সকল মেনু

মা-বাবার পাশে সমাহিত কবি মোহাম্মদ রফিক

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ আর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে কাব্যিক লড়াইয়ের অগ্রসেনানী কবি মোহাম্মদ রফিক মা-বাবার কবরের পাশে সমাহিত হলেন।

সোমবার (৭ আগস্ট) বেলা ১১টায় বাগেরহাট শহরতলির চিতলী-বৈটপুর এলাকার উদ্দীপন বদর-সামছু বিদ্যানিকেতনে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে মা বাবার কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, এক সপ্তাহ আগে ছোট ছেলে শুদ্ধসত্ত্ব রফিককে নিয়ে বাগেরহাটে গ্রামের বাড়িতে আসেন কবি মোহাম্মদ রফিক। রবিবার সকালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে কবিকে প্রথমে বাগেরহাটে একটি হাসপাতালে নেয়া হয়।

পরে বরিশালে চিকিৎসক ছোট বোন অধ্যাপক সেলিনা পারভীনের ক্লিনিকে নেয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রবিবার রাতে ঢাকা নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। তিনি দুই ছেলে, নাতি-নাতনি সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

কবির শেষ যাত্রায় বৃষ্টির মধ্যেও গ্রামবাসী, কবির ছাত্র, অনুজ, রাজনৈতিক-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা তাকে একনজর দেখার জন্য ভিড় করতে থাকেন। তারা ফুল দিয়ে কবিকে শেষ শ্রদ্ধা জানান।

এর আগে রবিবার রাত পৌনে একটায় কবির মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নেয়া হয়।

কবির জানাজায় অংশ নেন-বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ, কবির বোনের স্বামী শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ আমিনুল হক, কবির বোন গাইনিবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সেলিনা পারভীন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক সবিতা ইয়াসমিন, কবির ভাই প্রকৌশলী মো. শফিক, কবির ছোট ছেলে অধ্যাপক শুদ্ধসত্ত্ব রফিক, কবির বিভিন্ন স্বজন, লেখক ও অনুবাদক মোরশেদুর রহমান, সামছুদ্দিননাহার ট্রাস্টের প্রধান সমন্বয়ক সুব্রত কুমার মুখার্জীসহ স্থানীয় বিশিষ্টজন ও কবি পরিবারের গড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উদ্দীপন বদর-সামছু বিদ্যানিকেতনসহ বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

জানাজা ও দাফন শেষে বাবার জন্য সবার কাছে দোয়া চান কবির ছোট ছেলে অধ্যাপক শুদ্ধসত্ত্ব রফিক। তিনি বলেন, আমার বাবা একটা অন্য বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন। দেশটা সুন্দর হলে বাবা শান্তি পাবেন।

ষাটের দশকে ছাত্র আন্দোলন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন বাংলাদেশে আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে কাব্যিক রসদ জুগিয়েছিলেন কবি মোহাম্মদ রফিক। তিনি ১৯৪৩ সালের ২৩ অক্টোবর বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের চিতলী-বৈটপুরে গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন মোহাম্মদ রফিক। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি পাকিস্তানের সামরিক শাসনবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হন। পাকিস্তানের সামরিক আদালত তাঁকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন।

তবে এমএ পরীক্ষার জন্য তিনি ছাড়া পান। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন রফিক। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কাজ করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর বিভিন্ন কলেজে শিক্ষকতা করার পর তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।

২০০৯ সালের ২৯ জুন তিনি অবসরে যান। অবসরের পর কবি মোহাম্মদ রফিক রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাড়িতে বসবাস করছিলেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top