জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে যার যে ভূমিকা ছিল মানুষই তার সাক্ষী। কিন্তু দেশটা স্বাধীন হওয়ার পরে কেউ কি জনসভা করে, রাস্তায় মিছিল করে, পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে অথবা কোনো জায়গায় একটা বক্তব্য রেখে বলেছে, আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা মানি না। এমন কোনো দলের নাম আপনারা জানেন? সব দল প্রিয় দেশের স্বাধীনতাকে মেনে নিয়েছে। স্বেচ্ছায় গ্রহণ করেছে, সানন্দে গ্রহণ করেছে। সকলেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার উন্নয়নের গর্বিত অংশীদার হতে চায়।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় নারায়ণগঞ্জের ওসমানী পৌর স্টেডিয়ামে জেলা ও মহানগর জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াতের আমির বলেন, নারায়ণগঞ্জকে সন্ত্রাসের রাজধানী বানিয়ে রাখা হয়েছিল। আমার আরও অনেক আগে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একজন আমির ছিলেন। এই নারায়ণগঞ্জের গডফাদার খ্যাত, একজন দুর্ধর্ষ লোক মহাসড়কের পাশে ৭২ ফুট লম্বা একটা ব্যানার টাঙিয়ে রেখেছিলেন। উনি সেই ব্যানারে লিখেছিলেন, অমুকের প্রবেশ নারায়ণগঞ্জে নিষিদ্ধ। আর এক ধাপ এগিয়ে তিনি জেলা প্রশাসক এবং জেলা পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে একটা সময় বলে রেখেছিলেন- ‘ডিসি এসপি সাহেব- আমার নামে খুনের একটি অগ্রিম মামলা দায়ের করে রাখেন। আমি অধ্যাপক গোলাম আযমকে খুন করতে চাই। স্বৈরাচারী সরকারের জুলুমের শিকার হয়ে কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি (অধ্যাপক গোলাম আযম) দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। কিন্তু গডফাদারের সুযোগ হয়নি সরাসরি তাকে খুন করার। এই অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবকেই তিনি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন নারায়ণগঞ্জের মাটিতে। যে ভাই নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন, আজকে তিনি কোথায়?
এই বাংলাদেশে কে কোন ধর্মের এই প্রশ্ন সম্পূর্ণ অবান্তর উল্লেখ করে শফিকুর রহমান বলেন, ১৮ কোটি মানুষের একটি দেশ, একটা সাজানো ফুলের বাগান। ফুলের বাগানে এক জাতের গাছ দিয়ে ফুলের বাগান সাজানো হয় না। অতএব বাংলাদেশে যারা জন্মগ্রহণ করেছেন, তিনি যে ধর্মেরই হোন না কেন তিনি দেশের একজন গর্বিত নাগরিক।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান সকলকে সমান অধিকার দিয়েছে সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, কষ্টের বিষয় ৫৪ বছর এই জাতিকে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করে রাখা হয়েছে। এই কাজটা সুকৌশলে আওয়ামী লীগ করেছে। তারা প্রথমে পার্বত্য এলাকার লোকদের উসকে দিল। নেতা বললেন- বাংলাদেশে যারা বসবাস করেন তাদের সকলের একমাত্র পরিচয় তারা বাঙালি। এখানে যারা থাকবে বাঙালি হয়ে থাকতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম তার এই কথায় প্রতিবাদে গর্জন করলো অস্থির হয়ে উঠল। আমরা বাঙালি নই, আমরা পাহাড়ি। তিনি একটা বিভক্তি প্রথমেই টেনে দিলেন। সেই যে পার্বত্য চট্টগ্রাম অশান্ত হলো আজ পর্যন্ত আর শান্তি ফিরে আসে নাই।
শফিকুর রহমান বলেন, শান্তি বাহিনী নামে একটা বাহিনী হলো। তাদের হাতে ১০ হাজার সামরিক কর্মকর্তা এবং আমাদের সৈনিক নিহত হলো, সাধারণ মানুষ নিহত হলো। এমনকি তারা নিজেদের মাঝে আবার বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে নিজেরা নিজেদেরকে খুন করলো। সেই যে খুন শুরু হলো সেটা এখনো অব্যাহত থাকলো। তার পরে তারা কী বললেন? বললেন যে- বাংলাদেশ দুই ভাগে বিভক্ত। স্বাধীনতার পক্ষে একদল আর বিপক্ষে আরেক দল। এখানে জাতিকে আরেকবার ভাগ করা হলো।
আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছিলেন। যতগুলো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ছিল, সব তারা ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। তিনটি মৌলিক সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। একটি হচ্ছে আইন প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান, দ্বিতীয়টা হচ্ছে নির্বাহী, তৃতীয়টা হচ্ছে বিচারব্যবস্থা। এসবগুলোকে আওয়ামী লীগ ধ্বংস করেছে। এমনকি সুপ্রিম কোর্টের বিচারক এজলাসে দাঁড়িয়ে তিনি বলতে পারেন যে, আমি হচ্ছি শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ। একজন বিচারক যখন শপথ নেন বিচারক হিসাবে, তখন তিনি বলেন যে, আমি তার প্রতি কোনো পক্ষ বিপক্ষ অবলম্বন করব না। আমি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকব। কারও প্রতি অনুকম্পা দেখাবো না এবং কারও প্রতি আমি বিরাগভাজন হব না। যার যেটা পাওনা বিচারের মাধ্যমে আইনের ভিত্তিতে সে সেটা পাবে। কিন্তু বিচারক যখন বলে আমি শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ আমি অমুক দলকে অন্তরে ধারণ করি তার পক্ষে কী আর বাংলাদেশের মানুষকে সুবিচার দেওয়া সম্ভব? সে বিচারকদের কেউ কেউ এ দেশের নন্দিত গর্বিত মানুষগুলোকে ফাঁসির রায় দেওয়ার পরে টকশোতে গিয়ে বলতেন অমুককে আজ ফাঁসির রায় দিয়ে এসেছি। সাইদি সাহেবকে ফাঁসি দিয়ে এসেছি। মওলানা নিজামীকে ফাঁসি দিয়ে এসেছি। আলী আহসান মুজাহিদকে ফাঁসি দিয়ে এসেছি। নাম ধরে ধরে বলতেন। তিনি একজন বিচারপতি। তিনি টকশোতে যাবেন কেন? তিনি যদি রাজনীতি করতে চান তাহলে বিচারকের আসনে রিজাইন করে আসা উচিত।
শফিকুর রহমান বলেন, গত ৫ তারিখের পরে তারা পালিয়ে গিয়ে অন্য দেশে আশ্রয় নিতে লাগলেন। তারা সিলেট সীমান্ত দিয়ে পাড় হওয়ার জন্য গিয়েছিলেন। কপাল মন্দ তারা যেতে পারেন নাই জনতার জালে তারা আটকা পড়ে গেছেন। জনতা তাকে জঙ্গলের মধ্যে আবিষ্কার করলো। জিজ্ঞেস করলেন জনাব আপনার নাম? তিনি বলেন, আমার নাম শামসুদ্দিন চৌধুরী। তারা বলল, আপনি কী কালো মানিক? তিনি বললেন যে আমি সেই বিচারক। তা আপনি এখন কোথায় আছেন? বলে যে সম্ভবত আমি ভারতে আছি। বলে- নাগো সোনা আপনি বাংলাদেশের জালে ধরা পড়ে গেছেন। তখন তিনি কলা পাতার ওপর শুয়ে ছিলেন। তার অপকর্ম ছিল আকাশচুম্বি। এর জন্য সাহসের সাথে বাংলাদেশে থাকার সাহস তিনি করেননি। পালানোর পথ খুঁজছিলেন। সেই পথ ধরতে গিয়ে তিনি আটকা পড়েছেন।
তিনি বলেন, এ রকম অনেকে পালিয়েছেন। তারা পালিয়ে যাওয়ার পরে জনগণ ধারণা করেছিল এরা সাড়ে ১৫ বছর আমাদেরকে বড়ো জ্বালাতন করছে। এখন তারা পালিয়ে গেছে। আমরা এখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারব। কিন্তু না। তারা পালিয়েও দেশকে অস্থির করার জন্য মাঝে মধ্যে উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড করে থাকেন। সে রকমই একটা উসকানি দুই একদিন আগে তারা দিয়েছিলেন। উসকানির কারণে যত পরিবেশ সৃষ্টি হবে তার সমুদয় দায় উসকানিদাতাদেরকেই নিতে হবে।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির মুহাম্মদ আব্দুল জব্বারের সভাপতিত্বে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, ঢাকা অঞ্চল দক্ষিণের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মোবারক হোসাইন প্রমুখ।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।