চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) বাদ জুমা সাভারে অবস্থিত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রধান ফটকের বাম পাশে তাকে সমাহিত করা হয়। এর আগে, সকালে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পিএইচএ মাঠে সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তাকে শ্রদ্ধা জানায় সর্বস্তরের জনসাধারণ।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে জুমার নামাজের পর দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে পিএইচএ মাঠে তার পঞ্চম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে তার অসংখ্য গুণগ্রাহী অংশ নেন।
গত ১১ এপ্রিল রাত ১০টা ৪০ মিনিটে ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন দেশের চিকিৎসা জগতের এই প্রবাদ পুরুষ। জানাজায় অংশ নেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, কবি, লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফরহাদ মাজহার, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন, ঢাকা-২০ আসনের সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদ, হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. আজাদ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য আলতাফুন্নেসা মায়া, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর, ধামরাইয়ের মেয়র গোলাম কবির, ভাসানী অনুসারী পরিষদের রফিকুল ইসলাম বাবলু, সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম, ধামসোনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম, পাথালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পারভেজ দেওয়ানসহ অসংখ্য মানুষ অংশ নেন।
জানাজায় অংশগ্রহণ করে প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল ঔষধ নীতি প্রণয়নে। এজন্য তিনি বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ঘুরে বেড়িয়েছেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে পড়াকালীন তার সঙ্গে আমার কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছিল। তিনি সব সময় সত্যের পক্ষে ছিলেন। কখনো ভয় পেতেন না। তিনি অন্যায়ের কাছে কখনো মাথা নত করেননি। তিনি অসুস্থ থাকাকালীনও মানুষের অধিকার আদায়ে ছিলেন সোচ্চার।
হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. আজাদ বলেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী শুধু একজন ব্যক্তিই নন, তিনি একজন প্রতিষ্ঠান। যে প্রতিষ্ঠান এদেশের অসহায়, দরিদ্র মানুষের জন্যে কাজ করছে। তিনি সবসময় স্পষ্টবাদী ছিলেন। তিনি এদেশের মানুষের জন্যে আজীবন কাজ করে গেছেন। তার আদর্শকে ধারন করে এই প্রতিষ্ঠানের সবাইকে তার অসমাপ্ত কাজগুলো সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে হবে।
জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ছেলে বারিষ চৌধুরী বলেন, তিনি তার জীবন দেশের মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি কখনো চাননি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হোক। তিনি চেয়েছেন এদেশের মানুষ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে কম খরচে চিকিৎসা পায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় ধানমন্ডি গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চতুর্থ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মরদেহ ফ্রিজার ভ্যান অ্যাম্বুলেন্স গাড়িতে সাভার গণস্বাস্থ্যে কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।
এর আগে, সকাল ৮ টায় বারডেম হাসপাতাল থেকে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মরদেহ তাঁর ধানমন্ডির বাসায় নেওয়া হয়। এরপর ৮টা ৪৫ মিনিটে সেখানে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ডা. জাফরুল্লাহর মরদেহ তাঁর স্মৃতিবিজড়িত ঢাকা মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে প্রায় প্রায় ঘন্টা রাখা হয়। চিকিৎসক এবং ছাত্র-ছাত্রীরা মরদেহের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর সর্ব সাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য মরদেহ সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হয়। দুপুর ১টা পর্যন্ত মরদেহে সর্বস্তরের মানুষের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা ও ফুলের শুভেচ্ছা জানানো হয়। পরে বেলা ২টা ৪০ মিনিটে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে মারা যান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। করোনার পর কিডনি সমস্যার পাশাপাশি তার লিভারের সমস্যাও দেখা দেয়।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।