১৩১ বছরের রেকর্ড ভেঙে ফের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষে গণনায় এখন পর্যন্ত ২৭০টি ইলেক্টোরাল কলেজে এগিয়ে রয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস ২১৪টিতে এগিয়ে রয়েছেন। মার্কিন বার্তাসংস্থা এপি প্রকাশিত বেসরকারি ফলাফলে এই তথ্য পাওয়া গেছে। এর মাধ্যমে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয় নিশ্চিত হয়ে গেছে। আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা হতে যদিও কিছুটা সময় নেবে মার্কিন প্রশাসন।
এপির ভোটগণনা অনুযায়ী, কেন্টাকি, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া, ইন্ডিয়ানা, আলাবামা, ফ্লোরিডা, মিজৌরি, ওকলাহোমা ও টেনেসি অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্প জয় পাচ্ছেন বলে পূর্বাভাস পাওয়া গেছে। ইন্ডিয়ানায় ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যা ১১। ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ায় ৪টি। কেন্টাকিতে ৮, আলাবামায় ৯, ফ্লোরিডায় ৩০, মিজৌরিতে ১০, ওকলাহোমায় ৭ ও টেনেসিতে ১১টি ইলেকটোরাল ভোট রয়েছে।
অন্যদিকে, ভারমন্ট, ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়া, মেরিল্যান্ড ও ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যে জয় পাচ্ছেন হ্যারিস। ভারমন্ট ও ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ায় ৩টি করে, মেরিল্যান্ডে ১০ ও ম্যাসাচুসেটসে ১১টি ইলেক্টোরাল ভোট রয়েছে।
সুইং স্টেটগুলোতে কে এগিয়ে
নির্বাচনের জয়–পরাজয় নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখবে দোদুল্যমান ৭টি অঙ্গরাজ্য। সেগুলো কোনও দলের সুনির্দিষ্ট ঘাঁটি নয়। এসব অঙ্গরাজ্য হলো—নর্থ ক্যারোলাইনা, জর্জিয়া, পেনসিলভানিয়া, মিশিগান, উইসকনসিন, অ্যারিজোনা ও নেভাদা। সেখানে হ্যারিস ও ট্রাম্পের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার আভাস রয়েছে।
এখন পর্যন্ত নর্থ ক্যারোলাইনার ৯৮ শতাংশ ভোট গণনা সম্পন্ন হয়েছে। সেখানে ৫১ শতাংশ পেয়ে এগিয়ে আছেন ট্রাম্প। আর কমলা হ্যারিস পেয়েছেন ৪৭ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট। ফলে, এপি’র গণনা অনুযায়ী, নর্থ ক্যারোলাইনার ১৬টি ইলেক্টোরাল ভোট পেতে যাচ্ছেন ট্রাম্প।
এছাড়া জর্জিয়াতে ৯৪ শতাংশ ভোট গণনা শেষে দেখা গেছে, ট্রাম্পের ঝুলিতে গেছে ৫০ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট। আর হ্যারিসের দিকে আছে ৪৮ দশমিক ৪ শতাংশ। ফলে এপি’র গণনা অনুযায়ী, এই রাজ্যের ১৬টি ইলেক্টোরাল ভোটও ট্রাম্প পেতে যাচ্ছেন।
পেনসিলভানিয়াতে ৯৫ শতাংশ ভোট গণনা হয়েছে। সেখানে এখন পর্যন্ত ট্রাম্প পেয়েছেন ৫১ শতাংশ আর হ্যারিস ৪৮ দশমিক ১ শতাংশ ভোট। এখানে ইলেক্টোরাল ভোট আছে ১৯টি।
মিশিগানে ৬০ শতাংশ ভোট গণনা শেষে দেখা গেছে, এখন পর্যন্ত ট্রাম্প পেয়েছেন ৫২ দশমিক ৩ শতাংশ আর হ্যারিস ৪৬ শতাংশ। মিশিগানের ইলেক্টোরাল ভোট ১৫টি।
উইসকনসিনে ৮৬ শতাংশ ভোট গণনা শেষে দেখা গেছে, ট্রাম্প পাচ্ছেন ৫১ দশমিক ৪ শতাংশ আর হ্যারিস ৪৭ দশমিক ১ শতাংশ। এই রাজ্যের ইলেক্টোরাল ভোট ১০টি।
অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে এখন পর্যন্ত ভোট গণনা হয়েছে ৫১ শতাংশ। এরমধ্যে ট্রাম্প ৫০ দশমিক ১ শতাংশ আর হ্যারিস ৪৯ দশমিক ১ শতাংশ ভোট পেয়েছেন বলে এপি’র পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।
নেভাদাতে ইলেক্টোরাল ভোট আছে ৬টি। এপি জানিয়েছে, সেখানে এখন পর্যন্ত ৭৮ শতাংশ ভোট গণনা হয়েছে। তার মধ্যে ট্রাম্প ৫১ দশমিক ৩ শতাংশ ও হ্যারিস ৪৭ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল কখন জানা যাবে
কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে কয়েক সপ্তাহ ধরেই তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে। নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে জাতীয় ও দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যে দুই প্রার্থীর এখন পর্যন্ত ভোটের ব্যবধান খুব সামান্যই। ফলে অনেক স্থানে অল্প ভোটের ব্যবধানেই জয় নির্ধারিত হতে পারে। তখন আবার ভোট পুনর্গণনার প্রয়োজন দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
২০২০ নির্বাচনের পর থেকে প্রতিটি অঙ্গরাজ্য তাদের প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় কী পরিবর্তন এনেছে, তার ভিত্তিতে কিছু রাজ্যের ভোট গণনায় কিছুটা বিলম্ব হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
অন্যদিকে, মিশিগানের মতো কিছু রাজ্যে দ্রুতগতিতে চলছে ভোটগণনা। এ ছাড়া, এবার ডাকযোগে ভোট দেওয়ার সংখ্যাও কমতে পারে।
ফলে, ৪৭ তম প্রেসিডেন্টের নাম যেমন নির্বাচনের রাতেও (অর্থাৎ মঙ্গলবার রাতে) জানা যেতে পারে। আবার ঘোষণা আসতে কয়েকদিন থেকে কয়েক সপ্তাহ সময়ও প্রয়োজন হতে পারে।
উল্লেখ্য, ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হয়ে গ্রোভার ক্লিভল্যান্ডের পর দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট হলেন। যিনি মেয়াদ শেষে নির্বাচনে হেরে গিয়ে চার বছর পর ফের জয়ী হলেন। ক্লিভল্যান্ড পরাজিত হওয়ার পর ফের নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরপর নয় বরং দুটি ভিন্ন মেয়াদে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। সাবেক ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট ক্লিভল্যান্ড প্রথমবারের মতো এমন অনন্য সফলতা দেখিয়েছিলেন ১৮৯৩ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে। ১৩১ বছরের আগেকার সেই অনবদ্য রেকর্ড ভাঙার সুযোগ হাতছানি দিচ্ছে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পকে।
ক্লিভল্যান্ডই একমাত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি পরপর নয় বরং আলাদা দুটি মেয়াদে প্রেসিডেন্ট ছিলেন (১৮৮৫-১৮৮৯ এবং ১৮৯৩-১৮৯৭)। মাঝের চার বছর (১৮৮৯-১৮৯৩) মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিল রিপাবলিকান প্রার্থী বেঞ্জামিন হ্যারিসন।
যুক্তরাষ্ট্রে কোনো ব্যক্তি দুইবারের বেশি প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হতে পারেন না। তাই তৃতীয় মেয়াদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ নেই। দেশটির সংবিধানের ২২তম সংশোধনী অনুযায়ী, প্রেসিডেন্টরা সর্বাধিক দুই মেয়াদ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে পারেন। দেশটির ইতিহাসে পরপর দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের গৌরবময় কৃতিত্ব রয়েছে জর্জ ওয়াশিংটন, থমাস জেফারসন, উড্রো উইলসন, বিল ক্লিনটন, জর্জ ডব্লিউ বুশ ও বারাক ওবামার। তবে পরাজিত প্রেসিডেন্টের ফের নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ড রয়েছে শুধুমাত্র ক্লিভল্যান্ডের।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।