দুবাইয়ে বসে নানা ধরনের প্রতারণার ফাঁদ পেতে অনেককে বোকা বানাতেন পুলিশ হত্যা মামলার আসামি আরাভ খান। অনেকেই তাকে চেনেন রবিউল ইসলাম নামে। দেশের অনেক প্রভাবশালীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার কথা বলে নানা কাজ পাইয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখাতেন তিনি- এমন অভিযোগও পুরনো। তদবিরের নামে কারো কারো কাছ থেকে টাকাও নিয়েছেন।
এমনকি নিজের যেসব অর্থবিত্তের কথা বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা চালিয়েছেন, তার সবকিছুর মালিকও তিনি নন। দুবাইয়ে বসবাসকারী একাধিক বাংলাদেশির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আরাভ জুয়েলার্সের উদ্বোধন ঘিরে রবিউল কয়েক দিন ধরে অদ্ভুত সব কাণ্ড-কীর্তি দুবাইয়ে ঘটিয়েছেন।
নিজের ফেসবুকে ঘোষণা দেন- স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন উপলক্ষে ৬০ কেজি স্বর্ণ নিয়ে বানানো হয়েছে বাজপাখির আদলে লোগো, যা তৈরিতে সময় লাগে আড়াই মাস। এটা তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা।
তবে দুবাইয়ের একাধিক স্বর্ণ ব্যবসায়ী জানান, স্বর্ণের তৈরি যে লোগোর কথা বলা হচ্ছে, তা পুরোপুরি স্বর্ণের তৈরি কিনা- এ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। যেখানে এটি তৈরি করা হয়েছে, সেখানে খোঁজ নিয়েও তাঁরা নিশ্চিত হয়েছেন- এটি পুরোটা স্বর্ণের নয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার জন্য এই কাণ্ড ঘটান আরাভ। ওই লোগো তৈরিতে একজন ভারতীয় ব্যবসায়ীর সহযোগিতা নেন তিনি।
ফেসবুক লাইভে এও জানান, বাজপাখির আদলে লোগোর জন্য গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে আবেদন করবেন তিনি। দুবাইয়ে দীর্ঘদিন সুনামের সঙ্গে স্বর্ণের ব্যবসা করছেন বাংলাদেশি নাগরিক নজরুল ইসলাম। তিনি দুবাইয়ের এনআরআই জুয়েলার্সের মালিকদের একজন।
আরাভের ব্যাপারে জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ একদিন দেখি, আরাভ ৬০ কেজি ওজনের সোনার বাজপাখির লোগো নিয়ে এসেছে। প্রথমে আমরা মনে করেছি, এ তো বিশাল কিছু। ধারণা করেছি, যে ব্যক্তি স্বর্ণের জগতে এত বড় আয়োজন নিয়ে এসেছে, তার তো অনেক কিছু রয়েছে। এরপর শুরু হয় সোনার বাজপাখি নিয়ে মাতামাতি। পরবর্তী সময়ে খোঁজ নিয়ে দেখলাম, এটা পুরোটা স্বর্ণের নয়। যারা তৈরি করেছে, তারা বলছে– পুরোপুরি স্বর্ণ দিয়ে তৈরি নয়। এতে স্বর্ণের প্রলেপ দেয়া হয়। দুবাইয়ের সবাই এখন জানে। আরাভের লক্ষ্য ছিল ভাইরাল হওয়া।
ওই প্রবাসী ব্যবসায়ী আরও বলেন, দুবাইয়ে যারা স্বর্ণের ব্যবসা করছি, তাদের কারও আরাভ সম্পর্কে ধারণা নেই। কিছুদিন ধরে সে স্বর্ণের মার্কেটে যাতায়াত করছে। ব্র্যান্ডের জুতা-গেঞ্জি পোশাক পরে আসে। হঠাৎ এসে স্বর্ণের দোকান ভাড়া নেয়। দুবাইয়ে কেউ তাকে চিনত না। সাকিব আল হাসান তাঁর দোকান নিয়ে ভিডিও দেয়ায় শোরগোল পড়ে গেল।
এছাড়া আরাভ খান তার নিজের ফেসবুকে পেজে ঘোষণা দিয়েছেন- দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা টাওয়ারের ৬৫তলায় ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার নম্বর ৬৫১০। আরো চার-পাঁচটি ফ্ল্যাটের মালিকও তিনি। পাশাপাশি রয়েছে একটি সুইমিংপুল, বাগানসহ বড় ডুপ্লেক্স বাড়িও। যেখানে মাঝেমধ্যে মায়াবী হরিণ জবাই দিয়ে বাংলাদেশিদের দাওয়াত খাওয়াচ্ছেন তিনি। বাগানে চাষ করছেন বাংলাদেশি সবজি। রয়েছে একাধিক দামি গাড়ি।
দুবাইয়ের বাংলাদেশি কমিউনিটির একাধিক বাসিন্দা জানান, যে বাড়ির মালিকানা আরাভ দাবি করছে, সেটি আদৌ তার নয়। বাড়িটির মালিক রাসেল নামের বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।