জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেছেন, সরকার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী জনগণের অভিপ্রায়কে পুরোপুরি ধারণ করতে পারছে না। আজও ফ্যাসিবাদী সরকারের রাষ্ট্রপতি বহাল রয়েছেন, যিনি গণহত্যাকারী হাসিনার হয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। এই কদিন আগেও তিনি ফ্যাসিস্ট হাসিনা সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন, তা গণঅভ্যুত্থানকে সাক্ষাৎ অস্বীকার করার শামিল। এ কারণে তার অধীনে কোনো ধরনের নিয়োগ বৈধ হতে পারে না।
রোববার (২৪ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর বাংলামোটর জাতীয় নাগরিক কমিটি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব ব্যতিরেকেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রতিবাদে জরুরি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
তিনি বলেন, আমরা জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে অবৈধ রাষ্ট্রপতির অধীনে ফ্যাসিস্ট আইনি কাঠামোয় গঠিত নির্বাচন কমিশন প্রত্যাখ্যান করছি এবং অবিলম্বে নির্বাচন কমিশনসহ আইনটি বাতিল করে নতুন আইনের ভিত্তিতে একটি নিরপেক্ষ ও অবিতর্কিত নির্বাচন কমিশন গঠনের জোর দাবি জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, ২০২২ সালে তৎকালীন অবৈধ ও ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের একটি আইন প্রণয়ন করেছিল যা ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার আইন-২০২২’ হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী সরকারের ওই আইন তখন বিএনপিসহ অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলো প্রত্যাখ্যান করেছিল।
‘আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ওই আইনের অধীনে নির্বাচন কমিশন গঠনের সার্চ কমিটি গঠন করে। অথচ জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ওই আইন বাতিল করাটাই যুক্তিযুক্ত হতো।’
মুখপাত্র বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের লক্ষ্যে সরকার একটি কমিটি গঠন করেছে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পর্কে সার্বিক প্রস্তাব সরকারের কাছে পেশা করা তাদের কাজ। এর মধ্যে আছে নির্বাচন কি আসনভিত্তিক হবে নাকি আনুপাতিক হবে সেই ব্যাপার; আছে নির্বাচন কমিশন গঠনের আইন প্রণয়নের পদ্ধতি প্রস্তাবসহ অন্যান্য নানা ব্যাপার।
তিনি বলেন, বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ওই কমিশন কাজ শুরু করেছে দুই মাসও হয় নাই। তাদের প্রথম কাজই হচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের পদ্ধতি ঠিক করা। তারা কোনো প্রস্তাব দেওয়ার আগেই ইতোমধ্যেই সরকার ইসি গঠনের জন্য সার্চ কমিটি গঠন করেছে।
২০২২ সালে আওয়ামী লীগ আমলে প্রণীত বিতর্কিত ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২’ এর অধীনে ইসি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তখন সকল রাজনৈতিক দল ফ্যাসিবাদীদের দ্বারা প্রণীত ওই আইনের বিরোধিতা করেছিল। কারণ ওই আইন অনুযায়ী সরকারের পছন্দের লোককে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব ছিল।
তিনি বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সরকার কমিশনও আইনটি বদলানোর পক্ষে। ইতোমধ্যেই তারা একটি নতুন আইনের খসড়া তৈরি করেছে যা সরকারের কাছে পাঠানোর প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। সার্চ কমিটি গঠন করে ফেলায় এ কাজ আর আগাবে কি না তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। ইসি গঠনে সার্চ কমিটি গঠনের আগে সংস্কার কমিশনের সাথেও কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। তবে সার্চ কমিটি গঠিত হয়ে যাওয়ার পর এই দফায় কমিশন গঠনের জন্য নিয়োগের আইনটির সংস্কার অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে।”
‘নির্বাচন ব্যবস্থা কমিশন সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ মনে করছেন, যেভাবে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেটি ঠিক হয়নি। এটি করার ফলে সংস্কার কমিশনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এতে সংস্কার প্রক্রিয়াও হোঁচট খাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’
সামান্তা শারমিন বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ইসি গঠনের পদ্ধতি প্রস্তাব করার আগেই ইসি গঠনের জন্য সার্চ কমিটি গঠিত হয়ে গেছে। এতে অনেকেই মনে করছেন, নির্বাচন ব্যবস্থার আদৌ আর কোনো সংস্কার হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশের যথেষ্ট অবকাশ আছে। জাতীয় নাগরিক কমিটি মনে করে, সার্চ কমিটি গঠনের আগে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন কি প্রস্তাব পেশ করে তার জন্য অপেক্ষা করা উচিত ছিল। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতেও কোনো কোনো পক্ষ নারাজ।
‘২০২২ সালে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার যে আইনের অধীনে ব্যালট বাক্স ডাকাতি করে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছিল, সেই একই আইনের অধীনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। আজ রবিবার তারা৷ শপথ গ্রহণ করেছেন। আমরা জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে সরকারের এমন সিদ্ধান্তে বিস্মিত হয়েছি এবং তাদের এমন পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা ও কঠোর প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
এ সময় জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, সদস্য আকরাম হোসেন, মশিউর রহমান ও আবু রায়হান খান প্রমুখ।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।