখড়া, মির্জাপুর, জোনাইল, মথুরাপুর, কাটাখালী ও চাটমোহর নতুন বাজার হাটে পান বিক্রি করতে আসেন এখনো বাই সাইকেলের পেছনে পানের বিরা (ঝাঁকা) নিয়ে।

ওমর আলী জানান, তার জন্ম তারিখ ১০ ফেব্রুয়ারী ১৮৮১ সাল। সে হিসাবে তার এখন বয়স চলছে ১৩২ বছর। তার সহধর্মিনী ৩ জনের মধ্যে প্রথমা গত হয়েছেন বহুদিন। বর্তমানে খাদিজা বেগম ও আবিরজান বেওয়া নামের দুই স্ত্রী রয়েছেন। ৩ জন স্ত্রীর সন্তান সংখ্যা ২৩ জন। এরমধ্যে ৯ সন্তান মারা গেছেন। মাস ছয়েক আগে তার বড় ছেলে ওসমান আলী ৮৫ বছর বয়সে মারা গেছেন। ওমর আলী জানান, জীবিতদের মধ্যে ৪ ছেলে ৮ মেয়ে রয়েছেন। আর তাদের সংসারে নাতিনাতনীর সংখ্যা প্রায় ৫৪ জন। সম্প্রতি এক নাতনীর ঘরে জন্ম নিয়েছে পৈলনাতি। গত রবিবার বোর্ণী গ্রামে তার বাড়ী তাকে না পেয়ে কথা হয় তার স্ত্রী আবিরজান ও পরিবারের অন্যান্যদের সাথে। ৮৫ বছর বয়সী তার স্ত্রী আবিরজান বলেন, আমারতো প্যান ফিদা কালে বিয়ে হইছে। নাতনী (দ্বিতীয় ছেলের মেয়ে) অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী জুলেখা হেসে বলে, আমার দাদাতো দূর্দান্ত দাদা। রোদবৃষ্টি, ঝড়ে ভাঙ্গা সাইকেল নিয়ে হাটে হাটে ঘোরে। ছেলেবউ জোহরা খাতুন বলেন, আমাগারে তো অভাব নাই। তাকে এই বয়সে বাইরে যাতি নিষেধ করি, সে শোনে না। ওমর আলী জানান, আমার বাবাও পান ব্যবসায়ী ছিলেন। আমিও সারা জীবন এ ব্যবসাই করছি। পানের বরজ আছে আমার। বাবারও ছিলো। ছেলেদেরও আছে। আমার এলাকার প্রধান ফসলই পানচাষ। তিনি বলেন, আমি বৃটিশ আমলে ঘোড়ায় চড়ে চাটমোহরের অষ্টমনিষা-মির্জাপুর হাটে পান নিয়ে গেছি। তার দাদা আরবের খোরাশানে যুদ্ধ করতে গিয়েছিলেন বলে জানান। বলেন, সাইকেল না চালালে আমার শরীর খারাপ হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top