সকল মেনু

অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নেয়ার পথে ফের গুলিতে ৫ জন নিহত

চট্টগ্রাম , রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: পার্বত্যজেলা রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার সীমানা সংলগ্ন এলাকা কাঙ্গালছড়িতে পাহাড়ী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে এবার প্রাণ গেল আরও ৫ জনের। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন ৯ জন। গত বৃহস্পতিবার নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি শক্তিমান চাকমাকে গুলি করে হত্যার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্রাশফায়ারে এই নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটল। পর পর দু’দিনের এ সহিংস ঘটনায় এলাকায় চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিয়মিত সেনা টহলও জোরদার করা হয়েছে।

পুলিশ, জেলা, উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত শক্তিমান চাকমার অন্ত্যোষ্টিক্রিয়ায় অংশ নিতে একটি জীপযোগে খাগড়াছড়ি থেকে নানিয়ারচর যাচ্ছিলেন ১৫ সদস্যের একটি দল। দুপুর তখন সোয়া বারোটা। জেএসএস নেতাকর্মীদের বহনকারী জীপগাড়িটি কাঙ্গালছড়ি এলাকার বেতছড়িতে পৌঁছানোর পর আগে থেকে ওঁৎপেতে থাকা ভারি অস্ত্রে সজ্জিত সন্ত্রাসীরা জীপ লক্ষ্য করে ব্রাশফায়ার চালায়। ব্রাশফায়ারে জীপ চালকসহ ৩ জন প্রাণ হারান। আর দুজন প্রাণ হারান হাসপাতালে। আচমকা ব্রাশফাযারে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর জীপচালক নিয়ন্ত্রণ হারালে জীপটি উল্টে খাদে পড়ে যায়। এতে আরও ৯ জন গুলিবিদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি আহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- ইউপিডিএফের (ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট-গণতান্ত্রিক) আহ্বায়ক তপন জ্যোতি চাকমা, জেএসএসের সহযোগী সংগঠন যুব সমিতি (এমএন লারমা মহালছড়ি শাখার) সভাপতি সুজন চাকমা, সদস্য তনয় চাকমা, জীপচালক মোঃ সজিব। এদের প্রথমে তিনজন ঘটনাস্থলে এবং দুজন হাসপাতালে নেয়ার পর প্রাণ হারান। আহতদের খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি এবং আশঙ্কাজনক ৪ জনকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত ৯ জনের নাম জানা গেছে। এরা হচ্ছেন, জেএসএসের (সংস্কার) বিভুরঞ্জন চাকমা, দিগন্ত চাকমা, কান্তিরঞ্জন চাকমা, প্রিতি কুমার, জীবন্ত চাকমা, অর্চিন চাকমা, অর্জুন চাকমা, জেলজি কুমার চাকমা, মিহির চাকমা ওরফে কদম চান।

পর পর দু’দিন হত্যাকান্ডের এ ঘটনায় ইউপিডিএফের দুগ্রুপ একে অপরকে দায়ী করেছে। কিন্তু জেএসএসের পক্ষ থেকে কোন বক্তব্য দেয়া হয়নি। নিহত ও আহতরা নানিয়ারচর উপজেলা নিহত চেয়ারম্যান সমর্থিত গ্রুপের প্রভাবশালী নেতা। ব্রাশফায়ারে হত্যাকা-ের খবর পেয়ে রাঙ্গামাটির পুলিশ সুপার মোঃ আলমগীর, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম এবং প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পাশাপাশি নিয়মিত টহলরত সেনা সদস্যরাও নিহত ও আহতদের উদ্ধারে যুক্ত হন। এ ঘটনার পর রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে বিকেলের মধ্যে পুনরায় চলাচল শুরু হয়। উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার মুখোশধারী পাহাড়ী দুর্বৃত্তরা নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমাকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। ওইদিন তিনি নিজ বাসভবন থেকে বেরিয়ে উপজেলা কার্যালয়ে প্রবেশের গেটে পৌঁছার পর সন্ত্রাসীরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি করে।

নানিয়ারচরের এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইউপিডিএফের দু’গ্রুপ এবং জেএসএসের দুগ্রুপের সর্বত্র উত্তেজনার পাশাপাশি আতঙ্কও বিরাজ করছে। এছাড়া সাধারণ জনগণও রয়েছে চরম আতঙ্কে। ইতোপূর্বেও বিভিন্ন দফায় ইউপিডিএফ ও জেএসএসের কর্মীদের মধ্যে অসংখ্য সহিংস ঘটনা ঘটে। প্রাণ হারিয়েছে অনেকে। দু’গ্রুপের এ চাঁদাবাজিসহ সহিংসতার কারণে পাহাড়ের নিরীহ জনগণ সার্বক্ষণিকভাবে অজানা শঙ্কায় দিনযাপন করে আসছে। নানিয়ারচরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৬ জনের প্রাণহানির ঘটনায় প্রশাসন তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করেছে বলে নিশ্চিত করেছে। রাঙ্গামাটি পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দুই ঘটনায় পৃথক পৃথকভাবে তদন্ত শুরু হয়েছে। এদিকে, নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমার শেষকৃত্য তার গ্রামের বাড়ি বুড়িঘাটের কুকুরমারা এলাকায় পুলিশী প্রহরায় পারিবারিক শ্মশানে সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে শক্তিমান চাকমার লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। এদিকে, শুক্রবার নতুন ঘটনায় ব্রাশফায়ারে নিহত ৫ জনের লাশ মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে বলে পুলিশ জানায়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top