সকল মেনু

সেবাবান্ধবে পরিনিত হয়েছে চিরিরবন্দর ভূমি অফিস

মোহাম্মাদ মানিক হোসেন চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: একসময় চিরিরবন্দর ভূমি অফিস ছিল সেবাপ্রার্থীদের কাছে আতঙ্কের আরেক নাম। হয়রানি ও ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ ছিল বিস্তার। বর্তমানে সেখানে ঘুষ-দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশে সেবা পাচ্ছে ভূমি মালিকরা। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে ভালো আচরণও। ভূমিসংক্রান্ত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে। বসার চেয়ার কিংবা বিশুদ্ধ পানীয়র ব্যবস্থাও রয়েছে চিরিরবন্দর উপজেলার প্রতিটি তহশিল অফিসে। ভুমি অফিসে সেবাপ্রার্থীদের নিরাপত্তা এবং কর্মচারী-উমেদারদের অনিয়ম-জালিয়াতি ঠেকাতে লাগানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। সঠিক সময়ে কর্মচারীদের উপস্থিতি এবং বিকেল ৫টা পর্যন্ত অফিস কার্যক্রম নিশ্চিত করার জন্য সেখানে লাগানো হয়েছে বায়োমেট্রিক টাইম অ্যাটেনডেন্স মেশিন।

সরজমিনে চিরিরবন্দর এসিল্যান্ড অফিস ঘুরে দেখা যায় সত্যিই পাল্টে গেছে সেখানকার চিত্র। জনগণকে সেবা দেওয়ার জন্য সেখানে পরিবেশের অনেক উন্নতি ঘটেছে। নামজারি কিংবা মিস কেস করতে গিয়ে কিছুদিন আগেও সেবা প্রার্থীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। এখন এসিল্যান্ড অফিসেই বসার জন্য ওয়েটিংরুম ও প্রতিটি রুমে চেয়ারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। চিরিরবন্দর সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো: মাশফাকুর রহমান যোগদানের পর তার নিজ উদ্যোগে প্রতিটি এসিল্যান্ড অফিসসহ তহশিল অফিসে এ পরিবর্তন আনা হয়েছে পরিকল্পিতভাবে। তাছাড়া তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগেও বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছেন। এসিল্যান্ড অফিসে গিয়ে দেখা যায়, ব্রিটিশ আমলের রুমওয়াল ও বান্ডরি ওয়াল সংস্কারের মাধ্যমে চকচকে করা হয়েছে। সেবাপ্রার্থীদের বসার জন্য রাখা হয়েছে চেয়ার। অফিসের সামনে একচিলতে খালি জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে সেবাকুঞ্জ। সেখানে বেশ কিছু সেবাপ্রার্থী বসে আছে। নশরতপুর থেকে সেবা নিতে আসা মামনুর রশিদ বলেন, গতবছর নামজারির আবেদন জমা দিতে এসে কত যে হয়রানি হয়েছি! এখন সাজানো-গোছানো অফিসে সহজেই সেবা পাওয়া যাচ্ছে। এসিল্যান্ড মো: মাশফাকুর রহমান নিজে বসে সেবা নিশ্চিত করছেন। এমনকি তিনি অফিস সময় অতিক্রম করলেও সেবা দিয়ে থাকেন। শুধু তাই নয় বন্ধের দিনেও ভুমি গ্রাহীতাদের সেবা দিয়েছেন এমনো লোক মুখে শুনা গেছে।

তিনি অপেক্ষমাণ সেবাপ্রার্থীদের কাছে এসে জানতে চান, সেবা নিতে তাদের কোনো অসুবিধা হচ্ছে কি না। তাঁর এ আচরণে আমরা সত্যি অভিভূত। মান্ধাতা আমলের ভূমিসেবা বাদ দিয়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে কাজ করতে নির্দেশনা দিয়ে থাকেন এসিল্যান্ড ।তিনি বলেন, ‘সেবাপ্রার্থীদের নয়, ভূমি প্রশাসনকে মানুষের দরজায় গিয়ে সেবা দিতে হবে। কাঠের ভাঙা চেয়ার-টেবিল, নড়বড়ে দরজা-জানালা আর ছেঁড়াফাড়া বই, রেজিস্ট্রার ও খাতাপত্র পাল্টে সব কিছু নতুন ও আধুনিকভাবে গড়ে তুলছেন তিনি। শধু তাই নয় সরকারি কিংবা অন্যের জমি বিক্রি করে দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। এ ধরনের জালিয়াতচক্রের খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত হচ্ছে অনেকেই। জমি কিনে প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এ ধরনের ঘটনা রোধ করার লক্ষ্যে চিরিরবন্দর এসিল্যান্ড সেখানে নিজস্ব সফটওয়্যার দিয়ে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই জমির মালিকানা নিশ্চিত করা হচ্ছে। কোনো জমিতে সরকারি স্বার্থ জড়িত আছে কি না, সেটাও জানা যাচ্ছে। জমি কেনার আগে যে কেউ বিনা পয়সায় এসিল্যান্ড অফিসে এ ধরনের সেবা পাচ্ছে। কথা হয় ভুমি অফিসে আসা সেবাপ্রার্থী মকবুল হোসেনের সাথে তিনি জানান, এক নিকটাত্মীয়র জমির সমস্যা নিয়ে এসেছেন। তাঁর কথা শুনে এসিল্যান্ড তাৎক্ষণিকভাবে সহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে ফোন করে সমস্যার সমাধান করে দিলেন। এতে খুশি হয়ে মকবুল হোসেন বলেন, ‘একসময় আমরাও মাঠপর্যায়ে চাকরি করেছি।

Exif_JPEG_420

সবচেয়ে জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি হয়রানিমূলক কাজ হলো জমিজমার কাজ। কিন্তু বর্তমানে চিরিরবন্দর ভূমি প্রশাসন যে এতটা এগিয়ে গেছে, তা এখানে না এলে বুঝতাম না। এ দিকে ভুমি অফিসে আসা একাধিক সেবাপ্রার্থী জানায়, বর্তমান চিরিরবন্দর ভূমি অফিস আগের চেয়ে অনেক বেশি সেবাবান্ধব হয়ে উঠেছে। নামজারি ফাইল জমা দেওয়া কিংবা মিস কেস দায়ের করার পর আর সেখানে নম্বর এবং পরবর্তী শুনানির জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। ফাইল জমা হওয়ার পরপরই সেবাপ্রার্থীর মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে নামজারি-মিস কেসের নম্বর এবং পরবর্তী শুনানির তারিখ জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনবোধে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তথ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে। ভূমি অফিসে সেবা নিতে আসা মুন্না হোসেন জানান, বাবা মারা গেছে জমির খারিজ করতে আসছি। বর্তমানে চিরিরবন্দর ভূমি অফিসে এ ধরনের সেবা নজিরবিহীন। সেবার পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে যে আপ্যায়ন পাচ্ছি, মনে হচ্ছে মামার বাড়ি বেড়াতে এসেছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top