সকল মেনু

সাকার রায় ফাঁস, ট্রাইব্যুনালের দুই কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ

ICT20131003234416 নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা, ৪ অক্টোবর:  বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলার খসড়া রায় ফাঁস হওয়ার ঘটনায় জব্দ করা কম্পিউটার পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি ট্রাইব্যুনালের সন্দেহভাজন দুই কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে তদন্ত কর্মকর্তারা। এদিকে ট্রাইব্যুনালের অনেকের উপরই শুরু হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রায় ঘোষণার পরদিন বুধবার এই বিষয়ে শাহবাগ থানায় জিডি হয়। ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় ওইদিনই জিডিটি মামলা হিসেবে রেকর্ড হয়েছে। বুধবারই ট্রাইব্যুনালের রায় প্রস্তুত কাজে ব্যবহৃত কম্পিউটারটি আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়। আলোচিত এ মামলাটি তদন্ত করছেন ডিবির পরিদর্শক ফজলুর রহমান। তদন্ত কাজ তত্ত্বাবধান করছেন এডিসি মোখলেসুর রহমান। এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার জব্দ করা হয়েছে ট্রাইব্যুনালের সিসিটিভির ফুটেজ ও পেনড্রাইভও। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সন্দেহভাজন দুই কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছেন তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে তাদের এখনও আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি। তাদের একজনের নাম গৌরাঙ্গ চন্দ্র সাহা ও অন্যজন রাশেদা বেগম। তারা উভয়ই বেঞ্চ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন। ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যানের দপ্তরে এ দু’জনই সাকার রায়টি কম্পোজের দায়িত্বে ছিলেন। বৃহস্পতিবার তাদের কয়েকদফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ট্রাইব্যুনালের একটি সূত্র। ডিবি অফিসে নাকি ট্রাইব্যুনালে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু জানা যায়নি।  ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার একেএম নাসির উদ্দিন মাহমুদ জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের পেনড্রাইভ জব্দ করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের সিসি ক্যামেরার ফুটেজও জব্দ করেছে তদন্ত দল। জব্দ করা চারটি পেনড্রাইভ, কম্পিউটার, ভিডিও ফুটেজ তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চলছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, তদন্ত কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের যে কম্পিউটারে সাকার রায়ের খসড়া কম্পোজ করা হয়, সেই কম্পিউটার থেকে সরাসরি ইন্টারনেটের মাধ্যমে রায়টি কাউকে পাঠানো হয়ে থাকতে পারে। আবার পেনড্রাইভের মাধ্যমেও ওই কম্পিউটার থেকে রায়টি নিয়ে কাউকে দেওয়া হয়ে থাকতে পারে। তবে যেভাবেই পাচার হয়ে থাকুক, তা বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে উদ্ঘাটন করা সম্ভব। জব্দ করা আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।  তবে ট্রাইব্যুনাল থেকেই রায় পাচার হওয়ার বিষয়ে এরই মধ্যে নিশ্চিত হয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। ফাঁস হওয়া রায়ের ফাইল থেকে আরো জানা যায়, এ ফাইলের অথর বা মালিকের `আদি` নাম আলম। আর এ ফাইলের অর্গানাইজেশনের নাম `অ্যারাবিয়ান হর্স`।তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন, যদি আইন মন্ত্রণালয়ের কম্পিউটার থেকে ফাইলটি ফাঁস হয় তাহলে ফাইলে অর্গানাইজেশনের নাম থাকবে আইন মন্ত্রণালয়ের নাম। অন্যদিকে আইন মন্ত্রণালয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, আলম নামে এ মন্ত্রণালয় কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী নেই। `অ্যারাবিয়ান হর্স` নামে দেশে কোনো প্রতিষ্ঠানও নেই বলে জানা গেছে। যে সাইটে সর্বপ্রথম রায়টি ফাঁস হয় সেই justiceconcern.org সাইটটি গত ১৩ মার্চ নিবন্ধন করা হয় লন্ডন থেকে। অর্ণব নামের একজন এটি নিবন্ধন করেন, যাঁর ই-মেইল ঠিকানা [email protected]। এতে লন্ডনের একটি ফোন নম্বর ছিল : +44.7872183426। তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের ভুয়া ঠিকানা দিয়ে যে কেউ পৃথিবীর যেকোনো স্থান থেকে একটি ডোমেইন নিয়ে একটি সাইট বানাতে পারে। আর সেখানে যা খুশি তা-ই আপলোড করতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, ওয়েবসাইটে পাওয়া রায়ের ফাইলটি থেকে যে তথ্য পাওয়া গেছে, তা থেকে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়, রায়ের কপিটি যেখান থেকেই ফাঁস হোক তা আইন মন্ত্রণালয় থেকে হয়নি। এটি ট্রাইব্যুনাল থেকেই হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top