হটনিউজ ডেস্ক:
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ রুদ্ধ করা ছিল সবচেয়ে বড় মানবাধিকার লঙ্ঘন।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সময়ে দেশে ৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। সে প্রবৃদ্ধির রেকর্ড আজ পর্যন্ত ভাঙা যায়নি। তখন যদি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা না হতো বাংলাদেশ হতো মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুরের চাইতেও সমৃদ্ধিশালী দেশ।
কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে সে সুযোগ দেওয়া হয়নি। ’
মন্ত্রী বুধবার রাতে নারায়ণগঞ্জের ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় অবস্থিত আলী আহম্মদ চুনকা সিটি মিলনায়তনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী ও সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ইউনিয়ন (এনইউজে) আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু, বিএফইউজের সভাপতি ওমর ফারুক, বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এনইউজে সভাপতি আব্দুস সালাম। সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আমীর হুসাইন স্মিথ।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আজকে অনেকে মানবাধিকারের কথা বলে। ঢাকার রাজপথে মানববন্ধন করে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বিচারের পথ রুদ্ধ করতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল। আবার সেই অধ্যাদেশ আইনে পরিণত করা হয়েছিল। এটি শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসে নয়, বিশ্বের ইতিহাসে মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি বড় ঘটনা। যে দেশকে এই নেতা স্বাধীনতা উপহার দিয়েছেন, সেই নেতাকে সপরিবারে হত্যার পর তার বিচারের পথটিও আইন করে বন্ধ করা সবচেয়ে বড় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা।
ড. হাছান বলেন, ’৭৫-এ যখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয় তখন মালয়েশিয়া ছিল অনুন্নত দেশ। বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাঁকে সে সুযোগ দেওয়া হয়নি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সময় যেসব অভিযোগ উত্থাপন করা হয়, তার মধ্যে একটি ছিল চালের দাম বৃদ্ধি। ‘৭৪ সালে এক টাকা সেরের চাল দশ টাকা হয়েছিল। সেটির কারণ কী ছিল?
নগদ মূল্য শোধের পরেও ভারত মহাসাগর পর্যন্ত আসা আমেরিকার চালভর্তি জাহাজ ফেরত নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ কেন কিউবার কাছে পাট বিক্রি করল এ অজুহাত দেখিয়ে আমেরিকা চালের জাহাজ ফিরিয়ে নিয়েছিল। এ কারণে তখন দেশে চালের দাম বেড়ে গিয়েছিল।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। তিনি বঙ্গবন্ধুর সব খুনিকে পুনর্বাসন করেছেন। বিদেশে চাকরি দিয়েছেন। ‘৭৯ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনের পর শাহ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিলেন।
১৯৭১ সালে যখন দেশে স্বাধীনতাযুদ্ধ চলছে, তখন শাহ্ আজিজুর রহমান পাকিস্তান প্রতিনিধিদলের নেতা হিসেবে জাতিসংঘে গিয়ে বলেন, পাকিস্তানে কোনো যুদ্ধ হচ্ছে না। কোনো গণহত্যা হচ্ছে না। পূর্ব পাকিস্তানে ভারতের ষড়যন্ত্রকারীরা ঢুকছে। আর দেশপ্রেমিক পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাদের প্রতিরোধ করছে। জিয়াউর রহমান এই শাহ্ আজিজুর রহমানকেই প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, শুধু বঙ্গবন্ধুকেই সেদিন হত্যা করা হয়নি, চার বছরের শিশু সুকান্ত বাবু, দশ বছরের শেখ রাসেল, এগারো বছরের আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের কন্যা বেবী সেরনিয়াবাতকে হত্যা করা হয়েছে। বেগম আরজু মণি ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা। আরজু মণি ও শেখ মনির লাশ যখন পড়ে ছিল তখন পাঁচ বছরের শেখ তাপস ও সাড়ে তিন বছরের শেখ পরশ মা-বাবার লাশ ধরে ধাক্কা দিয়ে বলেছে- মা ওঠো বাবা ওঠো। এভাবে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হয়েছে। আর সেই অপরাধের বিচার রুদ্ধ করা হয়েছিল ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মাধমে। জিয়াউর রহমান এই অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করেছে। এটি সবচেয়ে বড় মানবাধিকার লঙ্ঘন।
হাছান মাহমুদ বলেন, ক্ষমতাকে নিষ্কণ্টক করার জন্য জিয়াউর রহমান শত শত আর্মি অফিসারকে হত্যা করেছে। কারো ক্ষেত্রে নামমাত্র বিচার করে আবার কারো কারো ক্ষেত্রে বিচার না করেই ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে। একই দড়িতে দুইজনকেও ফাঁসি দিয়েছে। জিয়াউর রহমানের ক্যাঙ্গারু কোর্টে এক দিনে বিচার হতো বা দুই দিনের মধ্যে বিচার শেষ। ফাঁসি দেওয়ার তিন মাস পর বিচার শেষ হয়েছে, এমন ঘটনাও ঘটেছে। যেভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে, তার নজির কোথাও নেই।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।