চারিত্রিকভাবে দেউলিয়া সংগঠনগুলো ছাত্রশিবিরকে প্রতিপক্ষ মনে করে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, কিছু সংগঠন নিজেদের বড় মনে করলেও তাদের কর্মসূচিতে চরিত্র গঠনের কার্যক্রম নেই, বরং চারিত্রিকভাবে দেউলিয়া সংগঠনগুলো ছাত্রশিবিরকে প্রতিপক্ষ মনে করে। আর কিছু ইসলামী সংগঠন এখনো সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সঠিক অবস্থান তৈরি করতে পারেনি। এ অবস্থায় ছাত্রশিবিরকেই ছাত্রসমাজের চরিত্র গঠন ও মানসিক উৎকর্ষ সাধনের দায়িত্ব নিতে হবে। ছাত্রসমাজের প্রিয় ও আস্থায় যে জায়গা তৈরি হয়েছে, সেটাকে নিয়ামত ও বাড়তি সুযোগ মনে করে অন্তরে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও বেশি বেশি কাজের মাধ্যমে তার জন্য শুকরিয়া আদায় করা জরুরি।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ছাত্রশিবিরের ৪৮ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে নোয়াখালী জেলার শহর শাখার আয়োজন “ইবনে আউফ কমার্স কার্নিভাল-২৫ পুরষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
জাহিদুল ইসলাম আরও বলেন, চব্বিশের আন্দোলনে দুই হাজার শহীদ ও হাজার হাজার ছাত্র-জনতা আহত হওয়ার বিনিময়ে সফলতা এসেছে। এই সফলতার প্রথম শহীদ আবু সাঈদ। তবে আমরা সবাই এই আন্দোলনের সামনে ছিলাম। শিবির মেধাবীদের সংগঠন। ছাত্রদের সঙ্গে নিয়ে আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করতে চায়। জাতির সামগ্রিক উন্নতিতে কোনোও নেতা কাজ করেননি। এখন নতুনদের এগিয়ে আসতে হবে। আমরা জাহেলিয়াতমুক্ত নতুন প্রজন্ম সৃষ্টি করতে চাই। কারণ নতুন প্রজন্ম সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে জানে।
আওয়ামী সরকারের আমলে তাদের কোণঠাসা করে রাখা হয়েছিল উল্লেখ করে শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি বলেন, গত সাড়ে ১৫ বছর ছাত্রশিবিরকে ক্যাম্পাসে কার্যক্রম পরিচালনার কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি। এমনকি মাদরাসাগুলোতেও তাদের স্বনামে দাওয়াত দেওয়ার পথ রুদ্ধ করা হয়েছিল। ছাত্রসমাজ থেকে দূরে রাখতে ছাত্রশিবিরের নামে নানান রকম মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে তাদের নেগেটিভ চরিত্রের সংগঠন হিসেবে উপস্থাপন করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা বাসা থেকে তাদের ধরে নিয়ে গিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তারা মনে করেছিল শিবিরকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে, শিবিরের নাম-নিশানা মুছে ফেলে দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করে ছাত্রশিবির এখন ছাত্রসমাজের কাছে সবচেয়ে আপন সংগঠন।
তিনি আরও বলেন, শিবিরের ৪৮তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে আমাদের প্রতিপাদ্য ঠিক করেছি মেধা ও সততায় গড়ব সবার বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশটা আমার হবে আপনার হবে, যে বাংলাদেশে কোনো ধর্মীয় বৈষম্য থাকবে না, যে বাংলাদেশে কোনো শ্রেণি-পেশার বৈষম্য থাকবে না, যে বাংলাদেশে ধনী-গরিব কোনো বৈষম্য থাকবে না। সবাই তার নাগরিক সমান সুযোগ পাবে এবং সবাই তার ন্যায়বিচার পাবে, সবাই তার অধিকার পাবে এমন বাংলাদেশ আমরা গড়তে চাই। আমরা সবার সহযোগিতা চাই, দোয়া চাই এবং আগামী দিনে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে চাই। তিনি বলেন শিবির চাই এদেশের ছাত্র সমাজের মাঝে মেধা ও যোগ্যতার বিকাশ ঘটাতে। বাংলাদেশ অপার সম্ভাবনার দেশ, কিন্তু দূর্নীতি, চাঁদাবাজি, অপরাজনীতি ও দক্ষ নেতৃত্বের অভাবে কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেনি। এতোদিন আমাদেরও সুযোগ দেয়া হয়নি।
তিনি বলেন, এখন আমরা দক্ষ, যোগ্য এবং মানবিক মানুষ গড়ে তোলার কাজে নিয়োজিত আছি। আগের নেতারা চিন্তা করতেন কীভাবে ভোট ডাকাতি ও রাতে ভোট করে গণহত্যা চালিয়ে তাদের রাজত্ব কায়েম করা যাবে। পশ্চিমারা আমাদের দেশকে লুটপাট করেছে এখন তারা আমাদেরকে নানা বিষয়ে শিক্ষা দিতে চায়। অথচ মুসলমানরা একসময় সমৃদ্ধ ছিলো শিক্ষা, সাহিত্য, ব্যবসা-বাণিজ্যে সর্ব ক্ষেত্রে অগ্রসর ছিলো। আমরা মুসলমানদের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে চাই। শিবিরের এই কাজে অনেক বাঁধা, জুলাই বিপ্লবের পূর্বে ২৩৪ জনকে শহিদ করা হয়েছিল এবং এখনো সাতজন গুম আছেন। ২৪ এর বিপ্লবে অন্য সকল মানুষের মতো শিবির জীবন দিয়ে রক্ত দিয়ে আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে এই বিপ্লবকে সফল করতে সহযোগিতা করেছে।
এদিকে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে উপলক্ষে নোয়াখালী শহর শহর শাখার আয়োজিত ব্যতিক্রমী ইবনে আউফ কমার্স কার্নিভাল শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। তরুণ প্রজন্মকে ব্যবসায়িক জ্ঞান সমৃদ্ধি করে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে এই কমার্স কার্নিভালের আয়োজন করা হয়। এতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯ টায় নোয়াখালীর শিল্পকলা একাডেমির মাঠে নোয়াখালী শহর শিবিরের আয়োজনে কার্নিভালটি শুরু হয়, শেষ হয় বিকেল সাড়ে ৫ টায়। এতে বিজনেস আইডিয়া, বিজনেস কুইজ ও রুবিকস কিউবের উপর প্রতিযোগিতায় ৪০ টি দলের ১১০ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ইবনে আউফ কমার্স কার্নিভাল এ বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।
কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্য ও নোয়াখালী শহর শাখার সভাপতি হাবিবুর রহমান আরমানের সভাপতিত্বে এসময় শিবিরের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ, কেন্দ্রীয় ব্যবসা বিষয়ক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ সিবগা, এডভোকেট রাকিব আবদুল্লাহ, মো. আহমাদুল্লাহ আজিজি, ডা. সাইফুল্লাহ সাঈফ, মো. জামসেদুল ইসলামসহ জেলা ও উপজেলার নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।